ব্রিটিশদের হাত ধরেই কেক, বানের মতো বেকারি জাতীয় খাবারের প্রচলন হয় বঙ্গ-মুলুকে। এবার বাঙালির এক কন্যা কেক তৈরি করে জয় করলেন খোদ বিলাত।
‘গ্রেট ব্রিটিশ বেক অফ’ প্রতিযোগিতায় সেরা হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক নাদিয়া হুসেইন। ৭ অক্টোবর বুধবার চূড়ান্ত পর্বে তিনি বিয়ের অনুষ্ঠানের বড় একটি কেক তৈরি করেন।এটিকে তিনি নিজের বিয়ের গহনা দিয়ে সাজান।
রান্না বিষয়ক এই অনুষ্ঠান ব্রিটেনের জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মধ্যে একটি। ফাইনাল পর্বটি দেখতে এক কোটি ৩৪ লাখ দর্শক সেদিন টেলিভিশনের সামনে ছিলেন। এই পর্বটি এখন পর্যন্ত এ বছরের সবচেয়ে বেশি দেখা টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মধ্যে একটি।
চূড়ান্ত পর্বে নাদিয়া পেছনে ফেলেন ইয়ান কামিং ও তমাল রায়কে। ত্রিশ বছর বয়সী নাদিয়া লুটনে জন্ম নেন। তার এখনকার বসতি লিডস। তিন সন্তানের মা নাদিয়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন।
নাদিয়া বলেন “শোস্টপার হিসেবে উৎসবের কেক বানাতে বলা হয়েছিল। যেহেতু আমার বিয়ের সময় কোন কেক ছিল না তাই আমি চেয়েছিলাম একটি ভাল, মজার কেক তৈরি করতে।” এই অনুষ্ঠানের ইতিহাসের নাদিয়া হলেন ৬ষ্ঠ বারের বিজয়ী।
‘জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন’
কেক বানিয়ে এতো বড় পুরস্কার প্রাপ্তিকে জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মন্তব্য করেছেন তিন সন্তানের জননী নাদিয়া হুসেইন।
‘গ্রেট ব্রিটিশ বেক অফ’ প্রতিযোগিতায় শিরোপা জয়ের পর তিনি বলেছেন, ট্রফিটি তিনি পেয়েছিলেন কয়েক মাস আগেই, আর এ কয়েক মাস ধরে তাকে চরম গোপনীয়তা বজায় রাখতে হয়েছে।
বুধবার রাতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার পর বিবিসি ব্রেকফাস্ট শো’কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি জানান জুনের শেষ দিকেই ট্রফিটি দেয়া হয় তাকে।
“এরপর কাগজে মুড়ে, সেটি প্রথমে একটি বাক্সে রাখি। তারপর সে বাক্সটি আরেকটি বড় বাক্সে এবং সেটিও আরেকটু বড় বাক্সে ঢুকিয়ে রাখি। আর এই বড় বাক্সটি সুটকেসে ভরে শোবার বিছানা অর্থাৎ খাটের নিচে রেখে দিয়েছিলাম।”
বুধবার রাতে যখন টিভিতে দেখানো হচ্ছিলো প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বটি, সেখানে নাদিয়াকে শিরোপা জয়ী ঘোষণা করা হয়। তিনি এ পর্বটি দেখেছেন বাবা-মা, ভাই-বোন ও বাচ্চাদের সাথেই।
যদিও নাদিয়া বলছেন বাচ্চাদের তিনি আগেই শিখিয়েছিলেন যে কিভাবে বিষয়টি গোপন রাখতে হবে। তবে তার বাবা-মা কিংবা ভাই বোন চূড়ান্ত ঘোষণার আগে জানতে পেরেছিলেন কি-না তা পরিস্কার নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে নাদিয়া বলেন তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে খাওয়ার পরে মিষ্টান্ন খাওয়ার তেমন একটা চল নেই।
কিন্তু বড় হয়ে যখন স্কুলে গেলেন তখন দেখলেন যে খাবারের পরে মিষ্টি খাওয়া হচ্ছে। তখনই তার ভাবনায় আসলো মিষ্টান্ন বা আরো সহজ করে বললে কেক বানানোর বিষয়টি।
পরে হোম ইকনমিক্সের শিক্ষক নাদিয়ার কেক সম্পর্কে বলেছিলেন, “তুমি তো বেশ ভালো কেক বানাও।”
বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার পর পাওয়া ফ্রি সময়টিই মূলত নাদিয়া কাজে লাগাতেন কেক বানানোর জন্যে।
পরে এক পর্যায়ে এই রিয়েলিটি শো-তে যাওয়ার বিষয়টি মাথায় আসে তার।
তথ্য: বিবিসি; প্রচ্ছদের ছবি: দেশিব্লিৎজ ডটকম অন্য-ছবি: টেলিগ্রাফ ডটকো ডটইউকে, মিরর ডটকো ডটইউকে, প্রিমা ডটকো ডটইউকে