‘কাট-আউট’ পদ্ধতিতে এগুচ্ছে জেএমবি

0

JMBচট্টগ্রাম : প্রতিষ্ঠার পর থেকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে বারবার ধরাশায়ী হলেও নতুন নেতৃত্বে নতুন কৌশলে মহাপরিকল্পনায় এগিয়ে চলছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জমায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। কৌশল পাল্টিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ, তহবিল সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম এই তিনটি কাজই সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি।

তবে আগে দলগতভাবে দাওয়াতি কার্যক্রম বা প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ড চালালেও এখন কৌশলী হয়েছে তারা। এখন ওয়ান টু ওয়ান পদ্ধতিতে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। জেএমবি সদস্যরা এই পদ্ধতির নাম দিয়েছে ‘কাট-আউট’ পদ্ধতি। আর এই পদ্ধতির সুফল ভোগ করতে তারা প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধাকে কাজে লাগাচ্ছে। এই পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে তারা একটি মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।

ইতোমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকজন জেএমবি সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের সংগঠিত হওয়ার বিষয়টি ফের সামনে চলে এসেছে। তবে জেএমবির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে সংগঠিত কোনো কর্মকাণ্ড মানতে নারাজ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তাদের দাবি, জেএমবি এখন আর সংগঠিত নেই। বিছিন্নভাবে কেউ কেউ জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যা আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ধরা পড়ছে।

গোয়েন্দা সূত্র আরো জানায়, স্বল্প, মধ্য ও দৈর্ঘ্য মেয়াদী পরিকল্পনায় কার্যক্রম অব্যাহত রাখার মাধ্যমে এই জঙ্গি সংগঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। ইতোমধ্যে স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে সংগঠনটি। পরিকল্পনা মতে, ছদ্মবেশে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়েছে যাচ্ছে জেএমবি। ধারণা করা হচ্ছে, ছদ্মবেশে কমপক্ষে চারশতাধিক জেএমবি সদস্য চট্টগ্রামে তৎপর রয়েছে। তবে গত ৫ অক্টোবর গ্রেপ্তার পাঁচ জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের সাথে সম্পৃক্ত শুধুমাত্র ১২ জনের নাম জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা।

আইন-শৃংখলা বাহিনীরে চোখকে ফাঁকি দিতে জেএমবি সদস্যরা দাওয়াতি কার্যক্রম ও সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষায় তারা এখন ব্যবহার করছে প্রযুক্তির সর্বশেষ অ্যাপস ভার্সনগুলো। প্রথমদিকে ফেসবুক-মোবাইল ব্যবহার করলেও তারা এখন হোয়াটস অ্যাপ, ট্যাংগো, ভাইবার, ইমোর মত অ্যাপসগুলো ব্যবহার করছে। গত কয়েক বছর ধরে এসব অ্যাপসের ব্যবহার বেড়ে গেলে আইন-শৃংখলা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে জেএমবি সদস্যরা এখন ব্যবহার করছে কাকাও ও টেক্সটপ্লাস এর মত সর্বশেষ অ্যাপসের ভার্সনগুলো। যাতে করে যোগাযোগের কোনো প্রমাণ সংরক্ষিত না থাকে সেজন্য এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করছে জঙ্গিরা।

এছাড়া সংগঠনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য যেসব আর্থিক খরচ দেয়া হয় সেগুলোও কোনো ব্যংকিং চ্যানেলে লেনদেন করা হয়না। সবগুলো লেনদেনই নগদে হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জেএমবির ‘কাট-আউট’ পদ্ধতির কারণে ধরা পড়া জঙ্গিদের কাছ তাদের সংগঠনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিষয়ে কোনো তথ্য বের করতে পারছেন না গোয়েন্দারা। এমনকি  জেএমবির একেক নেতা একেক জনকে একেক নামে চেনে বলে গোয়েন্দাদের তথ্য দিচ্ছে। ফলে পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি পড়ে তাদের শিকড়ের সন্ধানে যেতে ব্যর্থ হচ্ছে গোয়েন্দারা। আবার অনেক সময় প্রশিক্ষণ থেকে প্রাপ্ত কৌশল হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দাদেরও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে গ্রেপ্তার জেএমবি সদস্যরা।

গত ৫ অক্টোবর নগরীর কদমতলী, অক্সিজেন, কর্ণফুলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে জেএমবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামরিক শাখার প্রধান তৌফিকুল ইসলাম ওরফে জাবেদসহ পাঁচ জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর জাবেদের জঙ্গি আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ গুলি, হ্যান্ড গ্রেনেড, বিস্ফোরক, জিহাদি বই ও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর একীভূত বাংলাদেশের সম্ভাব্য একটি মানচিত্র উদ্ধার করা হয়। পরে ৬ আগস্ট জাবেদকে নিয়ে কুইয়াশের অনন্যা আবাসিক এলাকায় ডিবি গ্রেনেড উদ্ধার অভিযানে গেলে সেখানে ‘গ্রেনেড বিস্ফোরণে’ নিহত হন জেএমবির সামরিক কমান্ডার জাবেদ। তবে গ্রেপ্তার অন্য চারজনকে কর্ণফুলী থানায় দায়ের করা তিন মামলায় আদালতে হাজির করে ১৫ দিনের রিমান্ডে নিলে তারা সেখানে জেএমবির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য দিচ্ছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারের পর বিস্ফোরণে নিহত জাবেদ নিজেকে আইএস চট্টগ্রামের প্রধান দাবি করলেও তদন্ত করতে গিয়ে এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে সে যে জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামরিক শাখার প্রধান ছিল সেটি গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়া তাদের কাছ থেকে চট্টগ্রামে সক্রিয় ১২ জেএমবি সদস্যের নাম পেয়েছে।

এরমধ্যে নিহত জাবেদসহ গ্রেপ্তার পাঁচজন ছাড়াও সদরঘাটে ছিনতাই করতে গিয়ে নিহত রফিক ও রবিউলের নাম পাওয়া গেছে। এছাড়া জেএমবির অর্থদাতা ‘বড়ভাই’ বগুড়ার ডা. নজরুল, চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান ফারদিন, সদস্য পিয়াস, হাবীব, কালাইয়া মটুর নাম জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা। তদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ফারদিন ও ডা. নজরুলসহ অন্য জঙ্গিদের ধরতে চলতি সপ্তাহে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের একটি দল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে অভিযানে গেলেও তাদের নাগাল পায়নি।

 এরজন্য গোয়েন্দা পুলিশ দায়ী করছে, জেএমবির ‘কাট আউট’ পদ্ধতিকে। যার কারণে গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার জেএমবি সদস্যদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য আদায় করতে পারছেন না। ফলে তাদের শেকড়েও পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছেনা গোয়েন্দাদের। এছাড়া ভিন্ন ভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশ নেয়া এসব জেএমবি সদস্যরা একে অপরকে ঠিক মত চিনেও না। একেক জন একেক জনকে ভিন্ন ভিন্ন নামে চেনার কারণেও গ্রেপ্তার চার জেএমবি সদস্যদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য পাচ্ছেনা গোয়েন্দারা।

সূত্র আরো  জানায়, জেএমবি প্রতিষ্ঠার পর ফেসবুক ও মসজিদ-মাদ্রাসায় দাওয়াতি কার্যক্রমের নামে প্রকাশ্যে মানুষকে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তখন প্ররোচনা দিলেও এখন সেই পথে না গিয়ে ছদ্মবেশে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে জেএমবি সদস্যরা। এরপর স্বাভাবিক জীবন যাপনের আড়ালে দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তারা। কেউ গার্মেন্ট শ্রমিক, কেউ হকার, কেউ রিকশা চালক আবার কেউ ছাত্রের আড়ালে লজিং মাস্টারের কাজ করছে।

দায়াতিকাজে তারা ওয়ান টু ওয়ান পদ্ধতি অনুসরণ করছে। জেএমবির টার্গেট করা ব্যক্তিকে ইসলামের বিষয়ে বিশদ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে ভূলভাবে বুঝিয়ে নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করা হয়। এজন্য সামরিক ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পাশাপাশি তাদের একটি দাওয়াতি বিভাগও রয়েছে। চট্টগ্রামে যে পাঁচ জেএমবি সদস্য ধরা পড়েছে এরমধ্যে মাহবুব ওরফে ফুয়াদ হচ্ছে জেএমবির দাওয়াতি দলের সদস্য। আর নিহত জাবেদ ছিল সামরিক শাখার প্রধান। পলাতক ফারদিন হচ্ছে প্রশিক্ষণ বিভাগের প্রধান।

মাহবুব ওরফে ফুয়াদ ছদ্মভেসে মাঝিরঘাট এলাকায় রেকিট অ্যান্ড ম্যান নামে একটি কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট সত্য সাহা করপোরেশনের পিকআপ ভ্যানের সহকারি হিসেবে কাজ নিয়েছিল। কিন্তু সে ভেতরে ভেতরে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। তারই দেয়া তথ্যে ও পরিকল্পনায় ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ছিনতাই কাজে অংশ নেয় জেএমবির ৮ সদস্য। সেখানে জনতার প্রতিরোধের মুখে পালাতে গিয়ে গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিল রফিক ও রবিউল নামে দুই জেএমবি সদস্য। মূলত সংগঠনের তহবিল সংগ্রহের জন্যই এই ছিনতাই কাজে অংশ নিয়েছিল জেএমবি।

গ্রেপ্তার চার জঙ্গিদের মোবাইল কল লিস্ট চেক করেও তেমন কোনো তথ্য উদঘাটন করতে পারেননি গোয়েন্দারা। মূলত খুব সচেতনভাবেই জেএমবি সদস্যরা গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিতে প্রযুক্তির সর্বশেষ অ্যাপস ভার্সনগুলো ব্যবহার করছে। তারা এখন হালের ভার্চুয়াল যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটস অ্যাপ, ট্যাংগো, ভাইবার, ইমোর মত অ্যাপসগুলো ব্যবহার করছে।

গত কয়েক বছর ধরে এসব অ্যাপসের ব্যবহার বেড়ে গেলে আইন-শৃংখলা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে জেএমবি সদস্যরা এখন ব্যবহার করছে কম পরিচিত কাকাও ও টেক্সটপ্লাস এর মত সর্বশেষ অ্যাপসের ভার্সনগুলো। যার কারণে তাদের সাথে কাদের যোগাযোগ ও কর্তাবার্তর রের্কডপত্রও গোয়েন্দারা উদ্ধার করতে পারেননি।

সূত্রে জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গিরা জানিয়েছে, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তারা কাজ করছে। এজন্য তারা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা গেলে বিশ্বেও অন্য কোন কোন ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর সাথে জেএমবি যোগাযোগ রক্ষা করবে সেই ধরণের একটি মানচিত্রও তারা তৈরি করেছে। মূলত বগুড়ার ডা. নজরুলই চট্টগ্রামে এসে তাদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা এবং অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে।

প্রশিক্ষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা দেশে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ছদ্মবেশে বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বিস্ফোরক মজুদ করছে। তারা বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারকে নিয়ে ইসলামিক লায়ন ফোর্স অব হিন্দুস্থান গঠনেরও পরিকল্পনা করছে। তাতে জঙ্গিরা তিন দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ৭, মিয়ানমারকে ১৪ এবং ভারতকে ২১টি সেক্টরে ভাগ হয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে।

বিশেষ করে বাংলাদেশে বড় ধরণের নাশকতা সংগঠিত করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আল কায়দার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে জেএমবি। এসব জঙ্গি সংগঠনের সহযোগিতা নিয়ে তারা বাংলাদেশেকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।

সেই লক্ষে জেএমবি দীর্ঘমেয়াদি ১৮ টি, মধ্যমেয়াদি ১৩ টি ও স্বল্পমেয়াদি ৯ টি পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। জেএমবি সদস্যরা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি মিলিয়ে মোট ৪০টি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সংগোপনে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার অপারেশন আগামী ২০১৬ সালের মধ্যেই শুরু করতে চায় জেএমবি। আর মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা ২০১৭ ও দীর্ঘ মেয়াদে ২০২০ সালের শুরুতেই হামলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

তবে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা থেকে জেএমবি সদস্যরা অনেক দূরে থাকলেও তারা স্বল্প ও মধ্যে মেয়াদি অনেক পলিকল্পনা বাস্তাবায়ন করতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে কিছুটা বাস্তাবায়নও করেছে।

সূত্রমতে, জেএমবির স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, হামলা চালানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে নিজেদের সৈনিকদের দায়িত্ব দেয়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নিজেদের অনুগতদের টার্গেটভিত্তিক নিয়োজিত করা, অস্ত্র, গোলাবারুদ, লোকবল সংগ্রহ ও যুদ্ধযান কেনা এবং ২০১৬ সালে চূড়ান্তভাবে হামলা করা। যেটির প্রমাণ পাওয়া গেছে ৬ অক্টোবর কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগর থেকে বিপুল গ্রেনেড অস্ত্র বিস্ফোরক ও অস্ত্র তৈরির মেশিন উদ্ধারের মাধ্যমে।

আর মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, সংগঠনের জন্য টাকা সংগ্রহ, ভালো মানের এহসারদের সংগঠিত করা, নিজেদের সেটআপ করা, সামরিক সরঞ্জাম মজুদ ও সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ এবং ২০১৭ সালে হামলা চালানো। সেই কাজটিও খুব ভালোভাবেই করে চলছে জেএমবি। যার প্রমাণ স্বরূপ তারা ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে সদরঘাট এলাকায় ছিনতাই কাজে অংশ নিয়েছিল সংগঠনের তহবিল সংগ্রহের জন্য।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রামে জেএমবি বিরোধী সফল অভিযান পরিচালনাকারী সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর-দক্ষিণ) বাবুল আক্তার বাংলামেইলকে বলেন, ‘জেএমবি কৌশল পাল্টে ছদ্মবেশে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। তবে তারা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেরকমই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করুকনা কেন। আমারা সব সময় সর্তক রয়েছি। চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার জঙ্গিদের কাছ থেকে যে ক’জন জেএমবি নেতার নাম পাওয়া গেছে এখন তাদের গ্রেপ্তারেই আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে তাদের কাট আউট পদ্ধতির কারণে তথ্য  পেতে ও প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমরা কিছুটা বিভ্রান্তিতে পড়ছি।’

বাবুল আক্তার আরো বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গিরা যেসব তথ্য দিচ্ছে, সেই অনুযায়ী অভিযানে গিয়ে সত্যতা মিলছেনা। তারা যেই স্থানে বৈঠক করেছে কিংবা প্রশিক্ষণ নিয়েছে। সেটি কয়েক মাস পর পরিবর্তন করে ফেলেছে তাদের প্রশিক্ষকরা। তবে সেটি আর জানতে পারছে না প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত জঙ্গিরা। মূলত তাদের কাট আউট পদ্ধতির কারণেই জেএমবির সর্বোচ্চ শিকড়ে পৌঁছা যাচ্ছেনা।’

একই প্রসঙ্গে র‌্যাব সদর দপ্তরের পরিচালক (গোয়েন্দা) লে. কর্ণেল আবুল কালাম আজাদ বাংলামেইলকে বলেন, ‘জেএমবি এখন আর আগের মত সংগঠিত নেই। এখন যে কয়েকজন ধরা পড়ছে সেগুলো বিছিন্নভাবে কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর সর্বোচ্চ সর্তকতার কারণে জেএমবির কোমর ভেঙে গেছে।’

তবে জেএমবির কৌশল বদলের বিষয়টি স্বীকার করে লে.কর্ণেল আজাদ বলেন, ‘এটা ঠিক ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে তারা কাজ করার চেষ্টা করছে। আগে মোবাইলে যোগাযোগ করলেও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সর্বশেষ অ্যাপস ভার্সনগুলোর মাধ্যমে তারা যোগাযোগ রক্ষা করছে। যার কারণে তাদের চিহ্নিত করতে একটু কষ্ট হচ্ছে। তবে কষ্ট হলেও ধরা পড়ছে।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More