খালেদা জিয়া মনোযোগ দিচ্ছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির কার্যক্রমের দিকে

0

BNPকেন্দ্রীয় কাউন্সিল নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার পর এবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মনোযোগ দিচ্ছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সার্বিক কার্যক্রমের দিকে। মহানগরের ৪৯টি থানার ২৪টিতেই বিএনপির কোনো কমিটি নেই। ফলে নেতাকর্মীরা নেতৃত্বহীন, নিয়ন্ত্রণহীন ও অসংগঠিত হয়ে পড়েছেন। নানা গ্রুপে বিভক্ত তারা। কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের কমিটি ঘোষণার পরপরই তাই চেয়ারপারসন ঢেলে সাজাবেন বিএনপির ঢাকা মহানগর শাখাকে। দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এর ফলে মহানগর শাখার আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস কারাগারে এবং সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল আত্মগোপনে থাকায় সৃষ্ট সংকট থেকে বেরিয়ে আসা যাবে। বর্তমানে মহানগরের দায়িত্ব পালনকারী নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের আন্তরিকতা থাকলেও নেতৃত্বের সংকট পূরণ করার জন্য তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন তারা।

মহানগর কমিটির সাম্প্রতিক অবস্থাঃ সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক করে ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি করা হয়। নতুন উদ্যমে পুনর্গঠন কাজও শুরু হয়।

কিন্তু ওয়ার্ডগুলোর কমিটি পুনর্গঠনের পর থানা কমিটি ঢেলে সাজানোর আগেই ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি ‘লাগাতার অবরোধ’ শুরু করে, যা নিয়ে জনমনেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নাশকতার কয়েকটি মামলা মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান মির্জা আব্বাস ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। এ বছরের ৬ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয় মির্জা আব্বাসকে। এ অবস্থায় ঢাকা মহানগরের অভিভাবকত্ব করছেন দলের স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ও মহানগর কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

অন্যদিকে দল ও মহানগরে মির্জা আব্বাসের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত মহানগরের সাবেক আহ্বায়ক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার সমর্থক নেতা-সংগঠকরাও নিজ বলয়ের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। খোকা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ঢাকায় খোকা বলয়ের প্রতিনিধিত্ব করছেন বিএনপির অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক ও খোকার নেতৃত্বাধীন অধুনাবিলুপ্ত মহানগর কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালাম। খালেদা জিয়ার প্রত্যক্ষ তদারকিতে মহানগর বিএনপিতে এবার আমূল পরিবর্তন আসতে পারে। তিনি মহানগর বিএনপিকে উত্তর ও দক্ষিণ এ দুটি ভাগে ভাগ করে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছেন কয়েক নেতা।

এর মধ্যেই আব্বাস ও খোকা গ্রুপের মধ্যে তাই ওই দুই পৃথক কমিটিতে নিজেদের লোকদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর জোরদার কিন্তু নীরব তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে।

কমিটিবিহীন থানায় বিএনপি :ঢাকা মহানগরের ২৪টি থানা বিএনপির কমিটি নেই। এগুলোতে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমও স্থবির। কমিটিবিহীন থানাগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পল্লবী থানায় বিএনপির সাবেক কাউন্সিলর আহসান উল্লাহ হাসান, তানভীর আহমেদ মোল্লা ও আলী ইমাম আসাদ প্রায় অর্ধশত মামলা নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। বর্তমানে সক্রিয় রয়েছেন আলতাফ মোল্লা, মোয়াজ্জেম হোসেন, কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন, নুরুল হক, বশির উদ্দিন প্রমুখ। এ নেতারাও বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত।

রূপনগর থানায় নেতাকর্মীদের আগলে রাখছেন আশরাফুল আলম ও হাবিবুর রহমান হাবিব। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উত্তরা পূর্ব থানায় বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় নেতা এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ।

এ ছাড়া আবদুস সালাম সরকার, মনির হোসেন ও তাজুল ইসলামকে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায়। দক্ষিণখান থানায় সক্রিয় রয়েছেন ইসমাইল হোসেন, শাহাবুদ্দিন, মোতালেব হোসেন রতন প্রমুখ।

উত্তরখান থানায় মমতাজ উদ্দিন, সপুর উদ্দিন মৃধা ও জাহাঙ্গীর আলমকে বিভিন্ন সময়ে সক্রিয় দেখা গেছে। উত্তরা পশ্চিম থানায় সক্রিয় রয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম জাকির, আফাজ উদ্দিন, মোস্তফা কামাল প্রমুখ। বিমানবন্দর থানায় নাসির উদ্দিন, নাজমুল আলম, আতাউর, তুরাগ থানায় আতিকুর রহমান, আবদুল বাতেন ও আবু তাহেরকে বিভিন্ন সময়ে মাঠে দেখা গেছে।

তেজগাঁও, শেরে বাংলা নগর ও শিল্পাঞ্চল_ এ তিন থানায় বিএনপির সাবেক কাউন্সিলর আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার পাশাপাশি তেজগাঁও থানায় জামাল আহম্মেদ ও সিরাজুল ইসলাম, শেরে বাংলা নগর থানায় আফতাব উদ্দিন জসিম, শাহ আলম, ফখরুল ইসলাম রবিন এবং শিল্পাঞ্চল থানায় জাহাঙ্গীর আলম, আইনুল ইসলামকেও সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে।

ডেমরা-যাত্রাবাড়ী থানায় ১৯৯৩ সালে নবী উল্লাহ নবীকে সভাপতি ও আতিকুল্লাহকে সাধারণ সম্পাদক করে ডেমরা থানা কমিটি গঠিত হয়। পরে ডেমরা থানা ভেঙে ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী থানা হয়। এরপর ডেমরা থানা বিএনপি নেতারা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েন।

একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক এমপি সালাহ উদ্দিন আহমেদের ছেলে তানভীর আহমেদ রবিন। অপর একটি গ্রুপটির নেতৃত্বে রয়েছেন জয়নাল আবেদীন রতন চেয়ারম্যান। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী তৃণমূল দলের নেতা আকবর হোসেন ভূঁইয়া নান্টুও পৃথক একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী থানায় সালাহ উদ্দিন আহমেদ, নবী উল্লাহ নবী, আতিকুল্লাহসহ নেতারা বিভিন্ন বলয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০১২ সালে লালবাগ থানাকে ভেঙে লালবাগ ও চকবাজার থানা করা হয়। এরপর এ দুই থানায় কোনো কমিটি হয়নি। লালবাগ থানায় সাবেক কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন খোকন, আশরাফ আলী আজম এবং চকবাজার থানায় সাবেক কাউন্সিলর আজিজ উল্লাহ আজিজ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, আনোয়ার পারভেজ বাদল, রফিকুল ইসলাম রাসেল ; আনোয়ারুল হক ভাইয়া রনি দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন। ক্যান্টনমেন্ট থানায় থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ লিয়াকত আলী, স্থানীয় নেতা আবদুর রশিদ ও নূরুল আমিন মৃধাকে কর্মসূচিতে দেখা যায়।

খিলক্ষেত থানায় হাজি এসএম ফজলুল হক; শাহআলী থানায় সাবেক কাউন্সিলর ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, শেখ সাইফুল হক, কায়সার আহমেদ পাপ্পু; বংশাল-কোতোয়ালি থানায় মাঠে সক্রিয় রয়েছেন লতিফ উল্লাহ জাফরু, তাজ উদ্দিন তাইজু, আশরাফুল আমীন ;ইমরান নাহিদ; আদাবর থানায় আবুল হাসেম, আখতারুজ্জামান, লুৎফর রহমান ডিপটি; মিরপুর থানায় সাবেক কাউন্সিলর মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জু, দেলোয়ার হোসেন দুলু, হাজি আবদুল মতিন; দারুসসালাম থানায় সাবেক কাউন্সিলর মাসুদ খান, ইকবাল হোসেন চৌধুরী, হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা সক্রিয় রয়েছেন। মোহাম্মদপুর থানায় বিএনপির কেন্দ্রীয় যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নেতৃত্বে স্থানীয় নেতাকর্মীরা সক্রিয় রয়েছেন। এ থানায় সাবেক কাউন্সিলর আতিকুল ইসলাম মতিন, ওসমান গনি শাহজাহান, এনায়েতুল হাফিজ, সাহাবুদ্দিন মুন্না ও এমএস আহম্মদ আলীও বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। বনানী থানায় সাবেক কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মীরা মাঠপর্যায়ে সক্রিয় আছেন। তাদের মধ্যে কে বা কারা খালেদা জিয়ার মনোনয়নে ভবিষ্যতে উঠে আসবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More