চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে আজ রোববার চট্টগ্রামের ৭ টি উপজেলায় ভোট কেন্দ্র দখল, ভাঙচুর, হামলা, নির্বাচন বর্জন ও ব্যালট বাক্স লুটের মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে ভোট গণনা। সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোটাররা তাঁদের পছন্দের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে ভোট দিয়েছেন।
আজ চট্টগ্রামের যেসব উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেগুলো হল – আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, ফটিকছড়ি এবং রাউজান।
সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকেই আনোয়ারা, ফটিকছড়ি ও সাতকানিয়ার উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্রের সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব বিস্তার, কেন্দ্র দখল ব্যালট পেপার ছিনতাই, জালভোট প্রদানসহ হামলায় কয়েকজন আহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।
আনোয়ারায় ভোট কেন্দ্র দখলের অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করেছেন বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জালাল উদ্দিন আহমদ (কাপ পিরিচ)। তিনি স্থানীয় সাংসদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনের কাছে পুননির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।
আজ দুপুর আড়াইটার দিকে নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে জালাল উদ্দিন বলেন, সরকার দলীয় সাংসদ ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জমান চৌধুরীর প্রত্যক্ষ মদদে দলীয় সন্ত্রাসীরা ভোট গ্রহণ শুরুর পর সাড়ে ১২টার মধ্যে উপজেলার মোট ৬৬ টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ২৭ টি কেন্দ্র দখল করে তার নির্বাচনী এজেন্টদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, “এ বিষয়ে আমি রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদেরকে বারবার অবহিত করলেও তারা কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। তাদের অসহযোগিতার কারণে সন্ত্রাসীরা চর দখলের মত করে ভোটকেন্দ্র দখল করে নেয়। তাই আমি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বাধ্য হয়েছি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের মীর্জাখিল লক্ষীবিবি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন গুলি চালিয়ে ভোট কেন্দ্র দখল করেছে। এ সময় ৪ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৭ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে দু জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলো সামশুল আলম ও সাইফুল। সোনাকানিয়ার সাতটি কেন্দ্র তারা দখলে নিয়ে জালভোট প্রদান করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কাঞ্চনা ইউনিয়নের ৬টি কেন্দ্র দখল করেছে। উত্তর কাঞ্চনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৯টার দিকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ কর্মীরা কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ইচ্ছামত ভোট প্রদান করছে বলে অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার গোলাম মুস্তফা।
তিনি সিটিজি নিউজকে জানান, মাত্র ৩ জন পুলিশ রয়েছে কেন্দ্রে। তাদের এবং আমাদের জিম্মি করে। সন্ত্রাসীরা ইচ্ছামত ভোট দিচ্ছে তাদের প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিত নূরুল আবছার চৌধুরী (কাপ-পিরিচ) কে ভোট দিচ্ছে। কেন্দ্রের বেশ কিছু ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়েছে তারা।
ফটিকছড়ি উপজেলার বাবু নগর বোর্ড স্কুল, রোসাঙ্গিরী আহমদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, হেয়াঁকো সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চিকনছড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পুরানগড় সরকারী স্কুল কেন্দ্র দখল করেছে সরকার সমর্থক তৌহিদুল আলমের সমর্থকরা। এসব অভিযোগ করেছেন বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী।
এছাড়া বাশঁখালীর বড়ঘোনা এলাকার ৮ নং কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট প্রদান ও ইলশা এলাকায় ভোট কেন্দ্র দখল নিয়ে গুলাগুলির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ প্রতিটি কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ ও আনসারের ১৮ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও বিভিন্ন কেন্দ্রে মাত্র কয়েকজন পুলিশ দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
জেলা রির্টানিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে র্যাব, এপিবিএন সদস্যরা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছে। সব মিলে প্রায় ১২ হাজারের মতো আইন শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন বলে ।
আজ চতুর্থ দফায় জেলার যে ৭টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, ফটিকছড়ি এবং রাউজানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচন চলাকালে এই সাত উপজেলার আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নামানো হয়েছে সেনা বাহিনী ও বিজিবিকে।
জেলা নির্বাচন অফিসার খোরশেদ আলম সিটিজি নিউজকে বলেন, চট্টগ্রামের সাত উপজেলার ৬৬৬ টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর ভোট গ্রহণে কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছেন ১৪ হাজার ২২৭ জন কর্মকর্তা।