মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমকে পাকিস্তান আদৌ ভারতের হাতে তুলে দেবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও তাঁর অন্যতম সহযোগী আব্দুর রউফ দাউদ মার্চেন্টকে দিল্লির হাতে তুলে দেবে বাংলাদেশ। আর ভারত ফেরত পাঠাবে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিনকে। সম্প্রতি এমন বার্তা এসেছে দিল্লির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের আগস্টে ভারতের মুম্বই নগরীর আন্ধেরি এলাকায় টি-সিরিজ কোম্পানির মালিক গুলশন কুমারকে গুলি করে হত্যা করেন দাউদ মার্চেন্ট। ২০০২ সালে মুম্বাইয়ের আদালত দাউদ মার্চেন্টকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। এরপর ২০০৯ সালে দাউদ মার্চেন্টকে পারিবারিক কারণে ১৪ দিনের প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে যান। ভারত সরকার সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি বাংলাদেশকে জানায়। পরে বাংলাদেশ পুলিশ দাউদ মার্চেন্ট ও তাঁর এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে দাউদ মার্চেন্টকে ভারত-বাংলাদেশ বন্দি বিনিময় চুক্তি মেনে ভারতের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে ভারতের জঙ্গি সংগঠন আসিফ রাজা কমান্ডো ফোর্সের আরো পাঁচ জঙ্গিকে ভারতের কাছে তুলে দেওয়া হবে। এঁরা সবাই বর্তমানে ঢাকা জেলে বন্দি রয়েছেন।
গতকাল শনিবার ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে সব জঙ্গিকে ভারতে ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা করেন। দাউদ মার্চেন্ট ছাড়া অন্য পাঁচ জঙ্গি হলেন, মাওলানা মনসুর আলী হবিবুল্লাহ, মুফতি ওবায়েদুল্লাহ ওরফে আবু জাফর, মাওলানা এমদাদুল্লাহ, জাহিদ শেখ ও আরিফ হাসান। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আশা করেন, এদের ভারতে এনে জেরা করা হলে মৌলবাদী মুসলিম সংগঠনের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যাবে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ভারতের হাতে দাউদ মার্চেন্ট ও অপর জঙ্গিদের তুলে ভারতে আটক বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিনকে ফেরত চায় বাংলাদেশ। আর এই বিষয়ে ভারত সরকারের নীতিগত কোনো আপত্তি নেই।
ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণের যে চুক্তি রয়েছে তার সফল রূপায়ণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, একে অপরের দেশে আটক অপরাধীদের অন্যের হাতে তুলে দেবে। সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশের আদালতে দাউদ মার্চেন্টের বিরুদ্ধে আনা যাবতীয় মামলা প্রত্যাহারে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জানা গেছে, গত ৯ ডিসেম্বর ঢাকার আদালতে দাউদের বিরুদ্ধে আনা অবৈধ প্রবেশের মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি এর শুনানি হবে।
গত বছরের নভেম্বরে ঢাকায় ভারত ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের এক বৈঠকে বন্দিবিনিময় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এর আগে উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ। বিনিময়ে বাংলাদেশের কুখ্যাত অপরাধী নূর হোসেনকে ভারত সরকার বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়।
ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এবার বাংলাদেশ সরকার ফেরত চাইছে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ গত আগস্ট মাসে গ্রেনেড হামলায় অভিযুক্ত বাংলাদেশ হুজির নেতা মুরসালিন, মুত্তালিন, কুখ্যাত অপরাধী সুব্রত বাইন, সাবেক সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার খুনের অভিযুক্ত মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি দীপু, চট্টগ্রাম শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন, উগ্রপন্থী নেতা মুক্তার হোসেনকে। ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এঁদের সবার সঙ্গেই পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলোর যোগাযোগ আছে বলে ধারণা করা হয়। এঁদের সবাইকে বাংলাদেশে ফেরত নিয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের শিবিরগুলো ধ্বংস করতে চায় ঢাকা।