[ads1]চলছে বরকতময় রমাদান মাস। ১৫ ঘন্টা রোজা রেখে আমরা সবাই খুব দ্রুত ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে যাই….. অথচ আমাদের পূর্বসূরীরা এই কঠোর রমাদান মাসেই ঈমানের পরীক্ষা দিয়ে গেছেন জিহাদের ময়দানে। তাঁর কতটুকুই বা আমরা জানি? আসুন দেখে নেই ইতিহাসের গতিকে পাল্টে দেয়া পাঁচটি যুদ্ধের কথা, যার প্রতিটিই হয়েছিলো রমাদান মাসে।
০৫। গোয়াডিলথের যুদ্ধ ও স্পেন বিজয়
এ বীরত্বগাঁথা আমরা সবাই জানি। ৯২ হিজরির (১৯শে জুলাই, ৭১১ খ্রিষ্টাব্দ) রামাদান মাসের এক পবিত্র দিনে মরক্কোর উপকূল থেকে জাহাজে চ্যানেল পার হয়ে ইউরোপের মাটিতে পা রাখেন বীরকেশরী তারিক বিন জিয়াদ। তাকদীরের খেয়ালে মরক্কোর এই মানুষটি জন্ম নেন দাস হিসেবে, মৃত্যুবরণ করেন নিঃস্ব ভিখারী হয়ে কিন্তু সে কথা আলাদা। সংক্ষিপ্ত তার জীবনে তিনি মুসলমান তথা সমগ্র ইউরোপের ইতিহাস পাল্টে দিয়েছিলেন দুঃসাহসী নেতৃত্ব দিয়ে।[ads2]
[ads1]যাক, জাবাল-আত-তারিক (জিব্রালটার পাহাড়) এর পাড়ে তারিক বিন যিয়াদ নেমেই তার জাহাজগুলো সব পুড়িয়ে দিলেন। সামনে থাকলো দুর্ধর্ষ ভিসিগথ রাজা রডারিকের বিশাল সেনাবাহিনী, আর পেছনে ভূমধ্যসাগরের বিক্ষুদ্ধ ঊর্মিমালা। এক আল্লাহর উপর ভরসা রেখে রোজাদার সেনাবাহিনী নিয়ে তিনগুণ সৈন্যসংখ্যার স্প্যানিশ সেনাবাহিনীর উপর ঝাপিয়ে পড়লেন তারা…….. আর এরপর বাকিটা ইতিহাস !! এভাবেই স্থাপিত হলো আন্দালুসিয়া খেলাফতের ভিত্তি, যার হাত ধরে জন্ম নিলো আলোকিত মুসলিম স্পেনের ৮০০ বছরের গৌরবময় ইতিহাস এবং ধীরে ধীরে তা রূপ নিলো ইউরোপিয়ান রেনেসাঁতে, জন্ম দিলো এক নতুন পৃথিবী !!![ads2]
০৪। ২য় ক্রুসেডঃ হাত্তিনের যুদ্ধ ও সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী
শিল্পীর চোখে – হাত্তিনের যুদ্ধ
[ads2]মহান শাসক এবং অসমসাহসী যোদ্ধা মিশরীয় সুলতান গাজী সালাহউদ্দিন আইয়ুবী মুসলিম জাহানের এক অমূল্য রত্ন। ইওরোপীয় ক্রুসেডারদের ৮৮ বছরের নিষ্পেশন থেকে প্রায় বিনা রক্তপাতে জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করেছিলেন তিনি। ক্রুসেডারদের দলপতি রাজা রিচার্ডের সাথে মহানুভব আচরণের প্রবাদতুল্য ইতিহাস আমরা সবাই জানি, শুধু যেটা জানি না, সেটা হলো এই জেরুজালেম বিজয়ের পথের প্রধাণতম নিয়ামক হাত্তিনের যুদ্ধ তিনি জয়লাভ করেছিলেন পবিত্র রামাদান মাসে। ২৭ রমাদান সারারাত ইবাদত বন্দেগীতে কাটিয়ে দেবার পর ভোরে শুরু হলো আক্রমণ, এবং মুসলিম সেনাবাহিনী জয়লাভ করলো। সুলায়মান (আঃ) এর নির্মিত মসজিদুল আকসা, যা পুনরুদ্ধার করেছিলেন ফারুকে আযম উমার (রাঃ)…… তা আবার চলে আসলো মুসলমানদের হাতে। দিনটি ছিলো ৪ঠা জুলাই, ১১৮৭ খ্রিষ্টাব্দ।[ads1]
সুলতান গাজী সালাহউদ্দিন আইয়ুবী
[ads2]০৩। আইনে জালুতের যুদ্ধ ও তাতারী প্রতিরোধ
মুসলমান সাম্রাজ্যের তখন এক ক্ষয়িষ্ণু দশা। হালাকু খানের মঙ্গল সেনাবাহিনীর প্রবল আক্রমণে একের পর এক রাজ্যের পতন হচ্ছে; তাতারী এই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞে মুসলিম খিলাফতের এক বিশাল অংশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। প্রবাদ ছিলো, কোন তাতারী সৈনিক যদি কোন মুসলমানকে শিরচ্ছেদের জন্য হাটু গেড়ে বসিয়ে রেখে তলোয়ার আনতে যেত, তাহলে নাকি মুসলমানেরা বসেই থাকতো, কারণ, এই সুযোগে পালিয়ে গেলে তখন আবার ধরে এনে যে নৃশংসতা চালানো হবে, তার চেয়ে বরং এভাবে সহজে মরাই ভালো !!! সমগ্র ইসলামী সাম্রাজ্যই প্রায় পদানত করে এনেছিলো এই তাতারী সেনাদল, শুধু একটা এলাকা ছাড়া……… মিশর।[ads1]
[ads2]শিল্পীর চোখে – আইনে জালুতের যুদ্ধ
মিশরের মামলুক সুলতান কুতুজ সিদ্ধান্ত নিলেন প্রতিরোধের। ৬৫৮ হিজরীর ২৫শে রামাদানের (৩রা সেপ্টেম্বর, ১২৬০) পবিত্র দিনে তার সেনাবাহিনী রুখে দাঁড়ালো প্রবল প্রতাপশালী মঙ্গোল সেনাবাহিনীর। এবং তুমুল সেই যুদ্ধের ফলে প্রথমবারের মতো পরাজয়ের স্বাদ পেলো তাতারীরা………… পুনঃজাগরণ হলো ইসলামী শক্তির। আইনে জালুতের এই যুদ্ধের পথ ধরেই অবশেষে তাতারীদের তাড়িয়ে দিতে শুরু করলো মুসলিম সেনাবাহিনী।
০২। মক্কা বিজয়ঃ রাসূল (সাঃ) এর কাজের পূর্ণতা[ads1]
[ads1]রাসূল (সাঃ) এর নবুওয়াতী জীবনের পূর্ণতা আসলো যেন নিজের জন্মভূমি মক্কা রক্তপাতহীন এক অভিযানে জয় করে নেবার মাধ্যমে। সারাটা জীবন সে লোকেরা তাঁকে ও তাঁর সম্মানিত সাহাবীদের উপর নির্মম অত্যাচার -ষড়যন্ত্র চালিয়েছিলো…… তাদের একবাক্যে ক্ষমা করে দিয়ে ইসলামের শ্বাশত সৌন্দর্যকে পৃথিবীর ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে রাখলেন তিনি। কাবা শরীফের ভেতর থেকে সকল মূর্তি উচ্ছেদ করলেন, তুলে দিলেন মানুষে মানুষে ভেদাভেদের সকল বাঁধা।
নবম হিজরীর রামাদান মাসের (১১ই জানুয়ারী, ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দ) এক পবিত্র দিনে এই বিজয় অর্জিত হয়।
০১। বদর যুদ্ধঃ হক্ক ও বাতিলের প্রথম সংঘাত
ইসলাম এবং মুসলমানদের ইতিহাসে বদর যুদ্ধের প্রভাব কতটুক আমরা সবাই জানি। রাসূল (সাঃ) ও তাঁর গুটিকয়েক জানবাজ সাহাবী রামাদান মাসের প্রখর রোদ উপেক্ষা করে জিহাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। তাদের এই অনমনীয় দৃঢ়তা ও অসমসাহসের এই নজীর পেশ করবার কারণে আল্লাহ পাক ফেরেশতা নাজিল করে তাদের সাহায্য করেছিলেন। ৩১৩ জনের সেই মহিমান্বিত সেনাবাহিনী সুসজ্জিত সহস্রাধিক মুশরিক সৈন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে নবজাত সেই ইসলামী আন্দোলনকে রক্ষা করেছিলেন, দিনটি ছিলো ২য় হিজরির ১৭ই রমাদান (১৩ই মার্চ, ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দ)।[ads2]
আজও রমাদান চলছে, আজো সাওম পালনকারী মরদে মুজাহিদরা আল্লাহর পথে সংগ্রামের ডাকে ছুটে চলেছেন ফিলিস্তিন, সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, মিশর সহ সারা পৃথিবীর তপ্ত বুকে। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় জায়নবাদী ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসনে নারী-শিশু সহ অসংখ্য মানুষ শাহাদাতের অমিয় পেয়ালা পান করছেন, ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধে ইয়েমেন মিশর সিরিয়ায় রক্তাক্ত হচ্ছে জনপদ। গোদের ওপর বিষফোড়ার মত গজিয়ে উঠেছে তথাকথিত আইএস নামের অভিশাপ।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবুজ জমিন থেকে ইফতারের পূর্বমুহূর্তে তাদের জন্য মুখলিসভাবে দোয়া করা ছাড়া আমাদেরে কিছু করার আছে কি ?
(মুসলিম ম্যাটারস অবলম্বনে)
কলামঃ শাইখ মাহাদি[ads2]