পুলিশকে আবারও আলোচনায় এনেছেন এসআই মাসুদ

0

Masudপুলিশ প্রশাসন যতই নিজেদের ‘রিফর্ম প্রোগ্রাম’ এবং জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, ভেতরে থাকা দুর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তারা সব চেষ্টাতেই পানি ঢেলে দিচ্ছেন। এমন অভিযোগ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তার। এসআই মাসুদকে থানা থেকে প্রত্যাহারের তাৎক্ষণিক মন্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন ও ৫ লাখ টাকা দাবি করে আবারও পুলিশকে আলোচনায় নিয়ে এসেছেন অভিযুক্ত এসআই মাসুদ। গতকাল রবিবার থেকে ফেসবুকে চলছে তোলপাড়। প্রায় প্রত্যেকের ওয়ালেই প্রতি মুহূর্তে আসছে এসআই মাসুদের প্রত্যাহার নিয়ে করা নিউজের লিংক। সঙ্গে পোস্ট করা মন্তব্যে প্রায় প্রত্যেকেরই দাবি, এ ঘটনার জন্য যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় তার।

নির্যাতনের শিকার রাব্বী অভিযোগ করেন, মোহাম্মদপুর থানার এই এসআই ৫ লাখ টাকা দাবি করে না পেয়ে ক্রসফায়ারে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল তাকে।

পুলিশের নির্যাতনের শিকার রাব্বী কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েনএদিকে রাব্বীর বন্ধুরা শুভকামনা ও প্রতিরোধের ডাকে ভরে ফেলেছে তার ওফসবুকের ওয়াল। বন্ধু খোকন লিখেছেন, আর চুপ করে থাকা নয়, আর মুখ বুঝে বসে থাকা নয়। আসুন তীব্র প্রতিবাদ করি। যদি প্রতিবাদ না করি তাহলে গোলাম রাব্বী ভাইয়ের মতোই অবস্থা হবে সকলের …।

প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ার আহ্বানের পাশাপাশি উঠছে মাসুদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ। বন্ধু দেবু লিখেছেন, গোলাম রাব্বীর উপর সন্ত্রাসী কায়দায় আক্রমণকারী পুলিশ অফিসার এসআই মাসুদ সিকদার, পুলিশ প্রশাসনে থাকা ভাইবোনদের জন্য কলঙ্কের নাম। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

মাসুদকে থানা থেকে প্রত্যাহারের খবর পেয়ে রাব্বীর বন্ধুরা মনে করছেন এটা প্রাথমিক একটা শাস্তি হলো হয়তো। কিন্তু আমরা বিচারিক শাস্তি দেখতে চাই।

রাব্বী সম্পর্কে তার বন্ধুরা ফেসবুকে লিখছেন, তিনি শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাই নন, ঢাবির একজন মেধাবী ছাত্র, জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক, ভাল বিতার্কিক, মেধাবী কুইজার, দৃঢ় সংগঠক এবং সর্বোপরি একজন ভাল মানুষ। নিজ ডিপার্টমেন্ট, সঙ্গে হলের বড় ভাই হওয়ার সুবাদে দেখেছি তিনি ছোটবড় সবাইকে কত সহজে আপন করে নেন! নিজের মধ্যে কখনও আত্মবিশ্বাসের অভাব বোধ করলে সঙ্গে সঙ্গে ভাইয়ের কাছে গিয়েছি আর এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্রণায় তৃপ্ত মন নিয়ে ফিরেছি। এমন মানুষকে যদি পুলিশ টাকার জন্য নির্দয়ভাবে পেটায়, ক্রসফায়ারে মারবে বলে, ইয়াবা রাখার মিথ্যা অভিযোগ দেয়, তখন জাতীয় উন্নয়ন আর বুলি কপচানো যৌথ অগ্রযাত্রার শব্দগুলোকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করতে মন বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না।

দলগত আর বিভিন্ন স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের সংবিধান যদি ১৬ বার সংশোধিত হতে পারে তবে ১৬ কোটি জনগণের স্বার্থে ১৮৬১ সালের উপনিবেশিক সেই পেটোয়া পুলিশ আইন কেন একবারও সংশোধিত হবে না!!

গোলাম রাব্বী তার অভিযোগে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা হতে কল্যাণপুরে বাসায় ফেরার পথে আসাদ গেটে ডাচবাংলা ব্যাংকের এটিএম ‍বুথে ঢুকে টাকা উত্তোলন করি। রাতে ফিরে বাসা ভাড়া দেওয়ার কথা ছিল। তখন রাত আনুমানিক ১০টা। বুথ থেকে বের হয়ে টাকা মানিব্যাগে ঢুকাতেই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের গাড়ি থেকে একজন এসে বললেন, ওই চল, স্যার তোর সঙ্গে কথা বলবে। সেখানে গেলে তারা আমাকে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলে।’

.

রাব্বী আরও জানান, গাড়িতে নেয়ার পর এসআই মাসুদকে অন্য এক পুলিশ সদস্য বলেন, স্যার, এই ব্যাটা বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করে। কিন্তু তার অ্যাকাউন্টে তেমন টাকা নেই। তখন মাসুদ তাকে বলে, বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করে বলিস, তোর কাছে টাকা নেই! ৫ লাখ টাকা দিলে তোকে ছেড়ে দেওয়া হবে। না দিলে কাল সকালে তোর লাশ বেড়িবাঁধে পাওয়া যাবে। রাব্বী কথাগুলো বলছিলেন আর কাঁদছিলেন। এ কান্না যে ক্ষোভ আর ঘৃণার সেটা টের পাওয়া যায়।

পরে রাব্বীর সাংবাদিক বন্ধুরা মোহাম্মদপুর থানায় যায়। সেখানে মাসুদ ঘটনা পুরোপুরি অস্বীকার করেন। পরদিনই রাব্বীকে হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ শিকদারকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। সোমবার সকালে তাকে প্রত্যাহার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও উপ-কমিশনার কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার তদন্তের জন্য মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার হাফিজ আল ফারুককে দায়িত্ব দিয়েছে ডিএমপি। তদন্তে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় মাসুদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগ শুনে মাসুদের হয়ে কথা বলতে চেষ্টা করেছিলেন মোহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন মীর। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে কিনা সেবিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে থানা থেকে জানানো হয়, স্যার এখন কথা বলবেন না।

উৎসঃ   বাংলা ট্রিবিউন
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More