ধরুন, বাংলাদেশী একটা কোম্পানী আমেরিকা বা ভারতে টেলকমের ব্যবসা করে। সেই দেশ কি সিম রেজিস্ট্রেশনের জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্টের অনুমতি দিবে? উত্তর অবশ্যই না।
কিন্তু বাংলাদেশ দিচ্ছে, কেন দিচ্ছে? উত্তর আসবে সন্ত্রাস ইস্যু। গ্রেট মেনে নিলাম কিন্তু ন্যাশনাল ইস্যু কি প্রাইভেট কোম্পানী দিয়ে করা যায়? উত্তর না। কিন্তু এটা এখন হচ্ছে!!
রাস্ট্র একটি সামাজিক চুক্তির প্রতিষ্ঠান যা আইন ও বিধান দ্বারা পরিচালিত হয়। যদি সেটাই রাস্ট্রের সংজ্ঞা হয় তাহলে রাস্ট্র কি মানুষের অধিকার বিরোধী কোন আইন করতে পারে? উত্তর হল, আইনের বেসিক হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকার বিরোধী কোন আইন তৈরী হতে পারে না। তাহলে ব্যক্তির গোপনীয়তা যখন মৌলিক অধিকার তখন কোন আইন বলে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম রেজিস্ট্রেশন হবে?
এখন প্রশ্ন আসতে পারে রাস্ট্র কি ন্যাশনাল ডেটাবেজ করতে পারেন? উত্তর অবশ্যই তবে তা রাস্ট্রীয় নিরাপত্তার আন্ডারে হতে হবে। সেক্ষেত্রে কোন বেসরকারী এবং বিদেশী কোম্পানীর এই অধিকার যে নাই তা সাধারন ভাবেই বলা যেতে পারে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষনার অনুচ্ছেদ-৩ এ বলা হয়েছে ‘প্রত্যেকেরই জীবন-ধারণ, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে৷’ তাহলে একটা সাধারন মোবাইল সিম কেনা আমার অধিকার এই অধিকারের জন্য আমার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লংঘন করার কোন অধিকার কি আছে? উল্লেখ্য বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষনাপত্রের সাক্ষরকারী দেশ।
বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে প্রাইভেসি রাইটস বা ব্যক্তির তথ্য সুরক্ষা ও গোপনীয়তা মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইনের দ্বারা আরোপিত বিধিনিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের যোগাযোগের উপায়ের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার থাকবে।তাহলে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে কি সংবিধান লংঘন করা হচ্ছে না?
২০১২ সালে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয় গুগলকে যারা অ্যাপলের সাফারি ব্রাউজারের প্রাইভেসি সেটিংস এড়িয়ে ব্যবহারকারীদের ওপর গোপনে নজরদারি করার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিল।
আর কি মজার কথা, আমরা মোবাইল কোম্পানীকেই স্বেচ্ছায় দিয়ে দিচ্ছি দেশের নাগরকিদের ব্যক্তিগত তথ্যাদি। আসলে সরকারী নীতি নির্ধারকরা কি ভেবে দেখেছেন এই গুলি?
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, মানবাধিকার, জাতীয় নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মোবাইল সিম রেজিস্ট্রেশনের কি আর কোন পথ নেই?ভাবুন প্লিজ। (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)