বাংলাদেশে অতি সম্প্রতি বিদেশী দুই নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। আর হত্যাকান্ডের পরপরই ইসলামিক স্টেট (আইএস) দ্রুততার সঙ্গে এর দায়িত্ব স্বীকার করেছে, যদিও সরকারি বিভিন্ন এজেন্সি ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা দৃঢ়তার সঙ্গে বাংলাদেশে কোন আইএস নেই বলে মনে করছেন। এদিকে এসব নিয়ে উচ্চ মাত্রায় সংশয় দেখা দিয়েছে। এতে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে বিদেশী নাগরিকদের হত্যার নেপথ্যে কারা? ভারতীয় অনলাইন দ্য হিন্দু এমন প্রশ্ন করে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সম্পাদিত রিপোর্ট অনুসারে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে যে বিচার চলছে তাতে ক্ষুব্ধ স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। তারাই বিদেশী নাগরিকদের হত্যা করছে যাতে সরকারের মুখে কালিমা লাগে। খবর প্রকাশিত হয়েছে, গোয়েন্দারা রোববার ওই রিপোর্ট জমা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
বলা হয়েছে, ইতালির নাগরিক সিজার তাভেলা ও জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যাকান্ড ‘কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ নয়। গত ২৮শে সেপ্টেম্বর ঢাকায় কূটনৈতিক এলাকায় দুর্বৃত্তরা হত্যা করে ইতালির নাগরিক সিজার তাভেলাকে। এর কয়েক দিন পরেই ৩রা অক্টোবর রংপুরে হত্যা করা হয় জাপানের নাগরিক কুনিও হোশিকে। যদিও এ দুটি হত্যাকান্ডের দায় ইসলামিক স্টেট স্বীকার করেছে বলে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, কিন্তু তা ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেছেন, এসব হত্যার পিছনে আইএস নেই। স্বার্থবাদী একটি গ্রুপ দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।
সরকারের বিভিন্ন নেতা, বেশ কিছু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, যুদ্ধাপরাধের দায়ে দুজন নেতার ফাঁসি যখন অত্যাসন্ন তখনই এই দুটি হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে। আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, আমাদের হাতে প্রমাণ আছে। তদন্তকারীরা তদন্ত করছেন। অপরাধীকে শাস্তি পেতেই হবে।
বেশ কিছু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বাংলাদেশে আইএস সক্রিয় এমন কোন প্রমাণ নেই। তবে তারা স্বীকার করেন আইএসের প্রতি আনুগত্য আছে এমন কিছু ব্যক্তিকে আইন প্রয়োগকারীরা সম্প্রতি আটক করেছে। তারা আইএসে সদস্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছিল। তারা বলেন, প্রকৃত খুনি তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ভুল তথ্য দিচ্ছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা আইএসের দাবিকে আমলে নিয়েছে এবং বাংলাদেশে বিদেশী নাগরিকদের হত্যার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।
ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট বলেন, বিদেশী দু’ নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকারকারী আইএসের দাবি কতটা যথার্থ তা যাচাই করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জোরালোভাবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। চট্টগ্রাম যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ যৌথ নৌ মহড়ায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস ও জঙ্গি বিরোধী কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ শক্তিশালী অংশীদার মনে করে। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা অব্যাহত থাকবে। ওদিকে তাভেলা ও হোশি হত্যাকাণ্ডে বিদেশী নাগরিক ও বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে ভীষণ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বলে প্রতিবদেনে বলা হয়েছে।