[ads1]জাবের সিদ্দিক: যুক্তি দিয়ে কথা বলার রীতিটা আধুনিক সমাজে স্বীকৃত ও প্রশংসিতও বটে। এই রীতির প্রচলনেরই পরিবর্তী পর্যায়ে বিতর্ক ধারার সূচনা। যেখানে মার্জিত ভাষায় যুক্তি উপস্থাপিত হয় আর সাথে হয় জ্ঞান চর্চা। বহু আগ থেকেই জ্ঞানের এই ধারা চলমান। বর্তমান সমাজে নানান নেশা ও বদ অভ্যাসের ছোবল থেকে সন্তানকে যখন দূরে রাখতে ব্যস্ত মা বাবা তখন কিছু তরুণ বিতর্ক চর্চাকে বড়ই আনন্দ ও অবসরের সঙ্গী করেছে। ব্যপারখানা উন্নত বিশ্বের পথে ধাবমান একটি দেশের জন্য বড়ই সুখবর বয়ে আনে। কেননা, বিতর্কের মাধ্যমে যেমন ভিন্ন চিন্তা ও ভাবনার পারস্পরিক আদান প্রদান ঘটে তেমনই হয় জ্ঞানের বিশাল সমুদ্রে অবগাহন। জ্ঞানপিপাসু ও শিক্ষিত সমাজের বৃদ্ধি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড়ই ভুমিকা রাখে এটাই চিরায়ত।
বাংলাদেশে বিতর্কের একটি ধারা বেশ আগ থেকে শুরু হয়েছে। স্বাধীনতা উত্তরকালে এই শিল্পের চর্চা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু আজকাল এই শিল্পের চর্চা প্রতিষ্ঠানের বাইরেও প্রচুর। গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রশিক্ষনাগার ও ক্লাব। যারা প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার পাশপাশি জ্ঞানপিপাসু ও চিন্তক মানসিকতার ছেলে মেয়েদের মাঝে বিতর্কের এই সুন্দর বার্তা ছড়িয়ে দিতে চায়। মাসিক প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিতর্ক অনুষ্ঠানে তারা অংশ নেয়। যুক্তিপূর্ণ এই প্ল্যাটফর্ম আজ বড়ই জনপ্রিয়। সাধারন শিক্ষায় শিক্ষতদের কাছে এই শিল্পের চর্চা সহজ হলেও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মাঝে শিল্পটি অতটা সহজ না। পড়াশোনার চাপ ও নানান বাস্তবতায় এই চর্চা হয়ে উঠে না। কিন্তু এমন একটি সুন্দর প্ল্যাটফর্ম থেকে তারাই বা কেন বঞ্চিত থাকবে? তাদের ভেতরে লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভা ও তাদের সুন্দর চিন্তার পরিচয় জাতি যেন যুক্তির আদলে পায় সেই লক্ষ্য নিয়েই একটি সংগঠন কাজ করছে দীর্ঘদিন যাবত।[ads2]
এসএমডিএস। স্পন্দন মাদরাসা ডিবেটিং সোসাইটি। এই নামেই স্বপ্নের বাস্তবায়নে যাত্রা শুরু করে ২০০৪ সালে। আজ ২০১৬ সাল। এরই মাঝে সাফল্যের সাথে এক যুগ পার হতে চলল এই বিতর্ক সংগঠনটির। নানান প্রতিকূলতা অতিক্রম করে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতর্কের এই আলো ছড়িয়েছে এসএমডিএস। নিয়মিত প্রশিক্ষণ, প্রতিযোগিতা ও নানামুখি কার্যক্রমের মাধ্যমে সংগঠনটি তার কাজের গতি অব্যাহত রেখেছে। কওমি ও আলিয়া, মাদ্রাসার এই দুই ধারায়ই তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আজ বাংলাদেশের বিতর্ক অঙ্গনে একটি অবস্থান তৈরি করেছে এই সংগঠনটি। বিগত ২০১২ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যামব্রিয়ান কলেজের উদ্যোগে আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযগিতায় আয়োজক দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় এসএমডিএস। এছাড়া ২০১৩ সালে এআইইউবি তে নটরডেম কলেজকে হারিয়ে বিজয় অর্জন করে মাদ্রাসা ছাত্রদের স্বপ্নের সংগঠন এসএমডিএস।
সাফল্যের এই বছরগুলোতে এসএমডিএস থেকে বেরিয়েছে বহু খ্যাতিমান বিতার্কিক। যারা আজ সমাজের নানান স্তরে আপন আপন মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। তাদের কেইউ আজ সফল ব্যবসায়ী, কেউ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কেউ আইনজীবী, কেউ সাংবাদিক আর কেউবা সংবাদ উপস্থাপক ইত্যাদি। সাফল্যের এই জয়যাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে সংগঠনের দায়িত্বশীলরা এমনই আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিগত চার বছর ধরে থাকা সংগঠনের সভাপতি আবু কাউসার ইমন। গতকাল হামদর্দ মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সাথে বিতরন করা হয় এসএমডিএস আয়োজিত আন্তঃলীগ বিতর্কের পুরষ্কার। নতুন কমিটি ঘোষিত হয় যাতে সভাপতির দায়িত্ব পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল কাইউম ও সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরওয়ার হোসেন। নতুনের জয়গান ও স্বপ্নের বাস্তবায়নে বিশ্বাসী ও দৃঢ় প্রত্যয়ী এই কাফেলার অগ্রযাত্রা অগ্রসরমান থাকুক এটাই কামনা অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকদের। স্বপ্নের এই অগ্রযাত্রা আগামীতেও বহাল থাকুক। যুক্তির মাধ্যমে মুক্তির পথ খোঁজার দ্বার প্রসারিত হোক। জরা ভেদ করে আসুক উজ্জ্বল সকাল।[ads1]