কুড়িগ্রাম : মামাতো ভাইয়ের মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের চাচাতো ভাই দাতাউর রহমানের (২৬)। আর সে কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
রোববার দুপুরে রৌমারী সীমান্তের আন্তর্জাতিক পিলার নম্বর-১০৭২ এর কাছে জিঞ্জিরাম নদীর পাড়ে একটি বাঁশ বাগান থেকে দাতাউর রহমানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
রৌমারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান বাংলামেইলকে জানান, দুর্বৃত্তরা দাতাউর রহমানকে হত্যা করে জঙ্গলে লাশ ঝুলিয়ে রাখে বলে ধারণা করছেন তারা। কারণ লাশ থেকে ২শ দূরে দুই ধরনের দুটি স্যান্ডেল, কয়েকটি পরিত্যক্ত ব্লেড, সিগারেটের প্যাকেট ও সিগারেটে মোড়া পোড়া মবিলের জেরিকেন পাওয়া গেছে। এছাড়াও ঘটনাস্থলে ধস্তাধস্তির আলামত পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, লাশের শরীরে পোড়া মবিল লাগিয়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এতে বোঝা যাচ্ছে, এক স্থানে হত্যার পর অন্য স্থানে লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার জন্য দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে স্বজনরা জানিয়েছেন, মামাতো ভাইয়ের মেয়ের সঙ্গে নিহত দাতাউর রহমানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্বও চলছিল। সম্পর্ক মেনে না নিলে তিনি আত্মহত্যারও হুমকি দেন।
রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম সাজেদুল ইসলাম জানান, সুরতহাল প্রতিবেদনে লাশে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। গলার দাগও বোঝা যাচ্ছে না। কাজেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার বিষয়টি সন্দেহজনক।
যাদুরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী জানান, রৌমারীর লাঠিয়ালডাঙ্গা গ্রামের আব্দুস সামাদের তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে দাতাউর সবার বড়। রোববার সকালে জিঞ্জিরাম নদীর পাড়ে বাঁশ বাগানে ঝুলন্ত লাশ দেখে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দেয়। পরে রৌমারী থানার এসআই মশিউর রহমান ও এসআই আতাউর রহমান লাশ উদ্ধার এবং আলামত সংগ্রহ করে।
রৌমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো জানান, নিহত দাতাউর সহজ সরল প্রকৃতির ছিলেন। তিনি কৃষি কাজ করতেন।
তবে নিহতের মামা আবুল হাসেম ও খালু নজরুল ইসলাম জানান, শনিবার বিকেলে মা হনুফা বেগমের সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় দাতাউর। যাওয়ার সময় আত্মহত্যা করারও হুমকি দেয় সে। মামাতো ভাই আনোয়ারের স্কুল পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে দাতাউরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি নিয়ে দুই পরিবার মেনে নেয়নি। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল।
নিহতের মা হনুফা বেগম জানান, দাতাউর যেখানে যাক প্রতিদিন রাত ১০টার দিকে বাড়িতে ভাত খেতে আসতো। ঘটনার রাতে সে বালিয়ামারী বাজারে একটি চায়ের দোকানে টিভি দেখছিল। এরপর বালিয়ামারী বাজার সংলগ্ন নিজেদের অপর একটি বাড়িতে চাচাতো ভাই সাদ্দামকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিল। এরপর কি হয়েছে তা আর কেউ বলতে পারছে না।
নিহতের বাবা আব্দুস সামাদ জানান, মামাতো ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিল দাতাউর। কিন্তু পরিবার থেকে সেটা মেনে নেয়া হয়নি।
তবে এলাকাবাসী জানান, মামা বাড়ির সম্পত্তি নিয়েও দাতাউরের পরিবারের সঙ্গে মামাদের দ্বন্দ্ব ছিল।
এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে আগ্রহী না হওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।