বিয়ে মানুষের জীবনে একটি নতুন ধাপ। বিয়ে মানে দু’টি মনের ব্যবধানকে শূন্যে নিয়ে এসে সামাজিকভাবে একে অপরকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
আগের দিনে গুরুজনেরা কনে পছন্দ করতেন হাটা চলা, পড়ালেখা (কলমা জানা) গায়ের রঙ দেখার মাধ্যমে। দিন পাল্টেছে। এখন পাত্রপাত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতাই এখন বেশি প্রাধান্য দেয়। তারপরও মুখাবয়বের যত্ন সুন্দরই হোক না কেন হাসতে বা কথা বলতে গিয়ে যদি দেখা যায় বর বা কনের ভাঙ্গা দাঁত, ফাঁকা দাঁত, মুখে দুর্গন্ধ, কালো দাগযুক্ত দাঁত ইত্যাদি তাহলে উভয়ের পছন্দের মধ্যে ভাটা পড়তেই পারে। এ জন্য বিয়ের আগে বর-কনের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মুখের সুস্বাস্থ্যও নিশ্চিত করতে হবে।
যেমন বরের ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলো দেখা যায়-
১। ছেলেরা স্বভাবতই ধূমপান করে, ফলে দাঁতে কালো দাগ পড়ে। অতিরিক্ত কফি বা পানেও এটি হতে পারে। ২। মুখে দুর্গন্ধ থাকতে পারে।
৩। দাঁতে পাথর জমতে পারে। ৪। পানের দাগ থাকতে পারে। ৫। ভাঙ্গা দাঁতের উপস্থিতি। ৬। দাঁতে ক্যারিজ থাকতে পারে।
কনের বেলায় থাকতে পারে-
১। মাঢ়ি লালচে ও ফোলা ভাব। ২। মুখে দুর্গন্ধ।
৩। আঁকা-বাঁকা, ফাঁকা দাঁত থাকতে পারে।
৪। বিবর্ণ দাঁত।
উপরে উল্লিাখিত সমস্যাগুলো বর-কনে উভয়েরই থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে সমস্যা অনুযায়ী প্রতিকারও আছে যেমন-
১। ধূমপানসহ অতিরিক্ত চা-কফি ও পানের ফলে দাঁতে কালচে দাঁগের সৃষ্টি হয়। সে ক্ষেত্রে স্কেনিং, স্টেইন রিমুভিং ও পলিশিংয়ের মাধ্যমে অবাঞ্ছিত দাঁত দূর করতে হবে।
২। মুখের দুর্গন্ধের বিভিন্ন কারণ আছে। যেমন-
- কিছু খাবার আছে যা খেলে মুখে দুর্গন্ধ হয় যেমন বেশি মসলাদার খাবার, কাঁচা পেঁয়াজ, রসুন খাওয়া ইত্যাদি।
- অনেক দিন ধরে দাঁতে পাথর জমলে।
- মাঢ়িতে ইনফেকশন থাকলে।
- অনেক দিন ধরে ফুসফুসের ইনফেকশনে ভুগলে।
- সাইনোসাইটিস থাকলে।
- দাঁতে ক্যারিজ থাকলে।
- মুখে আলসার থাকলে।
- মুখে ফাঙ্গাশ ইনফেকশন থাকলে ইত্যাদি।
উপরিউক্ত সমস্যাগুলো যদি থেকে থাকে তবে তার যথাযথ চিকিৎসা ডেন্টাল সার্জনের মাধ্যমে করিয়ে নিতে হবে।
৩। দাঁতে পাথর জমলে অবশ্যই স্কেলিং পলিশিং করিয়ে নিতে হবে।
৪। দাঁতে পানের দাঁগসহ কঠিন কোনো দাগ থাকলে ব্লিচিং করিয়ে নেয়া যেতে পারে।
৫। মুখে ভাঙ্গা-ফাটা ক্ষয়ে যাওয়া দাঁত থাকলে ক্যাপ বা ক্রাউন করে নিলে হারানো সৌন্দর্য পুরোপুরি ফিরে পাওয়া সম্ভব।
৬। চোয়ালে কোথাও দাঁত না থাকলে ব্রিজের মাধ্যমে তা প্রতিস্থাপন করে নিতে হবে।
৭। দাঁতে ক্যারিজ থাকণে তার অবস্থান, বিস্তৃতি ও রোগের ইতিহাস জেনে দরকার হলে ঢ-ৎধু করে ফিলিং বা রুট ক্যানেল ক্যাপ করে দাঁতের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে হবে।
৮। সুন্দর চেহারা, গায়ের রঙ ভালো ত্বক সবই উপস্থিত কিন্তু হাসলেই দেখা যায় লাল টকটকে ফোলা মাঢ়ি তখন সবই মাঠে মারা যায়। এ ক্ষেত্রে মাঢ়ির চিকিৎসা করাতে হবে।
৯। আঁকা-বাঁকা ফাঁকা দাঁতের চিকিৎসা করাতে হবে। যেহেতু এই চিকিৎসা একটু ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ তাই বিয়ের কম পক্ষে এক দেড় বছর আগে থেকে এই চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
১০। অনেক রোগীই বলেন, ‘দিনে চারবার দাঁত ব্রাশ করি তবুও দাঁত হলুদ, নিষ্প্রাণ, আর কী করলে দাঁত সাদা চকচকে সুন্দর হবে।’ আসলে বিবর্ণ দাঁতের অনেক কারণ আছে। যেমন-
– আঘাতের ফলে সৃষ্ট বিবর্ণ দাঁত
– টেট্রাসাইক্লিন পিগমেন্টেশন
– জন্মগত কারণ ইত্যাদি।
সমস্যা ও রোগের ইতিহাস জেনে দাঁত পরীক্ষা করে বিবর্ণ দাঁতে বিভিন্ন রকম চিকিৎসা নেয়া যেতে পারে। যেমন লেমিনেটিং ফিলিং, ক্রাউন ইত্যাদি হতে পারে। এ ছাড়াও দঁতে ব্লিচ করা যেতে পারে। এতে দাঁত হবে ঝকঝকে সুন্দর সাদা। বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরীয়া রায়ের দাঁতও ছিল হলদেটে বিবর্ণ। যথাযথ চিকিৎসার পর এখন তার দাঁত সুন্দর।
১১। দাঁতে ব্যথা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে ব্যথার কারণ খুঁজে যথাযথ চিকিৎসা করাতে হবে।
১২। এ ছাড়াও হেপাটাইটিস, এইডস ইত্যাদি পরীক্ষা করে নেয়া যেতে পারে।
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। একে পরিপূর্ণ রাখতে সুস্থ দাঁত ও মাঢ়িও বাদ পড়ে না। বিয়ের আগে হবু দম্পত্তির শারীরিক সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি মুখের সুস্থতাও অত্যন্ত জরুরি। মুখের যেকোনো সমস্যায় যথাযথ চিকিৎসার জন্য অবশ্যই অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নিতে হবে। বছরে অন্তত দু’বার আপনার ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নিন।