জনপ্রিয় অভিনেত্রী তিনি। ছোট বড় দুটি পর্দাতেই রয়েছে তাঁর সফল বিচরণ। পাশাপাশি তিনি নিজেও লিখেছেন নাটক। ভূতে ভীষণ ভয় তাঁর! নিজেকে ভীষণ রাগী ভাবেন। তিনি চান দারিদ্র্য পীড়িত মানুষের জন্য কিছু করে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে। তিনি রিচি সোলায়মান। মনেরখবরের সাথে আলাপচারিতায় তিনি বলেছেন মনের কথা, ভালোলাগার কথা, স্বপ্নের কথা, আকাঙ্ক্ষার কথা, বিশ্বাসের কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মদ মামুন।
মখ : কেমন আছেন?উত্তর : জ্বী, ভালো আছি।মখ : ভালো থাকার জন্য কি করেন?
উত্তর : ভালো থাকার জন্য কাজ করি। বিশ্বাস করি কর্মেই মুক্তি। কাজ করলে ভালো থাকি অথবা ভালো থাকতে কাজ করি। এছাড়া বেড়ালে ভালো থাকি, বন্ধুদের সাথে সময় কাটালে ভালো থাকি।
মখ : কোথায় বেড়াতে পছন্দ করেন? সাগরে নাকি পাহাড়ে?উত্তর : সুন্দর যেকোনো জায়গাতেই। এখন অবশ্য হাজব্যান্ডের সূত্রে ইউএসএ-এর বিভিন্ন জায়গায় বেড়ানো বেশি হয়।মখ : মন খারাপ হয়?উত্তর : হ্যাঁ, মন খারাপ হয়। অনেক মন খারাপ হয়। অনেক কিছু নিয়ে মন খারাপ হয়।মখ : মন খারাপ হলে কি করেন?উত্তর : তখন নামাজ পড়ি, মেডিটেশন করি।
মখ : ভাগ্যে বিশ্বাস করেন?উত্তর : করি, ভাগ্য অবশ্যই বড় একটা বিষয়। তবে আমি কর্মও বিশ্বাস করি। মনেকরি কর্ম ভাগ্য সবকিছু মিলিয়েই আসলে ষোল আনা।মখ : রাগ হয়?উত্তর : রাগ হয়, আমার অনেক বেশি রাগ। আর দিন যতো যাচ্ছে রাগের মাত্রাটা তত বেড়ে যাচ্ছে।মখ : রাগ নিয়ন্ত্রণ করেন কিভাবে?
উত্তর : আমার রাগ এমনিতেই বেশি সময় থাকে না, একটু পর রাগটা এমনিতেই থেমে যায়। হয়তো কারো উপর রাগ করলাম বকা দিলাম, একটু পর অনুশোচনা হয়। মনে হয় কেন আমি এমন ব্যবহার করলাম। তখন সাথে সাথে চেষ্টা করি তার সাথে একটু ভালো ব্যবহার করার।
মখ : হিংসা হয়?উত্তর : না, হিংসা হয় না।মখ : আকাঙ্ক্ষা?
উত্তর : হ্যাঁ, আকাঙ্ক্ষা তো কিছু থাকেই। কখনও ছোটবেলায় পড়া রূপকথার গল্পের মতো রাণী হতে ইচ্ছে করে, রাজকুমারী হতে ইচ্ছে করে। তবে জীবনে যতটুকু পেয়েছি বা যতটুকু এসেছি তাতে সবসময় আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া জানাই। আজকে একটি নিরাপদ বাড়িতে থাকতে পারছি, খাওয়ার নিশ্চয়তা পাচ্ছি, কিছু মানুষ আমাকে চেনে। এগুলো আমার নাও থাকতে পারতো। ফুটপাথে ঘুমিয়ে থাকা আমারই বয়সী একটা মেয়ের জায়গায় আমার জীবন হতে পারতো। তা হয়নি।
মখ : অভিনেত্রী না হলে কি হতেন?উত্তর : অভিনেত্রী না হলে লইয়ার হতাম।মখ : জীবনের মানে কি?উত্তর : আমার কাছে জীবনের মানে হলো শান্তিতে থাকা।মখ : সুন্দরের সংজ্ঞা কি?উত্তর : পরিষ্কার মন।মখ : ভূতে ভয় পান?উত্তর : অনেক ভয় পাই। একা একা ঘুমাতেই পারি না।মখ : সফল অভিনেত্রী হিসাবে আপনার ব্যস্ততাও অনেক। চাপ সামলান কিভাবে?
উত্তর : মানসিক শক্তি দিয়ে। যেকোনো ক্রাইসিস যেকোনো সমস্যা মনের শক্তি দিয়ে চেষ্টা করি সেটার সাথে মোকাবেলা করতে। আর যেটা করি সেটা হচ্ছে, সবসময় সৃষ্টিকর্তাকে ডাকি, সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য চাই।
মখ : ধরুন আপনার মন খারাপ তখন হাসির অভিনয় করতে হবে। এটা সম্ভব করেন কিভাবে?
উত্তর : এমন পরিস্থিতিতে ভীষণ একটা মানসিক চাপ কাজ করে। মনে হয় আমি কোনো মানুষ না, একটা রোবট। হয়তো কোনো একটা সমস্যা হয়েছে এদিকে আম্মু ফোন দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমি কাজে। তখন আমার মধ্যে দুইটা জিনিষ কাজ করে। এক, ওদিকে আমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। দুই, এদিকে আমার কাজ শেষ করতে হবে। তখন চেষ্টা করি তাড়াতাড়ি কাজটা শেষ করতে, কাজের মনোযোগ বেড়ে যায়। হয়তো এখানে আর দশটা মানুষের থেকে আমরা একটু আলাদা। কারণ আমরা আমাদের ফোকাসগুলোতে আলাদা আলাদা ভাবে মনোযোগ দিতে পারি।
মখ : সফল অভিনেত্রী হিসেবে আপনার সাফল্যের গোপন রহস্য কি?
উত্তর : কতটুকু সফল আমি হয়েছি সেটা জানিনা। তবে যতটুকুই এগুতে পেরেছি তা সম্ভব হয়েছে আমার দায়িত্বশীলতা এবং কাজের প্রতি মনোযোগ। যখন অভিনয় শুরু করি তখন নাম নিয়ে সেভাবে ভাবিনি। কাজটা মনোযোগের সাথে করে গেছি শুধু। সাফল্য বলতে আমি বুঝি সিনসিয়ারিটি, রেসপনসিবলিটি ও ডেডিকেশন। তাছাড়া নিজেকে এখনও আমি সফল মানুষ হিসেবে দেখতে পাই না। যেদিন আমার আব্বুর নামে করা “সোলায়মান ফাউন্ডেশন” কে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে পারব সেদিন নিজেকে সফল মানুষ হিসবে দাবী করব। আমার এলাকার দরিদ্র মানুষদের উন্নয়নে আব্বুর যে ইচ্ছা যে স্বপ্ন ছিল সেটি যেদিন পূরণ করতে পারব সেদিনই বুঝবো আমি সফল।
মখ : আপনার জীবনে মানসিক শক্তির প্রভাব কতটুকু?
উত্তর : অনেক বেশি। মানসিক শক্তিটার কারণেই আমি বেঁচে আছি। আরো অনেকের মতো আমার জীবনের উপর দিয়েও অনেক ঝড় গিয়েছে। সেসব প্রতিকূল সময়ে নিজের মানসিক শক্তি ও বন্ধু শুভাকাঙ্ক্ষীদের মানসিক সাপোর্টই ছিল আমার প্রধান সহায়ক।
মখ : মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়েছেন কখনও?উত্তর : হয়েছি। কিছুদিন ডিপ্রেশনে ভুগেছি।মখ : ভবিষ্যতের স্বপ্ন কি?
উত্তর : আমার এলাকায় অর্থাৎ রংপুরে আমার বাবার নামে একটা ফাউন্ডেশন করেছি। আসলে আমার এলাকার মানুষ খুব গরীব। বছরে একবার কোরবানী ঈদে তারা মাংস খেতে পায়। আমি এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ফান্ড সংগ্রহ করে ঐ অঞ্চলের একদম গরীব যারা আছে তাদের একটা মুদির দোকান দিয়ে দেয়া, কারো বিয়ে দিয়ে দেয়া, বাচ্চাদের পড়ানো ইত্যাদি করতে চেষ্টা করি। ভবিষ্যতে আমার একটাই চাওয়া এটাকে আমি বড় আকারে দেখতে চাই।
মখ : সবশেষে নিজের মন নিয়ে কিছু বলুন।
উত্তর : নিজের মনের ব্যাপারে যদি বলি তাহলে আমি এতটুকুই চাই আমার স্বামীর আমার মা’র আমার সন্তানের আমার ভাই আমার ফ্যামিলি সবাই সুস্থ থাকুক ভালো থাকুক। খুব বেশি করে যেটা চাই সেটা হচ্ছে আমার স্বামী সবসময়ই এমন ভালো মানুষ হয়ে থাকুক আর আমার সন্তান যেন একজন পূণ্যবান সন্তান হয়।
মখ : মনেরখবরে সময় দেয়ার জন্য পাঠকদের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।উত্তর : ধন্যবাদ মনেরখবরের সকলকে।