ছোটদের ৯টি কথা বলবেন না, হিতে বিপরীত হতে পারে দায়িত্বশীল আদর্শ বাবা-মা হওয়া সহজ কথা নয়। তেমনি সন্তানকে আদর্শ করে গড়ে তোলাও অনেক কঠিন কাজ। কারো প্রতি নিজের ক্ষোভ বা রাগ মানুষ সাধারণত ভয়ংকর আচরণ বা গালিগালাজ দিয়েই প্রকাশ করে। কিন্তু বাবা-মায়েরা অবশ্যই মনে রাখবেন, রাগ আর ক্ষোভপ্রসূত কথাগুলো যখন সন্তানদের ওপর ঝাড়ছেন, তখন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হলে চলবে না। এমনিতেই বিশেষজ্ঞরা সন্তানদের প্রতি সব সময় ইতিবাচক হতে বলেন। তবুও শাসনেরও প্রয়োজন রয়েছে। আপনি যেভাবেই শাসন করেন না কেনো, ৯টি বিষয়ের ওপর সরাসরি ভেটো দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই ৯টি কথা সন্তানকে কখনোই বলবেন না।
১. তোমার বয়সে আমি অনেক দায়িত্বশীল ছিলাম : ছেলে বা মেয়ের কোনো দায়িত্বহীনতা নিয়ে বকাঝকা করার সময় নিজের উদাহরণ টেনে আনাটা বাবা-মায়ের সবচে বড় ভুল। ‘তুমি এটা কিভাবে করলে? তোমার বয়সে আমি এমন ছিলাম না’, ইত্যাদি কথা-বার্তা বলবেন না। এসব কথা আসে মূলত আপনার চাওয়া থেকে। আদরের সন্তানটিকে আপনি মনের মতো করে গড়ে তুলতে চান। এসব কথা বলার আগে শিশু বয়েসে নিজে বাবা-মাকে কিভাবে জ্বালাতন করেছেন তা ভাবুন। সম্পর্কের এই টানাপড়েনে আপনিই অগ্রজ। কিন্তু অগ্রজেরও অনেক কিছু শেখার আছে। এ ধরনের কথা আপনার সন্তানের আত্মনির্ভরশীলতা সম্পূর্ণ ভেঙে দেবে।
২. তুমি সব সময় ভুল সিদ্ধান্ত নাও : সন্তানের ছেলেমানুষিগুলোকে বাজেভাবে নিরুৎসাহিত করবেন না। সব সময় বিরক্ত হবেন না। সবারই ভুল করার অধিকার রয়েছে। ভুল করার প্রয়োজন রয়েছে ঠিকভাবে শেখার জন্যে। সন্তানের কোনো কাজে আপনার আগ্রহ নাও থাকতে পারে। তার বন্ধুটিকেও আপনার ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু তাই বলে আপনি সন্তানের এ কাজগুলোকে তার ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে দোষ দিতে পারেন না। পিতা-মাতা হয়ে আপনার কাজ তাকে সঠিক পথটি চিনিয়ে দেওয়া, আপনার সিদ্ধান্ত জোর করে চাপিয়ে দেওয়া নয়।
৩. তুমি কি তোমার ভাই-বোনদের মতো হতে পারো না? : নিজের অন্য সন্তানের সাথে তুলনা করে আরেকজনকে কিছু বলা আরেকটি অপ্রয়োজনীয় শাসন। নিজের সন্তানদের সামর্থ্য নিয়ে তুলনা করে তাদের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ নষ্ট করবেন না। তা ছাড়া এসব কথা ভাই-বোনদের মধ্যে ফাটল তৈরি করে।
৪. আমাকে একা থাকতে দাও : বড়দের অব্যশ্যপালনীয় বহু দায়-দায়িত্ব রয়েছে। আবার এ কাজগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছোটরা হবে অমনোযোগী। এটাই স্বাভাবিক এবং ছোটরা এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি নির্দোষ। অনেক পরিস্থিতি রয়েছে যখন আপনার একা থাকা প্রয়োজন। এ সময়ের গুরুত্ব শিশুরা বুঝবে না। এমন কোনো কাজের সময় আপনার বাচ্চাটি চলে আসলো, আপনি চরম বিরক্তি নিয়ে প্রচণ্ড কণ্ঠে চিৎকার দিয়ে উঠলেন ‘আমাকে একা থাকতে দাও’। এই একটি আচরণে আপনার অবুঝ শিশুটি একইসাথে অবহেলিত, অপ্রয়োজনীয় এবং হতাশাগ্রস্ত বোধ করবে। ধৈর্য্যের সাথে খারাপ কিছু বলা থেকে বিরত থাকুন।
৫. তোমার লজ্জা হওয়া উচিত : এই একটি বাক্য অপরিপক্ক মনে খুবই বাজেভাবে প্রভাব ফেলে। আপনার সন্তানটি অনেক দুষ্টু হতে পারে। তার এসব দুষ্টুমির কারণে অনিষ্টকর কিছু ঘটতে পারে। সে জন্যে আপনি কোমলমতি মনে এমন বিচ্ছিরিভাবে আঘাত করতে পারেন না। এতে তাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।
৬. তুমি একদম তোমার বাবা/মায়ের মতোই হয়েছ : এ কথাটি ভালো কিছু বোঝাতে বলা যায়। কিন্তু খারাপ অর্থে এর প্রভার বড়ই বৈরী। বহু পরিবার আছে, স্বামী-স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। সন্তান হয়তো তার বাবা-মায়ের মধ্যে খুব ভয়ংকর অনেক পরিস্থিতি দেখেছে। যদি আপনি বাচ্চাদের তার পিতা-মাতার এ জাতীয় মারাত্মক চেহারার সাথে তুলনা করেন, তবে তারা মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলে।
৭. তুমি সব সময় আমাকে কষ্ট দিতে চাও : ছেলে-মেয়েরা কিছু কাজ করে ফেলতে পারে যাতে আপনি কষ্ট পেতে পারেন। এর মানে এই নয় যে, সে আপনাকে বুঝে-শুনেই আঘাত করে। এগুলো ঘটে তাদের অজান্তে। শিশুরা যদি বুঝতে পারে এই কাজগুলোতে আপনি কষ্ট পান, তবে সে তা করবে না। এগুলো ঠাণ্ডা মাথায় বোঝাতে হবে। কিন্তু আপনিই যদি মনে করেন যে সে এগুলো আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যে করে, তবে এটা আপনার ভুল। আর এ ভুল তাদের ওপর চাপানো আরো ভয়ঙ্কর ভুল। এতে করে তারা নিজেদের সব সময় দোষী মনে করবে।
৮. তোমার মতো সন্তান থাকার চেয়ে নিঃসন্তান হওয়া অনেক ভাল : এ কথাটি বাবা-মায়ের রাগ বা ক্ষোভের চরম প্রকাশ। একটি সন্তানের জন্যে এ কথার চাইতে কষ্টের কিছু হতে পারে না। এতো ভয়ংকর আঘাতের কি প্রয়োজন আছে? তা সে যতো বাজে কাজই করুক না কেনো। ঘটনা যাই হোক, এমন কিছু বলুন যাতে সে বোঝে যে আপনি কষ্ট পেয়েছেন।
৯. মন্দ বন্ধুদের বাদ দাও: আমরা বড়রাই বন্ধু তৈরিতে সাবধান হই না। আর বাচ্চারা কিভাবে হবে? আমরা শুধু বুঝতে পারি কে মন্দ এবং কিভাবে তার থেকে দূরে থাকা যায়। কিন্তু শিশুরা তা পরিষ্কারভাবে বুঝে উঠতে পারে না। তাদের কাছে বন্ধু মানেই পুরো পৃথিবীটা। কাজেই আপনি সহজেই তাদের ওপর এ আদেশ চাপিয়ে দিতে পারেন না যে, নতুন করে ভাল বন্ধু খুঁজে বের কর। – সূত্র: অনলাইন