রাজধানীর উত্তরায় সেনা কর্মকর্তা কর্নেল খালেদ বিন ইউসুফের মা মনোয়ারা সুলতানাকে হত্যার ঘটনায় ২৪ ঘণ্টা পর সোমবার পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন ৫ জনকে আটক করা হলেও পুলিশ তাদের কাছ থেকে কোন তথ্য পায়নি বলে জানা গেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক মানবকণ্ঠকে সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, এ ঘটনায় রোববার রাতেই নিহতের মেজো ছেলে কর্নেল খালেদ বিন ইউসুফ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন।
ঘটনার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হলেও তাদের কাছ থেকে এ ঘটনায় তারা জড়িত এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
[ads1]মামলার হয়েছে তবে কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিহতের বাড়ি থেকে আটক ৫ জনের কাউকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। গত শনিবার রাত ৩টার দিকে উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর সড়কের ১১ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয়তলার ড্রইংরুমের সোফা থেকে বৃদ্ধা মনোয়ারা সুলতানার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। তার গলা ছাড়াও নাকে, ঠোঁটে ও ডান গালে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। নিহতের স্বামী ডা. আবু ইউসুফ মারা যাওয়ার পর প্রায় দেড় বছর ধরে ওই বাড়িতে তিনি একাই থাকতেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মনোয়ারার বাসা থেকে কিছু খোয়া যায়নি। তাদের পারিবারিক কোন শত্রু ছিল এমন কেই বলেনি। কারা, কেন তাকে হত্যা করেছে এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারছেন না তারা। বাড়ির ভাড়াটেদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। রবি নামে এক যুবক প্রায় এক সপ্তাহ বাড়িতে প্রহরী হিসেবে ছিলেন। গত ৩০ মে রবি চলে যান। ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খোঁজছে পুলিশ। ভাড়াটেদের মধ্যে লাইলী প্রায়ই মনোয়ারার বাসায় আসা-যাওয়া করতেন।
৩ তলার ফ্ল্যাটে ছেলে মেহেদি ও ভাইপো ডালিমকে নিয়ে থাকেন লাইলী। হত্যাকাণ্ডের পর তাদের তিনজনকেই থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ভাড়াটে লাইলী খাতুন লাবনীকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। নিহত মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে লাইলীর ঘনিষ্ঠতার বিষয় তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন। তবে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি তার কাছ থেকে। একইভাবে ওই বাড়ির নিচতলার ভাড়াটে অপু ও তার স্ত্রী এ্যানিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নিচতলায় বাসার সঙ্গে বিউটি পার্লার রয়েছে এ্যানির। ঘটনার পর এ্যানির স্বামী অপু ফোনে মনোয়ারার ছেলে কর্নেল খালেদ বিন ইউসুফকে জানান যে তার মায়ের ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ। ডাকাডাকি করেও কোন শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। নিহতের ভাই মির্জা আজম বেগ জানান, নিহত মনোয়ারা মৃত ডা. আবু মোহাম্মদ ইউসুফের স্ত্রী। ওই বাসায় তিনি একাই থাকতেন।
[ads2]
নিহতের তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ইকবাল ইবনে ইউসুফ অস্ট্রেলিয়ায়, মেজো ছেলে কর্নেল খালেদ বিন ইউসুফ যশোর ক্যান্টনমেন্টে এবং ছোট ছেলে আরমান ইবনে ইউসুফ আমেরিকায় থাকেন। মনোয়ারা দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর সঙ্গে সৌদি আরব ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় মনোয়ারা মসজিদ বানানোর জন্য প্রায় ১০০ ভরি স্বর্ণ জমিয়েছেন। তা দিয়ে জমি কিনতে ঢাকার আশপাশে জমিও দেখছিলেন। স্বর্ণ ও জমি কেনার বিষয়টি তিনি অনেককে বলেছিলেন। কিন্তু মসজিদ নির্মাণের জন্য স্বর্ণগুলো ব্যাংকের ভল্টে রাখা ছিল। ঘটনার ৩-৪ দিন আগে মনোয়ারার কাজের বুয়া বাড়িতে বেড়াতে যায়। এই ৩/৪ দিন ওই বাসার তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়া এক মহিলা তার বোনকে খাবার দিতেন। বিভিন্ন কথার প্রসঙ্গে ওই ভাড়াটিয়া মহিলাকে হয়তো তার বোন স্বর্ণের বিষয়টি বলে থাকতে পারেন। তবে এই ঘটনায় সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে সন্দেহ করতে পারছেন না তিনি।[ads2]