স্নায়ুচাপে বিএনপি

0

BNPজাতীয় কাউন্সিল, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ দলের ভবিষ্যৎ রাজনীতির করণীয় নির্ধারণে স্নায়ুচাপে ভুগছে বিএনপি। আগামী ১৯ মার্চ দলটির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল রয়েছে। এজন্য প্রস্তুতিও চলছে। তবে এখন পর্যন্তও কাউন্সিলের জন্য উপযুক্ত ভেন্যু চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। দলটি তাদের আসন্ন কাউন্সিলের জন্য গত মাসেই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছিল। বিএনপির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেয়া হয়। জানা গেছে, নিরাপত্তা ও কাউন্সিলরদের জায়গা না হওয়ার চিন্তা থেকে দলটি সেখানে কাউন্সিল করতে চাইছে না। সর্বশেষ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিএনপির এমন সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর তাতে আপত্তি জানিয়ে বসুন্ধরা কনভেনশন কর্তৃপক্ষ একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়। সেখানে বলা হয়, বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে বিএনপির কাউন্সিল হবে এমন সিদ্ধান্তে তারা বিস্মিত। বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের কিছু বলা হয়নি। রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি পালনের জন্য বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার ভাড়া দেয়া হবে না বলেও জানানো হয়। এতেই বিপত্তিতে পড়ে বিএনপি। রোববার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, কাউন্সিলের জন্য এখনো ভেন্যু চূড়ান্ত হয়নি। ভেন্যু চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। তিনি এও জানান, নির্ধারিত সময়েই অর্থাৎ ১৯ মার্চ বিএনপির নির্ধারিত কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, নিরাপত্তা, পর্যাপ্ত জায়গাসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কাউন্সিলের জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত নতুন একটি ভেন্যু প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। নতুন ভেন্যুতেই দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী আহমেদ মানবকণ্ঠকে বলেন, আমরা যাতে সুষ্ঠুভাবে কাউন্সিল সম্পন্ন না করতে পারি তার চেষ্টা হচ্ছে। পর্দার আড়াল থেকে নানা ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হচ্ছে। তিনি বলেন, যতই ষড়যন্ত্র হোক বিএনপির কাউন্সিল নির্ধারিত সময়েই হবে। বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার বিএনপির পুনর্গঠন ও খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। কারণ তারা বিনা ভোটে জোর করে ক্ষমতায় রয়েছে। তাই তাদের ভয় বেশি। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বিএনপি কাউন্সিলের মাধ্যমে পুনর্গঠিত হয়ে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নতুন জাতীয় নির্বাচন আদায় করবে। বিএনপি নেতারা জানান, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাউন্সিল সম্পন্ন করতে উপকমিটিগুলো কাজ করছে। গঠনতন্ত্র সংশোধনের সুপারিশ তৈরি হচ্ছে। বিএনপির আসন্ন কাউন্সিলে চেয়ারপার্সন পদের মতো সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদেও সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। স্থায়ী কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এজন্য গঠনতন্ত্রের ১৯ ‘ক’ ধারায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী অনুমোদন করেছেন। ১৯ মার্চের কাউন্সিলের আগেই চেয়ারপার্সন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দীন সরকারকে এই কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়েছে। আর হারুন-আল-রশীদকে সদস্য ও মো. আমিনুল হককে সদস্যসচিব করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যথাসময়ে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণাসহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেবে। কাউন্সিলের পূর্বে অঙ্গসংগঠনের পুনর্গঠন আপাতত হচ্ছে না। ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার জের ধরে পদবঞ্চিতদের সহিংস বিক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ও মহানগর কমিটির পুনর্গঠনও কাউন্সিলের আগে পুরোপুরি শেষ হবে না। তবে কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিকে শক্তিশালী করে সাজানোর কাজ শুরু করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ইতিমধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে তরুণদের প্রাধান্য দেয়ার কথা তিনি দলের সিনিয়র নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন। জানা গেছে, তরুণদের সাংগঠনিক দায়িত্ব দেয়ার চিন্তা নিয়ে নেতাদের আমলনামা যাচাই-বাছাই করছেন তিনি। অনেকেই আবার পদপদবি পেতে লন্ডনে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন।
এদিকে কাউন্সিল প্রস্তুতির মধ্যেও বিএনপিকে নিতে হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি। পৌরসভা নির্বাচনের মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি অবশ্য দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করতে আপত্তির কথা নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে জানিয়েছে। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে দলটি। সেই প্রস্তুতিও নিচ্ছে। বিএনপির গুলশান কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, আজ বিএনপি চেয়ারপার্সনের পক্ষ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া সংক্রান্ত চিঠি নির্বাচন কমিশনকে দেয়া হবে। বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল সেই চিঠি নিয়ে যাবে। সূত্র জানায়, চূড়ান্তভাবে দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রে চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহানকে দায়িত্ব দেয়া হবে। আর এলাকাভিত্তিক দলের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনীত করবেন সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা। স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের সুপারিশের আলোকে কেন্দ্র থেকে দেয়া হবে চূড়ান্ত চিঠি। আগামী ২২ মার্চ ৭৫২টি ইউনিয়ন পরিষদে একযোগে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, কাউন্সিল ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ হলেও নতুন জাতীয় নির্বাচন আদায়ের দাবিতে নতুন কর্মকৌশল নির্ধারণ করে দাবি আদায়ে মাঠে নামবে বিএনপি। জানা গেছে, দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসন ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আদায় করাই বিএনপির লক্ষ্য। এজন্য সংলাপ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিজেদের অনুকূলে রেখেই দলটি তাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির কর্মকৌশল নির্ধারণ করবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More