ঢাকা: আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মা মাহমুদা বেগম তার ছেলের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করেন তিনি। তিন বছর ধরে কারারুদ্ধ মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আমার দেশ পরিবার। বক্তব্যের শুরুতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
মাহমুদুর রহমানের মা মাহমুদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি সমস্ত জীবন অধ্যাপনা করে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। জীবনের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কখনও ভাবতে পারিনি যে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা এমনই এক পরিস্থিতিতে পৌঁছাবে যখন প্রায় অন্তিমে এসে আমাকে সংবাদ সম্মেলন করতে হবে। বিগত ৭ বছর ধরে অব্যাহত জুলুম সহ্য করে আমি একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে কেঁদেছি।’
মাহমুদা বেগম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার সবিনয় নিবেদন যে, আপনার ব্যক্তিগত জিঘাংসা যদি আমার ছেলেকে এই দীর্ঘদিন জেলে আটক রেখেও পরিতৃপ্ত না হয়ে থাকে তাহলে আমাকে জেলে নেয়ার বিনিময়ে আমার নিরাপরাধ সন্তানকে মুক্তি দিন।” তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কার্যত বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাশালী সরকার প্রধান। তার নির্দেশ ও ইশারা-ইঙ্গিতেই রাষ্ট্রের সব কিছু পরিচালিত হচ্ছে। তিনি চাইলেই আমাকে কারাগারে নিয়ে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দিতে পারেন।’
মাহমুদুর রহমানের মা বলেন, ‘আজ সকালে কাশিমপুর কারাগারে আমি আমার ছেলের সাথে সাক্ষাৎ করে এসেছি। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে তার শরীরের ওজন ১০ কেজি কমে গেছে। ডান কাঁধের ব্যথায় সে রাতের পর রাত ঘুমাতে পারে না। বিনা চিকিৎসায় জেলে কোনোক্রমে জীবন ধারণ করে আছে। আদালতে আনলে তার ভেঙ্গে যাওয়া শরীর বোধহয় আপনাদেরও নজরে আসে।
মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে ‘নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে’ দাবি করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের একজন বিবেকবান মানুষও কী বিশ্বাস করবেন যে, শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমান মিলে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের পরিকল্পনা করবেন? মাহমুদুর রহমান ২০০৬ সালে সরকারী দায়িত্ব পালন সমাপ্ত করে আজ পর্যন্ত একবারের জন্যও যুক্তরাষ্ট্রে যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাত প্রার্থনা করে তিনি বলেন, আমি আশা করি তিনিও একজন নারী ও মা হিসেবে আমার ব্যথা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। তদুপরি প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র নিবাসী পুত্রকে অপহরণের যদি সত্যিই কোনো ষড়যন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রে হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে বিষয়টি সঠিকভাবে বাংলাদেশের জনগণকে জানানো একজন কূটনীতিকের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এ ব্যাপারে ধূম্রজাল সৃষ্টির সুযোগ দেয়া উচিত নয়।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সকল মায়ের কাছে এই বৃদ্ধা মায়ের আকুল আবেদন আপনারা আমার একমাত্র সন্তানের জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবেন। আমিও আপনাদের সকলের জন্য আল্লাহুর কাছে প্রার্থনা করি। জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি ফরদাহ মজহার, আইনজীবী সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সানাউল্লাহ মিয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান প্রমুখ।