ধূমপায়ীদের ক্ষোভ, দোকানীদের আন্দোলন কিছুই সরাতে পারেনি সরকারী সিদ্ধান্তকে। সরকার অনড় তার সিদ্ধান্তে !
ধুমপানের ভয়াবহতা নিয়ে জোর প্রচারণা চলছিলো অনেকদিন ধরেই। শেষ অবধি দেশটির প্রেসিডেন্ট গুর্বাঙ্গুলি বের্দিমুখামেদভ দেশবাসীদের ধূমপান ছাড়তে বলে কয়েকদফা অনুরোধ করেছেন। তবে সেসবে তেমন একটা প্রভাব পড়েনি দেশটির ধুমপায়ীদের ভেতর। পরবর্তীতে এক নীতিগত সিদ্ধান্তে দেশের যেকোন স্থানে যেকোন দোকানে সিগারেট বিক্রিতে কড়া রকমের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তুর্কমেনিস্তান কর্তৃপক্ষ।
মধ্য এশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র তুর্কমেনিস্তান নামের দেশটিতে এখন সরকারের কড়া নির্দেশে দোকানিদের সিগারেট বেচা বন্ধ করতে বাধ্য করছেন দেশটির আইনশৃংখলা বাহিনী ।এ নিয়ে অবশ্য দেশটির ধুমপায়ীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার কথাও জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমগুলো । তবে সরকার এখন অবধি অটল সিদ্ধান্তেই ।
মাদক প্রতিরোধী কর্মকর্তারা দৃশ্যত দোকানে দোকানে ঢুকে দোকানিদের তাক থেকে সিগারেটের প্যাকেট সরাতে বলছেন – নয়ত বিপুল পরিমান জরিমানা হবে বলে ভয় দেখাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট বের্দিমুখামেদভ গত ৫ই জানুয়ারি একটি সরকারি বৈঠকে দেশের ধূমপান প্রতিরোধ নীতির সমালোচনা করেন। বৈঠকটি দেশের সরকারী টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়।
জানা গেছে , প্রেসিডেন্ট বের্দিমুখামেদভ নিজে আগে দাঁতের ডাক্তার ছিলেন । তুর্কমেনিস্তানের সরকারি মাদক প্রতিরোধী সংস্থার নাম হল ‘স্বাস্থ্যবান সমাজের নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রীয় পরিষেবা’। বের্দিমুখামেদভ এই সংস্থার কাছ থেকে ‘‘ধূমপান দূরীকরণের জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ” দাবি করেছেন।
বর্তমানে দোকানিরা কিছুক্ষেত্রে লুকিয়ে- খদ্দের আর বন্ধুবান্ধবের কাছে সিগারেট বিক্রি করছেন। দোকানীদের অবশ্য অভিযোগ এখন অবধি সিগারেট বিক্রির ওপর কোনো সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি৷ । তবুও এই অলিখিত ও অবিজ্ঞপিত নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের জরিমানা হিসেবে নাকি প্রায় দশ মাসের উপার্জনের সমপরিমান অর্থ জরিমানায় গুনতে হয়েছে অনেক ব্যবসায়িকে ।
অন্যদিকে, ভোক্তাদের অভিযোগ, এক প্যাকেট চোরাই সিগারেটের দাম ২৫ মানাট থেকে বেড়ে এখন ৫০ মানাট, অর্থাৎ ১৪ ডলারের বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দাম বেশি হওয়ায়, খোলা বা খুচরো সিগারেটের দাম বাড়ছে –আপাতত সিগারেট প্রতি দুই মানাট, জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বের্দিমুখামেদভ ২০০৬ সাল যাবৎ তুর্কমেনিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি ইতিপূর্বেও ধূমপান বিরোধী অভিযান চালিয়েছেন। তবে ভোক্তা আর বিক্রেতাদের অভিযোগ আর অসন্তোষ যাই থাকুকনা কেন , আশার কথা হলো, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠনের বিবৃতি অনুযায়ী বিশ্বের সব দেশের মধ্যে তুর্কমেনিস্তানেই আজ ধূমপায়ীদের অনুপাত সবচেয়ে কম – মাত্র আট শতাংশ।
প্রসঙ্গত, বের্দিমুখামেদভের আগে দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন সাপারমুরাত নিয়াজভ, যিনি ছিলেন চেন স্মোকার। হার্ট সার্জারির পর ২০০০ সালে স্মোকিং ছাড়েন নিয়াজভ, পরে একটি ধূমপান প্রতিরোধী অনুশাসনেও স্বাক্ষর করেছিলেন। ধীরে ধীরে আরো কড়া বিধিনিষেধ এসেছে। ২০১১ সালে তামাকের উপর শুল্ক বাড়ানো হয়; ২০১৩ সালে প্রকাশ্য স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়।
ফলে প্রাক্তন সোভিয়েত রাজ্যগুলির মধ্যে তুর্কমেনিস্তানেই আজ সিগারেটের দাম সবচেয়ে বেশি। সেটা তাদের সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য, সেটা তুর্কমেনিরাই বলতে পারবেন।