নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘শিপন আমাকে টিজ করতো। অনেক সহ্য করেছি। সহ্যের দেওয়াল ভেঙ্গে যাওয়ার ওকে খুন করার সিদ্ধান্ত নিই। ওর বাসায় গিয়ে আরসি’র বোতলে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে প্রথমে অজ্ঞান করি। তারপর হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে খুন করি। এরপর ছুরি দিয়ে বুক ফেরে কলিজা বের করে দেখি ওর কত বড় কলিজা, সাহস কতো। ও আমার মতো মেয়ের সঙ্গে টিস করে কোন সাহসে।’শনিবার দুপুরে খুলনায় লিফটম্যান শিপন হত্যাকান্ডে গ্রেপ্তার হওয়া গৃহকর্মী ফাতেমা আক্তার (১৭) সোনাডাঙ্গা থানায় সাংবাদিকদের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক এ কথা বলে।
এরআগে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ শুক্রবার দিবাগত রাতে জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার কৈয়া জয়খালী থেকে ফাতেমাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি, নিহতের ল্যাপটপ বিক্রির ২২ হাজার টাকা ও তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। তার স্বীকারোক্তিতে খুলনার পুলিশ লাইন পূর্বগলি থেকে হত্যাকান্ডে সহযোগী অনিক (২২) নামের আরো একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ৮ মার্চ রাতে নগরীর নূরনগর গণপূর্ত বিভাগের আবাসিক কোয়ার্টারের বাসায় খুন হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটম্যান ও খানজাহান আলী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এমদাদুল হক শিপন (২৫)।
ফাতেমা আরও জানায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমার মা ভর্তি ছিলো। তখন হাসপাতালে মার কাছে গেলে শিপন আমাকে নিয়মিত টিস করতো। অনেক দিন সহ্য করার পর অসহ্য হয়ে যায়। তখন শিপনের সঙ্গে ভাব করি। সর্বশেষে তাকে খুন করি। সাংবাদিকরা ছবি তোলার সময় ফাতেমা ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, মেকাপ দিয়ে সেজে-গুজে আসবো। বেশি বেশি করে লেখেন আমার কথা। আমি বের হলে কোন ছেলে যদি এ ধরণের কাজ করে তাকেও খুন করবো। সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহাবুদ্দিন আজাদ জানান, হত্যাকান্ডে জড়িত মেয়েটির মা নূরজাহান বেগম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালে যাতায়াতের এক পর্যায়ে লিফটম্যান শিপনের সঙ্গে সে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
শিপনের নূরনগরের বাসায়ও মেয়েটি কয়েকবার গিয়েছে। ঘটনার রাতে একটি আরসি’র বোতলে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শিপনকে প্রথমে অজ্ঞান করা হয়। তারপর হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে তাকে খুন করা হয়। ওসি বলেন, ওই দিন লাশ উদ্ধারের সময় মৃতদেহের বুক ফাড়া ও কলিজা বের করা দেখেই এটি মেয়েলি ঘটনার জের বলে সন্দেহ হয়েছিল। হত্যাকান্ডে জড়িতদের স্বীকারোক্তিতে হত্যার মোটিভ জানা গেছে।
মূলত: অনিকের মাধ্যমেই ফাতেমা হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও ঘুমের ওষুধ সংগ্রহ করে। নিহত শিপন খুলনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী আবু বক্কারের ভাগ্নে। সে বয়রায় মামার সঙ্গে গণপূর্ত বিভাগের কোয়ার্টারে থাকতো। ফাতেমা ঢাকার একটি বাসায় কাজ করতো। মার অসুস্থ্যতার খবর পেয়ে বাড়ি আসে।