ঢাকা: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ঘোষিত ঢাকা অভিমুখে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও তেমন কোনো সাংগঠনিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়েই কাজটি করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। আর সে অনুযায়ী বিশেষ নির্দেশণাও দেয়া হয়েছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের কারণে নেতাকর্মীরা ব্যস্ত। তাই সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেয়ার সময় নেই। তাছাড়া ২৬ ডিসেম্বর থেকে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। তাই অভিযাত্রা ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেই উপযুক্ত মনে করছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
২৬ ডিসেম্বর থেকে সারা দেশে ৬৪টি জেলায় সাংগঠনিক সফর শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। ১৭ টিমে বিভিক্ত হয়ে এ সফর শুরু করা হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সফর চলবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য থেকে উপদেষ্ঠা পরিষদের সদস্য সাংগঠনিক সম্পাদক সবাই এ সফর নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন।
সূত্রে জানান গেছে, ২৯ ডিসেম্বরের ঢাকা অভিমুখে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা গণতন্ত্র অভিযাত্রার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে ১৮ দলীয় জোট। এরইমধ্যে সারাদেশ থেকে দলের নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়েই বিরোধী দলের কর্মসূচি প্রতিহত করার কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা অভিমুখে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তার ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের নেতারা কৌশল নির্ধারণে গণভবনে জরুরি বৈঠকে বসেন। রাত ৮টা থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা চলে ওই বৈঠক।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিরোধী দলের কর্মসূচি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়েই প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি রাজধানীর আশপাশের ৭ জেলায় দলীয় নেতাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী এবং টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের বিএনপির কর্মসূচি সম্পর্কে সতর্ক অবস্থানে থেকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ২৮ ডিসেম্বর থেকে সরকার কঠোর অবস্থান নেবে এবং নিজেদের স্বার্থে ১৮ দলকে কোনো প্রকার ছাড় দেবে না।
এদিকে রাজধানীর ১০২টি ওয়ার্ড ও ১৬টি ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে বলা হয়েছে নেতা-কর্মীদের নিয়ে পাহারা দিতে। এলাকায় অপরিচিত কাউকে দেখলেও আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খবর দিতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্র থেকে রাজধানীর সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদকে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বাংলামেইলকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিরোধী দলের কর্মসূচির সময় দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করলে তিনি বলেন, ‘এটা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ। তারপরও ১৮ দল যদি নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়, জনগণকে সাথে নিয়ে তা প্রতিহত করার জন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুত থাকবে।’
বুধবার মানিকগঞ্জ-সিঙ্গাইর সড়কের বিজের উন্নয়ন কাজ পরিদর্শনের সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিরোধী দল হরতাল-অবরোধ আর ‘ঢাকা অভিযাত্রা’ যে নামেই ডাকুক না কেন তাদের ভাঙা হাটের আন্দোলনের আর জমবে না। তাদের আন্দোলন ভুলের চোরাবালিতে আটকা পড়েছে। কারণ তাদের আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা নেই।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আগামী ২৯ ডিসেম্বর বিএনপির ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসির’ কর্মসূচি অহিংস হলে আওয়ামী লীগ সরকার বাধা দেবে না। তবে কর্মসূচিতে কোনো সহিংসতা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বাংলামেইলকে বলেন, ‘বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে তারা যদি কর্মসূচির নামে কোনো নাশকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তা কঠোর হস্তে দমন করবে। আর এ কাজে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা সহযোগিতা করবো।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাছিম বলেছিলেন, ‘আমি বাস, ট্রেনসহ পরিবহন মালিকদের অনুরোধ জানাই, তারা যেন বিএনপি-জামায়াতের লোকজন বহন না করেন।’
নির্বাচনের আগে খালেদার ‘অভিযাত্রা’ করতে দেওয়া হবে না বলে তিনি হঁমিয়ারি উচ্চারণ করেন। একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে আপনারা কোনো কর্মসূচি করতে পারবেন না। আপনারা নির্বাচনের পর অভিযাত্রা করলে আমরা সহযোগিতা করব।’
বিএনপির সমাবেশের অনুমতি দেয়া নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকার পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ বুধবার বড়দিন উপলক্ষে ইস্কাটনে সাধু থোমার গির্জা ঘুরে দেখার সময় বলেছিলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এখন মন্তব্য করলে প্রি-ম্যাচিউরড হবে।’
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্রে জানা গেছে, শেষ মুহূর্তে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হতে পারে। তবে সঙ্গে অনেকগুলো শর্ত জুড়ে দেয়া হবে।
এদিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা সারা দেশের পর এবার ঢাকায় নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন। তিনি সাধারণ মানুষকে ঢাকায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন। যতই পরিকল্পনা করুন, কোনো লাভ হবে না। সাধারণ মানুষ আপনার আহ্বানে সাড়া দেবে না। আপনার সব পরিকল্পনাই ভেস্তে যাবে। যে কোনো মূল্যেই হোক আপনার এই পরিকল্পনা আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ব্যর্থ করে দেবো।’
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১২ মার্চ ‘ঢাকা চলো’ নামে এ ধরনের একটি কর্মসূচি পালন করেছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। ওই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সরকার ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের সড়ক ও নৌ-যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল ঢাকার আবাসিক হোটেলগুলো। শেষ মুহূর্তে ১৩টি শর্তে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল।