তিনবার বাসা থেকে বের হয়েছেন ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য, কিন্তু তিনি কেন্দ্রে যেতে পারেননি। তার নেতাকর্মীরাও রাস্তায় নামতে পারেননি। যাকে রাস্তায় পেয়েছে তাকেই মারধর করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে সরকার সমর্থকরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ করেছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছেও। কোনো কাজ হয়নি। উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েও তিনি ভোট দিতে পারেননি।
ঘটনাটি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার। প্রার্থীর নাম আব্দুস সাত্তার। তিনি জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৯ টার মধ্যে এই উপজেলার সকল সেন্টার থেকে বিতারণ করা হয় সরকার বিরোধী প্রার্থীদের এজেন্টদের। কোন কোন কেন্দ্রে বিরোধী এজেন্টদের নির্বাচন কেন্দ্রের ধারেকাছেও ঘিষতে দেয়া হয়নি।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় সরকার সমর্থকরা তাদেরকে মারধর করে কেন্দ্রের আশপাশ থেকে তাড়িয়ে দেয়। সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতেও বিভিন্ন কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা।
শাহজাদপুর উপজেলায় এবার পাঁচজন প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। এদের মধ্যে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ইকবাল হোসেন হিরু (কাপ পিরিচ), আওয়ামী লীগ সমর্থক আজাদ রহমান (আনারস), জামায়াত সমর্থিত আব্দুস সাত্তার (দোয়াত-কলম), স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল ওয়াদুদ (মোটর সাইকেল) এবং জাসদ সমর্থিত প্রার্থী শফিকুজ্জামান শফিক (হেলিকপ্টার)।
সোমবার বেলা ২ টার দিকে জামায়াত প্রার্থী আব্দুস সাত্তারের বাসায় গিয়ে দেখা যায় তিনি বাসায় বসে আছেন। তিনি অভিযোগ করে পরিবর্তনকে বলেন, ”ভোট দেয়ার জন্য সকাল থেকে কয়েকবার কেন্দ্রে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। যখনই বাসা থেকে বের হয়েছি, তখনই আওয়ামী লীগ সমর্থকরা গতিরোধ করেছে। আমার ছেলে আহম্মদ হোসাইন মুরাদকে কেন্দ্র থেকে মারধর করে বের করে দেয়া হয়েছে।”
আব্দুস সাত্তার আরো অভিযোগ করেন, তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও মারধর করে, কোথাও ভয়-ভীতি দেখিয়ে, আবার কোথাও কোথাও তাদের কেন্দ্রেই প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। খুনকি রূপনাই গাছপাড়া কেন্দ্রে তার তিন কর্মীকে মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছে সরকার সমর্থকরা।
তিনি অভিযোগ আরো করেন, ১২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৩ টি কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি করা হয়। প্রশাসনের সদস্যরা তাদের সহায়তা করেছে। তিনি এই অভিযোগ দেয়ার জন্য রিটার্নিং অফিসারকে ফোন করেছিলেন। সেখান থেকে বলা হয়েছে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়ে আসার জন্য। কিন্তু সেখানে দরখাস্ত নিয়ে গেলে তাদেরকে অফিসে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, ‘আমাদের এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং মারধর করে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। কুমির গোয়ালিয়া কেন্দ্রে সাংবাদিকদেরও প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হয়। ‘
বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্ট ওমর ফারুক বলেন, ‘টাকা নিয়ে চলে যান, এজেন্ট থাকার দরকার নেই। আমরাই সব কিছু দেখবো। এরপর আমাকে জোর করে বের করে দেয়। এবং অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ কর্মী আনারস প্রতীকে সিল মারে।’
এদিকে ৮৩টি কেন্দ্রের ভোটডাকাতি, কেন্দ্রদখল ও জালভোটের অভিযোগ এনে মঙ্গলবার শাহজাদপুর উপজেলায় আধাবেলা হরতাল ডেকেছে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ইকবাল হোসেন হিরু।
স্থানীয় হাবিবুল্লাহ নগর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই সরকার অভিযোগ করেন, কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। ওই কেন্দ্রের বিএনপি এজেণ্ট ওমর ফারুক বলেন, তাকে হুমকী ধমকি দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়। খবর শুনে বেলা ১১ টার দিকে সেখানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট শফিকুল ইসলাম হাজির হন। তার উপস্থিতিতেই ওমর ফারুক তাকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ করেন।
ওমর ফারুক ম্যাজিষ্ট্রেটকে বলেন, ‘আগেই তো সব কেটে বাক্সে ঢুকানো হয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসার এসএম সাইফুল ইসলাম কিছু বিশৃঙ্খলার কথা স্বীকার করেন ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে।
এ ব্যাপারে ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে চানতে চাইলে তিনি আমতা আমতা করেন। প্রিজাইডিং অফিসারকে তিনি বলেন, ”আপনার সামনে এসব ঘটলো আপনি আমাদের অবহিত করলেন না কেন।” তাকে ভর্ৎসনা করে তিনি বলেন, ”ঈমানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টকে ভেতরে গিয়ে বসতে বলেন ম্যাজিস্ট্রেট। তখন ওই এজেন্ট বলেন, ”ভোট তো সব দিয়ে ফেলেছে। এখন আর গিয়ে লাভ নেই।”