৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে অসম্পূর্ণ হিসেবে অভিহিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী। তিনি বলেছেন, দশম সংসদ নির্বাচন হয়েছে একতরফা। এতে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছিল না। ১০ ভাগের কম ভোটার নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। বেশ কিছু কেন্দ্রে কোন ভোটার ভোটই দিতে যাননি। এ নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এ ধরনের নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক এবং তা গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়। এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, সরকারই চায়নি বিএনপি ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ নিক। বিএনপি নির্বাচনে এলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে- এ আশঙ্কা থেকেই সরকার বিএনপিকে নির্বাচনে চায়নি। পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের পরই সরকার এ কৌশল অবলম্বন করে। তিনি বলেন, সরকারের মতে বিরোধী দলের সন্ত্রাস ও সহিংসতার কারণে ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারেনি। কিন্তু আমি মনে করি সরকারের ভুলনীতির প্রতিবাদ হিসেবেই জনগণ ভোট দিতে যায়নি। ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে তারা সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে। বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে বিরোধী দল সাফল্য পেয়েছে। এটা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সরকারবিরোধী মনোভাবের ফল। বিরোধী দলকে জনগণের সরকারবিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে আন্দোলনে নামতে হবে। সভা-সমাবেশের মতো গণতান্ত্রিক অধিকারকে আদায় করে নিতে হবে। সরকার তাদের সভা-সমাবেশ করতে দেবে না- এটাই স্বাভাবিক। উপজেলা নির্বাচনের ফল বিএনপির আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করবে। তিনি বলেন- আমি বুঝতে পারছি না ২৯শে মার্চের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি কেন দীর্ঘায়িত না করে একদিন পরেই থামিয়ে দেয়া হলো। এটা দীর্ঘায়িত করা হলে একটা ফল পাওয়া যেতো। তিনি প্রশ্ন করে বলেন- সারা দেশেই তো পুলিশের বাধার মুখে রাজপথে নেতা-কর্মীরা নেমে এসেছেন, আন্দোলন করেছেন। ঢাকার বাইরের আন্দোলন সফলও হয়েছে। সারা দেশে আন্দোলন সফল হলে ঢাকায় হবে না কেন? এজন্য তিনি শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আন্তরিকতা ও অনীহাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, যখন নেতাদের অর্থবিত্ত হয়ে যায় তখন তারা হয়ে পড়েন ভোগবাদী। তখন রাজপথের আন্দোলনে তাদের দেখা পাওয়া যায় না। এ কারণে বিরোধী দলের আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার কত বছর টিকবে তা নির্ভর করছে বিএনপির আন্দোলনের ওপর। সরকারকে হটাতে হলে বিএনপিকে আন্দোলনমুখী হতে হবে। আন্দোলন হচ্ছে এমন যে দু’ পা এগোলে এক পা পিছাতে হয়। সরল পথে আন্দোলন হয় না, এটা আঁকাবাঁকা পথের। উপজেলা নির্বাচনে ফল বিএনপির আন্দোলনকে উজ্জীবিত করে পথনির্দেশক হতে পারে। দ্রুত আরেকটি নির্বাচনের জন্য কূটনীতিকদের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বায়নের এই সময়ে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন কোন রাষ্ট্র নয়। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। উন্নয়ন সহযোগী বন্ধু রাষ্ট্রের সহায়তা, পরামর্শ এবং শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে তাদের মতামতের গুরুত্ব রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা তাদের মুখাপেক্ষী। তাদের আর্থিক সহায়তা নেবেন, কোন ক্ষেত্রে ধরনা দেবেন- আবার তাদের কথা শুনবেন না, এটা কি হয়? সহায়তা নিতে গেলে কিছুটা সুযোগ তো তারা নেবেই। আর তারা তো কার্যকর গণতন্ত্র দেখতে চায় বলে পরামর্শ দিচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের পরামর্শকে নেতিবাচকভাবে নেয়া উচিত হবে না।
সূত্রঃ মানব জমিন