বাবা ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে একটু অপেক্ষা করতে বলে আজ মঙ্গলবার বিকেলে একটু বাইরে যান ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম। কিন্তু সেই অপেক্ষা আর কখনো শেষ হবে না।
রাশেদুল (৩৭) চলে গেছেন না ফেরার দেশে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলার নুরুর দোকান এলাকায় একটি বাসের চাপায় অকালেই প্রাণ হারিয়েছেন এই সরকারি কর্মকর্তা। এ সময় সোহাগ নামের একজন চেইনম্যান আহত হন।
রাশেদুলকে হারিয়ে তাঁর বাবা গিয়াসউদ্দিন মাস্টার, স্ত্রী আকিফা বিনতে জলিল, শ্যালক হাফেজ শরীফুলসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। স্ত্রী ও বাবা বারবার মূর্চ্ছা যান। প্রশাসনের কর্মকর্তা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার লোহাগাছা গ্রামের গিয়াসউদ্দিন মাস্টারের ছেলে ইউএনও রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে বরগুনার বেতাগী উপজেলার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি আবদুল জলিলের মেয়ে আকিফা বিনতে জলিলের বিয়ে হয়। তাঁদের কোনো সন্তান নেই।
ইউএনও রাশেদুল ইসলামের শ্যালক হাফেজ শরীফুল জানান, গত সোমবার দুই পরিবারের লোকজন ত্রিশালে বেড়াতে আসেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে তাঁদের ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। বিকেলে অফিস শেষে ইউএনও বাসায় এলে তাঁরা ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ সময় ইউএনও সরকারি কাজে বাইরে যাচ্ছেন জানিয়ে তাঁদের একটু অপেক্ষা করতে বলেন। কিছুক্ষণ পর ইউএনওর গাড়ির চালক গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে দ্রুত বেগে বেরিয়ে গেলে তাঁদের সন্দেহ হয়। এরপর তাঁরা ইউএনওর মোবাইলে ফোন করলে অপরিচিত এক ব্যক্তি ফোনটি রিসিভ করেন এবং তাঁদের দুসংবাদটি জানান। পরে তাঁরা হাসপাতালে ছুটে এসে রাশেদুলকে মৃত দেখতে পান।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, আজ বিকেলে নুরুর দোকান এলাকায় চেইনম্যান সোহাগকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে জমি মাপতে গিয়েছিলেন ইউএনও রাশেদুল ইসলাম। সেখান থেকে ফেরার সময় তাঁরা যখন সড়কে ওঠেন তখন দ্রুতগামী একটি লোকাল বাস তাঁদের চাপা দেয়। এতে ইউএনও রাশেদুল ও চেইনম্যান সোহাগ আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে চুরখাই উইনাড়পাড় এলাকায় কমিউনিটি বেইজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিবিএমসি) নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দুজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসা কর্মকর্তা নুরুন্নবী সিদ্দিকী জানান, রাশেদুল ইসলামকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। আহত অন্যজনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ওসি জানান, ময়মনসিংহ-ত্রিশাল পথে চলাচলকারী ‘পদ্মা গেইটলক’ নামের বাসটিকে আটক করা হয়েছে। তবে পালিয়ে যাওয়ায় চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ইউএনওর নিহত হওয়ার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার জি এম সালেহউদ্দিন, পুলিশের উপমহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, জেলা প্রশাসক মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী, ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মঈনুল হকসহ সরকারি কর্মকর্তারা।