হঠাৎ করে বৃষ্টির পর সারা দেশে শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। অনেক সময় বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ছে। গত দু’দিনে অনেক জেলায় সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। অনেক স্থানে তাপমাত্রা ৮-৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। শীতবস্ত্রের অভাবে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্ট করছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ঘন কুয়াশায় আলুসহ শীতকালীন সবজির আবাদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, জেলায় শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সাত দিন ধরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ছে। বইছে হিমেল হাওয়া। শীতবস্ত্রের অভাবে বেশি কাহিল হয়ে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। গত দু’দিনে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। গরিব ও অভাবী লোকজন কাজকর্ম করতে না পারায় পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। পঞ্চগড় হিমালয়ের কাছে হওয়ায় এ জেলায় শীতের তীব্রতা এবার সবচেয়ে বেশি। এ দিকে ঘন কুয়াশায় আলুসহ শীতকালীন সবজির আবাদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ জেলায় কোনো আবহাওয়া অফিস নেই। তবে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, রাতে তাপমাত্রা ৮ থেকে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। শিশুদের জন্য বাড়তি সতর্কতা নিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। সর্দি, কাশি লেগেই থাকছে। গত দুই দিনে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নতুন করে ৫১টি শিশু শীতজনিত রোগে ভর্তি হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, গরিব ও অভাবী মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে নিদারুণ কষ্ট করছে। শিশু-কিশোর ও বয়োবৃদ্ধ মানুষ গাছের পাতা, খড়-কুটা জ্বালিয়ে শীত থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। শীতে গ্রামের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চালাতে হচ্ছে।
সরকারিভাবে ও বিভিন্ন ব্যক্তি, এনজিও কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে। ইসলামী ব্যাংক পঞ্চগড় শাখা এক হাজার পিস কম্বল এবং পঞ্চগড় পৌর মেয়র তৌহিদুল ইসলাম শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন। এ ছাড়া নয়া দিগন্তের পঞ্চগড় ‘প্রিয়জন’ ৮৫টি কম্বল, চাঁদর, সুয়েটার বিতরণ করেছেন। পঞ্চগড় পৌর মেয়র মো: তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমার পৌরসভায় ১০ হাজার কম্বল প্রয়োজন। কিন্তু পেয়েছি মাত্র ৫০০ পিস।
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠাণ্ডায় কুড়িগ্রামের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রাত থেকে ঘন কুয়াশা ও উত্তরের হিমেল হওয়ায় জেলায় ঠাণ্ডার প্রকোপ বেড়ে গেছে। পথ-ঘাট কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকায় দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। শনিবার সকাল থেকে সূর্যের দেখা না যাওয়ায় কাজে যেতে পারছে না নি¤œ আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। বেশি বিপাকে পড়েছে চরের শিশু ও বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষ। বোরো মওসুম শুরু হলেও কনকনে ঠাণ্ডায় মাঠে কাজ করতে পারছে না কৃষকরা।
কুড়িগ্রাম শহরের ভ্যানচালক আফজাল হোসেন জানান, ঠাণ্ডার মধ্যে গাড়ি নিয়ে বের হলেও এখন পর্যন্ত কোনো কাজ জোটেনি। এমন ঠাণ্ডায় হাত-পা পর্যন্ত বের করা যায় না। শহরের সওদাগরপাড়া এলাকার ফজিলা বেগম জানান, ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘরে বসে আছি। ঠাণ্ডায় বাইরে বের হওয়া যায় না। সদর উপজেলার ধরলা ব্রিজ এলাকার কৃষি শ্রমিক শফিকুল জানান, জমিতে বোরো চারা লাগানোর কাজ করছি কিন্তু ঠাণ্ডায় থাকা যাচ্ছে না। কুড়িগ্রাম আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, আজ এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থা চলতে থাকলে তাপমাত্রা আরো কমতে পারে বলে জানান তিনি।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, শৈত্যপ্রবাহে কাহিল হয়ে পড়েছে নীলফামারীর মানুষ। বুধবার থেকে শুরু হওয়া ঘন কুয়াশার সাথে উত্তরের হিমেল বাতাস আর কনকনে ঠাণ্ডায় জবুথবু হয়ে পড়েছে এখানকার লোকজন। তীব্র শীতের কারণে তারা কাজে যেতে পারছে না।
তীব্র শীতে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীসংলগ্ন ২২টি চর এলাকার ভূমিহীন মানুষ। শীতবস্ত্রের অভাবে দিনভর খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। চার দিন ধরে চলা শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় গতকাল দুপুর পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। দিনেও কুয়াশার কারণে ভারী যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আবহওয়া অফিসে গতকাল নীলফামারী জেলার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিকে শীতের তীব্রতার কারণে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। আর এই রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধ বয়সীরা। সরকারিভাবে শীতবস্ত্রের বরাদ্দ এসেছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ফলে এগুলো বিতরণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে।
কাহালু (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, গত কয়েক দিনে কাহালুতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হঠাৎ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পর শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ব্যবসাবাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বৈরী আবহাওয়ায় চাতাল শ্রমিকসহ শ্রমজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। বয়স্ক ও শিশুরা ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কাহালু হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর ভিড় বেড়ে গেছে। মানুষ খড়-কুটা জ্বালিয়ে শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছে। শৈত্যপ্রবাহে কৃষকের আলু ক্ষেত লেটব্রাইট মড়কে আক্রান্ত হচ্ছে। বোরো ধানের বীজতলায় চারা হলুদবর্ণ ধারণ করে পচে যাওয়ার পাশাপাশি শীতকালীন শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
পাটগ্রাম (লালমনিরহাট ) সংবাদদাতা জানান, কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় উপজেলার জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল রংপুরে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শনিবার দুপুরেও সূর্যের দেখা মেলেনি। পুরো আকাশ ছিল কুয়াশায় ঢাকা। গতকাল অনেককে খড়কুটো জালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হচ্ছে না কেউ। পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর কুতুবুল আলম জানান, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে জরুরি ভিত্তিতে শীতবস্ত্র চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে এ পর্যন্ত ১৭০০ পিস শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।
মান্দা (নওগাঁ) সংবাদদাতা জানান, মান্দায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে মানুষ। জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বাড়ছে শীতজনিত বিভিন্ন অসুখ। লোকজন ঘর থেকে বের হতে পারছে না। বিভিন্ন যানবাহন দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। বৃদ্ধ ও শিশুরা সর্দি, কাশি, কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, এলার্জি, চর্মরোগসহ শীতজনিত নানা অসুখে ভুগছে। খেটেখাওয়া লোকজন পড়েছে চরম দুর্ভোগে। অভাবী ও দুস্থ মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু কম্বল বিতরণ করেছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, দুই দিনের হঠাৎ বৃষ্টির পর বেড়েছে শীতের তীব্রতা। কমেছে তাপমাত্রা। জবুথবু হয়ে পড়েছে উপজেলার মানুষ। তীব্র শীতে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। বাড়ছে শীতজনিত রোগ। ঠাণ্ডায় শিশু ও ছিন্নমূল খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। কর্মজীবী মানুষ অনেকটাই ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। মাঠে বোরো চাষের জমি তৈরির কাজও ব্যাহত হচ্ছে। হতদরিদ্র মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। অনেকে ভিড় জমাচ্ছে পুরনো কাপড়ের দোকানে। প্রচণ্ড শীতে শিশু ও বৃদ্ধরা সর্দি-কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিনই হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাস-ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে যাত্রীসংখ্যা কমেছে।
সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা জানান, ঘন কুয়াশা আর প্রবল শৈত্যপ্রবাহে সৈয়দপুরের মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। প্রবল শৈত্যপ্রবাহ ও কনকনে ঠাণ্ডায় ইরি-বোরো-বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। গ্রামগঞ্জে আমাশয়-জ্বরসহ নানা রোগ দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করে বৃষ্টি হওয়ার পর সৈয়দপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ ও কনকনে ঠাণ্ডায় প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। মিল-কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বয়স্ক ও শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
সৈয়দপুরে দিনাজপুর রোডের কার্যালয় চত্বরে দু’টি অনুষ্ঠানে ২৩০টি কম্বল বিতরণ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সেলফ হেলথ এ্যান্ড রিহেবিলিটেশন প্রোগ্রাম (শার্প)। এর মধ্যে ১৫০ পিস কম্বল শার্পের ও ৮০টি কম্বল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তহবিল থেকে বিতরণ করা হয়েছে।
সাঘাটা (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, উত্তরের হিমেল হাওয়া আর হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাঘাটা উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মানুষ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর ঘন কুয়াশায় শীতের তীব্রতা আরো বেড়ে গেছে। এতে খেটে খাওয়া ছিন্নমূল ও শ্রমজীবী মানুষেরা চরম বিপাকে পড়েছে। উপজেলার সর্বত্র দেখা দিয়েছে শীতজনিত রোগ। শিশুরা কোল্ড ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। গতকাল সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। হাসপাতাল বেডে ১৭ জন ডায়রিয়াআক্রান্ত শিশুকে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে গুরুতর শিশুরা হচ্ছে, আ: আলিম (৮ মাস), হিরণ (১৮ মাস), মোকাদ্দেস (২ মাস), রুনা আক্তার (১৫ মাস), সামিম ( ১ মাস), জিসান (১০ মাস), সাদিয়া আক্তার (১১ মাস), ওয়ালিউর (৯ মাস), জিয়াম (২ মাস), রায়হান (১১ মাস)। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: রাজিউল মজিদ জানান, প্রতিদিনই হাসপাতালের ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, কয়েক দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় উপজেলার জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। গতকাল সকাল থেকে ঠাণ্ডা বাতাসের সাথে হিমেল হাওয়া বইছে। এতে শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। ঘন কুয়াশায় দিনের অধিকাংশ সময় সূর্য দেখা যাচ্ছে না। হাড় কাঁপানো শীতে কাহিল হয়ে পড়ছে বৃদ্ধ, নর-নারী ও শিশু-কিশোর। নিউমোনিয়া, সার্দি, কাশি, জ্বর, আমাশায়সহ নানা শীতজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে শীতকাপড়ের চাহিদা বেড়ে গেছে। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে সিডর ও আইলাবিধ্বস্ত পায়রা পারের মেন্দিয়াবাদ গ্রামের মানুষ। লোকজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।
পিরোজপুর সংবাদদাতা জানান, শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে উপকূলের জনজীবন। গত বৃহস্পতিবার বৃষ্টি হওয়ায় শীতের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি হয়েছে। ঘন কুয়াশায় বেলা ১০-১১টা পর্যন্ত সূর্য ঢেকে থাকায় কনকনে শীতে জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন জেলেরা। বয়স্ক ও শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে। এ জন্য সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালে গত দুই দিনে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শীতের কারণে শনিবার এ অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম।
ভোলা সংবাদদাতা জানান, জেলার মনপুরায় তীব্র শীতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। তারা হলেনÑ সেরাজুল হক (৮৫), নুরুল হক (৭০) ও অভিনাশ নন্দি (৮৮)। শনিবার ভোরে উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরফয়েজ উদ্দিন ও মনপুরা ইউনিয়নে তাদের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া শীতজনিত রোগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে চার শিশু।
হাজিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান শাহরিয়ার চৌধুরী দ্বীপক জানান, শনিবার ভোর থেকে শীতের মাত্রা বাড়তে থাকে। ভোরে হাজিরহাট ও মনপুরা ইউনিয়নে তিন বৃদ্ধ মারা যান। তারা শীতে মারা গেছেন কি না তা তাদের পরিবার থেকে তা জানায়নি। ধারণা করা হচ্ছে শীতে এদের মৃত্যু হয়েছে। এ ব্যাপারে মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ হোসেন খান বলেন, মনপুরাজুড়ে তীব্র শীত বইছে। তবে তিনজন শীতে মারা গেছেন কি না তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আবহাওয়া অফিস জানায়, দুই দিন ধরে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। শীতের প্রকোপ আরো বাড়তে পারে।
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, গত বুধবারের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পর সাতক্ষীরায় শীত জেঁকে বসেছে। শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। কনকনে ঠাণ্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এসব রোগে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। গত তিন দিনে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৫০টি শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ১৩ মাস বয়সী শিশু জুঁইয়ের বাবা সদর উপজেলার ফয়জুল্লাহপুর গ্রামের আবদুল্লাহ জানান, হঠাৎ করে বেশি ঠাণ্ডা পড়ায় তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
সন্ধ্যার পরপরই শহরে লোক চলাচল কমে যাচ্ছে। দ্রুত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হাঁটবাজার। হঠাৎ প্রচণ্ড শীতে শ্রমজীবী মানুষের ভোগান্তি বেড়ে গেছে। শীতে বস্তির হতদরিদ্রদের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশুবিশেষজ্ঞ ডা: সামছুর রহমান জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে শিশুদের ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া হতে পারে।
দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, তিন দিন ধরে দিনাজপুরে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চলছে। উত্তরের হিমেল বাতাসের সাথে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে পথঘাট। কনকনে শীতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিনাজপুরের আকাশ কুয়াশার চাদরে ঢাকা মেঘাচ্ছন্ন, সারা দিনেও সূর্যের দেখা মিলেছে না। সব যানবাহন অনেক বেলা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। তীব্র শীতের কারণে হাটবাজার রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি কম। তীব্র শীতের কারণে দিনমজুর শ্রমিকদের জীবন জীবিকা থমকে গেছে।
ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা জানান, গত দুই দিনে জেলায় শীত জেঁকে বসেছে। শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ছিন্নমূল মানুষ এবং শিশু ও বৃদ্ধরা। ঘন কুয়াশায় জেলার বিভিন্ন সড়কে যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। তীব্র শীতে গ্রামাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। শীতবস্ত্রের দামও বেড়ে গেছে। বিভিন্ন সংগঠন, ব্যবসায়ী, দানশীল ব্যক্তি কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ করছে।
ঠাকুরগাঁওয়ে সরকারি আবহাওয়া অধিদফতর না থাকায় জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর শীতের তীব্রতা একটু বেশি অনুভূত হচ্ছে। এ মাসের শেষে কয়েকটি বড় ধরনের শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে।
ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সদর আধুনিক হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ঠাণ্ডাজনিত রোগে গড়ে প্রায় ৩০০ শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। সিভিল সার্জন ডা: নজরুল ইসলাম জানান, ঠাণ্ডাজনিত কারণে শিশুদের মধ্যে সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ (ব্রংকিউলাইটিস) নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। জেলা প্রশাসক মূকেশ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, হঠাৎ শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। সরকারের বরাদ্দকৃত শীতবস্ত্র ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। আরো কিছু চাহিদা অনুযায়ী পাঠানো হয়েছে।