প্রিয় ছাত্র ভাইয়েরা
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
পবিত্র মাহে রমজানের আগমন উপলক্ষে আপনাদের প্রতি রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
[ads1]সময়ের পরিক্রমায় রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে পবিত্র মাহে রমজান এখন আমাদের দ্বারপ্রান্তে। রমজান শব্দটি আরবি সাওম শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ বিরত থাকা। পারিভাষিক অর্থে আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস হতে বিরত থাকাই রোজা। মুসলিম জাতির প্রতি মহান আল্লাহর অসীম করুণা মাহে রমজান। এ মাসে মহান আল্লাহ মানবজাতির ইহলৌকিক ও পারলৌকিক উন্নতি ও কল্যাণের মূলভিত্তি তাকওয়াপূর্ণ জীবনগঠনের অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন।
[ads2]সচেতন ছাত্রসমাজ
রমজানের রোজা আমাদের জন্য ফরজ। এ বিষয়ে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি ফরজ করা হয়েছিল, যাতে করে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।” (সূরা বাকারা : ১৮৩) উল্লেখ্য ‘তাকওয়া’ অর্থ হলো আল্লাহভীতির কারণে সাবধানতা অবলম্বন করে এমন সব কাজ করা যা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে ও এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকা যা আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে। রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে রোজা ভাঙার কোনো কাজ করে না। কঠিন পিপাসায় কাতর হয়েও এক ফোঁটা পানি পান করে না। ক্ষুধার যন্ত্রণায়ও কোনো খাবার গ্রহণের চিন্তা করে না, এভাবে তাকওয়া সৃষ্টি হয়। হযরত ওমর (রা) তাকওয়ার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে হযরত উবাই ইবনে কাব (রা) বলেন, আপনি কি কোন কন্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করেছেন? তিনি বলেন- হ্যাঁ, হযরত উবাই বলেন, তখন আপনি কি করেছেন? জবাবে ওমর (রা) বলেন, আমি খুব সাবধানতার সাথে দ্রুত ঐ পথ অতিক্রম করেছি, হযরত উবাই ইবনে কাব বলেন, এটাই তাকওয়া। আর যিনি তাকওয়া অবলম্বন করে তাকে মুত্তাকি বলে। মূলত রমজান মাসটি হলো আমাদের জন্য প্রশিক্ষণের মাস। এ মাসে অর্জিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই বাকি ১১টি মাস পরিচালনা করতে হবে। এ থেকে সহজে বোঝা যায় আমরা রোজা রেখে যদি মিথ্যা, পরনিন্দা, অশ্লীল কথা ও কাজ, প্রতারণা, ধোঁকাবাজি, চাঁদাবাজি, খুন, রাহাজানি, গিবত, চোগলখুরি, হিংসা-বিদ্বেষ, অহঙ্কার ও দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে না পারি, তাহলে আমাদের রোজা মহান আল্লাহর নিকট কবুল হবে না। এ সম্পর্কে রাসূল (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মন্দকাজ পরিত্যাগ করতে পারে নাই তার খাদ্য, পানীয় পরিত্যাগ করার আল্লাহর কাছে কোন প্রয়োজন নাই।” (বুখারি)[ads1]
ইসলামপ্রিয় ছাত্রবন্ধুরা
রমজান মাস মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বড় নেয়ামত। আমরা জানি এ মাসে একটি ফরজ ইবাদত করলে সত্তরটি ফরজ আদায়ের সওয়াব পাওয়া যায়, তেমনিভাবে একটি নফল ইবাদত আদায় করলে ফরজের সমান ফজিলত পাওয়া যায়। এ মাসে এমন একটি রজনী রয়েছে যে রাতের মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও আত্মসমালোচনার সাথে রমজানের রোজা রাখবে, তার পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের নিয়তে রমজানের রাত্রি ইবাদতে কাটাবে, তার পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ করা হবে। (বুখারি ও মুসলিম)। এমনকি হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “রোজা আমার জন্য, রোজার প্রতিদান আমি নিজ হাতে দেবো।”[ads2]
প্রিয় বন্ধুরা
রমজান মাসটি গুরুত্ব পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো এ মাসে নাজিল করা হয়েছে মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল কুরআন। সুরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে এসেছে- “রমজান মাস, এ মাসেই নাজিল করা হয়েছে আল-কুরআন, যা মানবজাতির জন্য পুরোপুরি হিদায়াত ও দ্ব্যর্থহীন শিক্ষাসংবলিত, যা সত্য-সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয়।” প্রকৃতপক্ষে আল কুরআনই হলো মানবজাতির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক পথনির্দেশক। রাসূল (সা) বলেন, “আল্লাহ তায়ালা কোন জাতিকে এই কুরআন দ্বারা সমুন্নত করেন এবং কোন জাতিকে অধঃপতিত করেন।” সুতরাং এ থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর দেয়া কুরআন অনুযায়ী না চলে মানুষের মনগড়া বিধান দিয়ে চলার কারণে আজ মুসলিমদের এই অধঃপতিত অবস্থা। তাই মুসলিম যুবক হিসেবে আমাদেরকে কুরআন পড়া, বোঝা ও কুরআনের আলোকে জীবন গঠন করতে হবে। আর কুরআন অধ্যয়নের উপযুক্ত সময় রমজান মাস। জ্ঞানার্জন, আত্মগঠন ও আদর্শিক সমাজ বিনির্মাণের দীপ্তশপথে উজ্জীবিত হয়ে এ মাসেই কমপক্ষে পুরো কুরআন শরীফ একবার তেলাওয়াত করার চেষ্টা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ নিম্নোক্ত আয়াত ও সূরাসমূহ অধ্যয়ন ও মুখস্ত করার চেষ্টা করা দরকার- সূরা আল বাকারা : ১৫৩-১৫৭, ১৮৬, আলে ইমরান-১৯০-২০০, আত তাওবা- ২০-২৭, ৩৮-৪১, ১১১, মুমিনুন-১-১১।
পাশাপাশি নি¤েœাক্ত হাদিসসমূহ অধ্যয়ন ও মুখস্ত করার চেষ্টা করা দরকার-সহিহ বুখারি হাদিস নং-১৭৬১, ১৭৬৬, ২৬০১, ২৬০৭। রমজান মাসকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করতে খতমে তারাবি ও তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়মিত আদায়, বেশি বেশি দান-সদকাহ করা জরুরি।[ads1]
সুপ্রিয় মেধাবী বন্ধুরা
যে কুরআনের কারণে রমজানের গুরুত্ব এত বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা যদি ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে এই কুরআনকে ধারণ করতে পারি, নিশ্চয়ই আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন মর্যাদাও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। আমরা রমজান মাসে যেভাবে কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী নামাজ ও রোজা আদায় করবো, আল্লাহকে ভয় করে মিথ্যা ও অশ্লীলতাসহ সকল খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবো সেভাবে বছরের বাকি সময় এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবো। সর্বোপরি নিজের জীবনকে কুরআনের আলোকে সাজানোর পাশাপাশি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে কুরআনের আলোকে সাজানোর চেষ্টা করতে হবে। এ জন্য তোমাদেরকে অবশ্যই কুরআনের আন্দোলনে শরিক হতে হবে। এ লক্ষ্যেই কাজ করছে ছাত্রসমাজের প্রিয় কাফেলা “বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির”।
কুরআনের সৈনিক হিসেবে আমরাও চাই আমাদের বাংলাদেশকে কুরআনের আলোকে গড়তে। তোমাকেও আহবান করছি কুরআন প্রতিষ্ঠার এ আন্দোলনে। তাই কুরআনের আলোকে সমাজ বিনির্মাণের প্রচেষ্টাই হোক মাহে রমজানের মূল শিক্ষা।[ads2]
ছাত্রশিবির বিজ্ঞপ্তি