নারায়ণগঞ্জ থেকে রাকিব হাসান : নারায়ণগঞ্জে দুই শিশুসহ পাঁচজনকে হত্যার রহস্য উদঘাটনে তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশ। দুজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আর এ থেকে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য।
রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছে কিছুক্ষন পরেই বিস্তারিত জানানো হবে ।
সন্দেহভাজন হিসেবে মামলায় নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাসলিমার কাছে পাওনাদার নাজমা, শাহাজালাল ও ভাগ্নে মাহফুজের। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শনিবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ দুজনকে আটক করে। এরপর রোববার সকালে পার্শ্ববর্তী একটি হোসিয়ারি কারখানা থেকে চারজনকে আটক করে পুলিশ। আটক এ ছয়জনকে বর্তমানে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
আটকদের মধ্যে মাহফুজ সম্পর্কে শরীফ-শফিকুলের ভাগ্নে। শফিকুল ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানির গাড়িচালক। আর শরীফ ঢাকার মোতালেব প্লাজায় মোবাইল মেরামতের দোকানে কাজ করেন। শফিকুল চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকেন। সপ্তাহে একদিন নারায়ণগঞ্জের বাসায় যান।
নিহত পাঁচজন হলেন- তাসলিমা (৪০), তাসলিমার ছেলে শান্ত (১০), মেয়ে সুমাইয়া (৫), তাসলিমার ভাই মোরশেদুল (২৫), তাসলিমার দেবরের স্ত্রী লামিয়া (২৫)।
তাসলিমার মা মোরশেদা বেগম ধানমন্ডিতে থাকেন। তার কাছ থেকে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেয়েছেন, যা এই হত্যাকাণ্ডের মূলে যেতে সহায়তা করতে পারে।
মোরশেদা বেগম যে তথ্য দিয়েছেন, তা হলো- তাসলিমার সঙ্গে তার স্বামী শফিকুল ইসলামের বিয়ে হয় ১৩ বছর আগে। রাজধানীর কলাবাগান উত্তর ধানমন্ডির পোড়াবাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন শফিকুল। ঋণের বোঝা ছিল তাসলিমার ওপর। ধারদেনায় ডুবে গিয়েছিলেন তিনি। বাড়ির মালিকের কাছ থেকেও ১ লাখ ধার নিয়েছিলেন তাসলিমা।
মোরশেদা বেগম জানান, তাসলিমার ঋণের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না তারা। কত টাকা ঋণ ছিল, টাকা দিয়ে সে কী করত, তার কিছুই জানতেন না তিনি। তবে যখন পাওনাদারদের সঙ্গে বিবাদ জোরালো হতে থাকে, তখন তিনি এ বিষয়ে জানতে পারেন।
মেয়েকে সমস্যা থেকে উদ্ধারের উদ্যোগ নেন মোরশেদা। কলাবাগানের ওই বাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের টাকা শোধ করে দেওয়ার শর্তে তাসলিমাকে গোপনে নারায়ণগঞ্জে তার বোন ইয়াছমিনের বাসায় রেখে দেন। তারপর তাসলিমার জন্য মোরশেদা বেগম একটি বাড়ি ভাড়া করেন। গত মাসে ভাড়া নেওয়া এই বাড়িতে তাসলিমার সঙ্গে তার ভাই ও তাসলিমার দেবর স্ত্রীকে নিয়ে থাকা শুরু করে।
তাসলিমার মা মোরশেদার ধারণা, তাসলিমার ধারদেনার সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র থাকতে পারে। তবে পুলিশ এ বিষয়ে এখনো পরিষ্কার কোনো তথ্য পায়নি।
এর আগে সিআইডির ক্রাইম সিন টিমের তদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নম্বর বাবুরাইল এলাকায় ফ্ল্যাটবাড়িতে নিহত দুই শিশুসহ পাঁচজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে লাশগুলো ওই বাড়িতে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।
সিআইডি নারায়ণগঞ্জ অফিসের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এহসান উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, লোহাজাতীয় ভারী কিছু দিয়ে মাথায় আঘাতের পর গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে এই পাঁচজনকে।
এহসান উদ্দিন চৌধুরী আরো জানান, তাদের অচেতন করে পরে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। নিহতদের মাথায় যে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, তা থেকে এই ধারণা করা হচ্ছে। পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও আর্থিক লেনদেনের কারণে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। চুরি বা ডাকাতি নয়, দেনা-পাওনা সম্পর্কিত কোনো ঘটনা থেকে এই হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকতে পারে।
তদন্তে দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার ফোরকান আহমেদ বলেন, ‘মোরশেদুলের সঙ্গে কারো আর্থিক লেনদেন থাকতে পারে। অন্যটি হল সেখানে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা, বা খাবারে বিষ দেওয়া হয়েছে কিনা। তিনি বলেন কারণ ঘটনাস্থলে ধস্তাধস্তির কোনো আলামত নেই, প্রতিবেশীরাও কোনো চেঁচামেচি শোনেনি। সম্ভবত খাবারে চেতনানাশক কিছু মিশিয়ে সবাইকে অচেতন করে হত্যা করা হয়েছে।