শুধু শব্দের কারনে মনোযোগ হারাচ্ছে ঢাকার শিশু

0

sound poliutionঢাকা: মহানগরী ঢাকায় শব্দ দূষণ আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। এতে উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, শ্রবণশক্তি হ্রাস, মনসংযোগ কমে যাওয়া, মাথা ব্যাথা ও মাথা ধরা, খিটখিটে মেজাজ, বিরক্তিবোধ এমনকি অস্বাভাবিক আচরণ করার মত মনোদৈহিক নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের শব্দের মাত্রা নিরূপণ জরিপে এমন ভয়াবহ চিত্র পেয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।

জরিপে দেখা গেছে, শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে ২০০৬ সালে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রণয়ন করা হলেও এর তেমন কোনো প্রয়োগ নেই। তাই জনস্বাস্থ্যের প্রয়োজনে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করছে এই পরিবেশবাদী সংগঠনটি।

রাজধানী ঢাকাতে শব্দদূষণের প্রধান কারণগুলো হলো- যানবাহনের জোরালো হর্ন ও ইঞ্জিনের শব্দ, যানবাহন চলাচলের শব্দ, রেলগাড়ি চলাচলের শব্দ, বিভিন্ন নির্মাণ কাজের শব্দ, মেশিনে ইট ও পাথর ভাঙার শব্দ, দালান ভাঙার শব্দ, কলকারখানা নির্গত শব্দ, গ্রিলের দোকানে হাতুড়ি পেটানোর শব্দ, জেনারেটরের শব্দ, নির্বিচারে লাউড স্পিকারের শব্দ, অডিও ক্যাসেটের দোকানে উচ্চ শব্দে গান বাজানোর শব্দ, উড়োজাহাজের শব্দ।

ঢাকা শহরের শব্দ দূষন বিষয়ে পবা নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বাংলামেইলকে বলেন, দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা নীরব এলাকায় সহনীয় মাত্রার চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি, আবাসিক এলাকায় সহনীয় মাত্রার চেয়ে দেড় গুণেরও বেশি, মিশ্র এলাকায় সহনীয় মাত্রার চেয়ে দেড় গুণেরও বেশি এবং বাণিজ্যিক এলাকায় সহনীয় মাত্রার চেয়ে দেড় গুণ বেশি থাকে; যা মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

এভাবে শব্দদূষণ চলতে থাকলে শিশুদের মধ্যে বধিরতার হার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে এবং তারা লেখাপড়ায় অমনোযোগী ও বিকার মানসিকতাসম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই পরিবেশবিদ।

তিনি জানান, ঢাকা শহরের সব স্থানেই সহনীয় মাত্রার চেয়ে শব্দদূষণ অনেক বেশি। এমন কি শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন, বিধি-বিধান থাকলেও সেগুলোর তেমন কোনো প্রয়োগ নেই।

এদিকে ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশের শহরাঞ্চলে শব্দদূষণ একটি মারাত্মক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। ঢাকা মহানগরীতে মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ, যেকোন শিশুর বেড়ে ওঠার পূর্বেই তাকে বধিরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাকে লেখাপড়ায় অমনোযোগী এবং বিকার মানসিকতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে শব্দদূষণ মানুষের উপর যেসব ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে
উচ্চ শব্দ শিশু, গর্ভবতী মা এবং হৃদরোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। আকস্মিক উচ্চ শব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়, মাংসপেশির সংকোচন করে এবং পরিপাকে বিঘ্ন ঘটায়। শ্রবণশক্তি কমে আসে, বধির হওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়। মাথা ব্যথা, বদহজম, অনিদ্রা, মনসংযোগ কমে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, বিরক্তিবোধ, এমনকি অস্বাভাবিক আচরণ করার মতো মনোদৈহিক নানা সমস্যার সৃষ্টি হয় শব্দ দূষণে।

এছাড়াও হঠাৎ খুব জোরে শব্দ যেমন যানবাহনের তীব্র হর্ন বা পটকা ফাটার আওয়াজ মানুষের শিরা ও স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। এ ধরনের শব্দের প্রভাবে সাময়িকভাবে রক্ত প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়, রক্তনালী সংকুচিত হয়, রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী হর্ন মোটরযানের চালককে বেপরোয়া ও দ্রুত গতিতে যান চালাতে উৎসাহিত করে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়।

অসচেতনতা এবং দায়িত্ববোধের অভাবেই শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না অভিযোগ করে পল্লীমা গ্রীণের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান লিটন বাংলামেইলকে বলেন, গাড়ি যখন জ্যামে পড়ে বা সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকে সে সময় চালক অনবরত হর্ন বাজাতে থাকেন। পথচারীদের ক্ষেত্রেও দেখা যায় যে হঠাৎ রাস্তায় নেমে পড়েন। গাড়ি আসছে সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। চালকরা বাধ্য হয়ে তখন হর্ন বাজিয়ে থাকেন। এছাড়া অনেকে বাড়িতে রেডিও, টেলিভিশন, ক্যাসেট প্লেয়ার উচ্চ ভলিউম দিয়ে শোনেন। যা প্রতিবেশীর লেখাপড়া ও ঘুমে  ব্যাঘাত ঘটায়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More