হৃৎপিণ্ডের একটি ভাল্ভে ছিদ্র হয়েছিল ৫৯ বছর বয়সী রিচার্ড রিচের। তাঁর অবস্থা তখন এতটাই নাজুক যে ওপেন হার্ট সার্জারি করানোর সুযোগ নেই। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে রিচের হৃদ্যন্ত্রে স্থাপন করলেন একটি ‘বেলুনযন্ত্র’। এতে তাঁর অবস্থার উন্নতি হলো। পরে তিনি অস্ত্রোপচারের ধকল নেওয়ার মতো সুস্থও হয়ে ওঠেন।
হৃদ্যন্ত্রের মারাত্মক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহায়তায় ‘শেষ সুযোগ’ হিসেবে এই বেলুনপদ্ধতি ব্যবহার করেছেন যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ
হসপিটালের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা পরীক্ষামূলকভাবে আরও বেশি ব্যবহার করতে চান বেলুনযন্ত্রটি। আশা করা যায়, এতে হাজারো রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হবে।
নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত রিচের বাড়ি কেন্টে। ২০১৫ সালের জুনে তিনি মারাত্মক হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন। ফলে তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাসে জটিলতা তৈরি হয়। চিকিৎসকেরা দেখতে পান, তাঁর হৃদ্যন্ত্রের একটি ভাল্ভ ঠিকমতো কাজ করছিল না। এতে রক্তের উল্টো স্রোত তৈরি হয় এবং তাঁর হৃৎপিণ্ডে বাড়তি চাপ পড়ে। তখন প্রচলিত চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার করাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে চিকিৎসকেরা মিট্রা-স্পেসার নামের নতুন যন্ত্রটি (বেলুন) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন। যুক্তরাষ্ট্রে কার্ডিওসলিউশনস নামের একটি প্রতিষ্ঠান ওই বেলুনযন্ত্র তৈরি করে। এটি হৃৎপিণ্ডে স্থাপনের কয়েক দিন পরই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান রিচ। পাঁচ মাস পর তাঁর হৃদ্যন্ত্র অস্ত্রোপচারের উপযোগী হয়ে ওঠে। এরপর ভাল্ভ সারানোর জন্য প্রচলিত অস্ত্রোপচার করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক ওয়েন্ডলার। তিনি বলেন, ভাল্ভে ত্রুটিযুক্ত এ রকম রোগীদের চিকিৎসায় ভবিষ্যতে ওপেন হার্ট সার্জারির জায়গা নিয়ে নিতে পারে বেলুনযন্ত্রটি।
বেলুনটির আকার একটা ছোট মরিচের সমান। ‘কিহোল টেকনিক’ ব্যবহার করে বুকে এটি স্থাপন করা হয়। এতে বড় ধরনের কোনো অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয় না। ভাল্ভের ছিদ্রের স্থানে এটি বসানো হলে রক্তের উল্টো স্রোত বন্ধ হয়। রোগীর অবস্থা অনুযায়ী বিশেষ প্রক্রিয়ায় বাইরে থেকে বেলুনযন্ত্রটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের চিকিৎসা শাখার পরিচালক অধ্যাপক পিটার ওয়েইসবার্গ বলেন, বেলুনটির কাজের ধরন খুব সোজা। এটি ভাল্ভের ছিদ্র দিয়ে রক্ত পড়া কমায়। এতে হৃদ্যন্ত্র সেরে উঠে অস্ত্রোপচারের ধকল সামলানোর সামর্থ্য অর্জন করে। এ সময় চিকিৎসকেরাও রোগীকে পর্যবেক্ষণ এবং বিকল্প চিকিৎসা নিয়ে চিন্তাভাবনার সুযোগ পান।