আরো গবেষণার জন্য তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ৮ লাখ টাকা অনুদান
সীতাকুণ্ডের মুন্নার আবিষ্কৃত সেই ‘গ্যালাক্সি বাইক’ অবশেষে সরকারি স্বীকৃতি পেল। বিস্ময় জাগানো আবিষ্কারটি পরীক্ষা করে গাড়িটি দেশের কল্যাণে ব্যবহার করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে তাকে ৪ লাখ টাকার অনুদানও দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে আরো অনুদানের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে দফতরটি। ফলে নতুন প্রেরণা নিয়ে অধিকতর গবেষণা শুরু করেছেন মুন্নাও।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ড পৌরসদরের পেশকারপাড়ার বাসিন্দা মো: তাজুল ইসলামের ছেলে কলেজছাত্র মনোয়ারুল ইসলাম মুন্নার আবিষ্কৃত মোটরসাইকেলটি সর্বত্র ব্যাপক আলোচনা ও আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। মাত্র ৩ টাকার বিদ্যুৎখরচে এ গাড়িটি চলে সারা দিন। এতে কোনো ধরনের তেল-গ্যাসের দরকার পড়ে না। মুন্নার এ প্রযুক্তি বিস্মিত করেছে বুয়েটের প্রকৌশলীদেরও। বুয়েটের চৌকস প্রকৌশলীরা মুন্নার গ্যালাক্সি মোটরসাইকেলের ডায়াগ্রাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাংলাদেশের বাজারে এ ধরনের মোটরসাইকেলের প্রয়োজন আছে বলে অভিমত দিলে সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় তাকে উৎসাহিত করতে ৮ লাখ টাকা অনুদান ঘোষণা করে, যার মধ্যে ৪ লাখ টাকা ইতোমধ্যে প্রদানও করা হয়েছে। মুন্না নিজের আবিষ্কৃত মোটরসাইকেলটির নাম রেখেছেন ‘গ্যালাক্সি বাইক’। আবিষ্কৃত মোটরসাইকেল প্রসঙ্গে খুদে বিজ্ঞানী কলেজছাত্র মনোয়ারুল ইসলাম মুন্না এ প্রতিবেদককে জানান, এ মোটরসাইকেলটির বিশেষত্ব হলো গাড়িটি কোনোরকম তেল-গ্যাস ছাড়াই চলবে। তবে এতে চার্জের প্রয়োজন। গাড়িটি চালানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ১২ ভোল্টের পাঁচটি ব্যাটারি। অর্থাৎ ৬০ ভোল্টের ব্যাটারিতে মাত্র তিন ঘণ্টা চার্জ দিলেই কমপক্ষে ৬০ কিলোমিটার চলবে এ গাড়ি। এটি তৈরি করতে ৮০ হাজার টাকার মতো খরচ পড়েছে জানিয়ে আবিষ্কারক মুন্না আরো বলেন, প্রথমে পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে ব্যয় একটু বেশি হয়েছে। তবে যদি একসাথে অনেক মোটরসাইকেল তৈরি করা হয় তবে খরচ অনেক কম পড়বে। সে ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকাতেও একটি মোটরসাইকেল বাজারজাত করা যাবে। তবে উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কম সময়ে আরো আধুনিক মোটরসাইকেল তৈরি করা যাবে বলে তার অভিমত। ২০১৪ সালের শেষ দিকে মোটরসাইকেলটি তৈরি করেন তিনি। পরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ডায়াগ্রাম ইত্যাদি সহকারে ফাইল তৈরি করে আইসিটি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করি। সেখানে তারা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেন এবং আবিষ্কারটি কতটা নির্ভরযোগ্য তা খতিয়ে দেখতে বুয়েটের একটি প্রতিনিধিদলকে দায়িত্ব দেন। এরপর বুয়েটের প্রকৌশলীরা মোটরসাইকেলটি বিষয়ে আমার সাথে কথা বলেন এবং যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তির ব্যবহারগুলো পর্যবেক্ষণ করেন। তারা সব কিছু দেখে বিস্মিত হন এবং এটি দেশের বাজারে কতটা উপযোগী সে সম্ভাবনা যাচাই করে আবিষ্কারটি গুরুত্বপূর্ণ বলে নির্বাচন করেন। শেষে আমার ফাইলটি তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে এ মন্ত্রণালয় আমাকে এই গবেষণায় সহযোগিতার জন্য ৮ লাখ টাকা অনুদান প্রদানের ঘোষণা দেয়। ঘোষণা অনুযায়ী ইতোমধ্যে ৪ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। মোটরসাইকেলটি আরো আধুনিক করাসহ কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে অবশিষ্ট ৪ লাখ টাকাও প্রদান করা হবে। গ্যালাক্সি মোটরবাইকটি নিয়ে বর্তমানে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক কোম্পানি তার সাথে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু তাদের প্রস্তাবগুলোতে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধাদের চেষ্টাই ছিল বেশি। ফলে পরিস্থিতি বুঝে তিনি এড়িয়ে গেছেন। স্বল্পমূল্যে এ মোটরসাইকেলে দেশের মানুষ উপকৃত হলে তার আবিষ্কার সার্থক হবে বলে মনে করেন তিনি। মুন্নার এ আবিষ্কার প্রসঙ্গে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের সাংবাদিকদের বলেন, মুন্নার মোটরসাইকেল আবিষ্কারসহ গবেষণাকাজে সহযোগিতা করতে আইসিটি মন্ত্রণালয়ে একটি ফান্ড থেকে ৮লাখ টাকা অনুদান প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৪ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। কাজের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে অবশিষ্ট টাকাও প্রদান করা হবে।