কেন সন্তান জড়াচ্ছে জঙ্গিবাদে? বাবা-মার নানা প্রশ্ন

0

pribateবাংলাদেশে জঙ্গি ও জঙ্গিবাদ সম্পর্কে প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ছিলো বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা এসব কাজে জড়িত। কিন্তু গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলার পরে এ ধারণা পাল্টে গেছে। গুলশানে জঙ্গি হামলায় জড়িতরা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান এবং বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী।[ads1]

গুলশান হামলার আগে দেখা গেছে ব্লগার হত্যাসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে এসব পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাহলে প্রশ্ন জাগে কেন এসব পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদের মতো একটি অশুভ রাস্তা বেছে নিচ্ছেন। কারণটি শুধু ধর্মীয় নাকি অন্যকোনো কারণ এর পেছনে কাজ করছে।

এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ও ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হয় পরিবর্তন ডটকমের প্রতিবেদকের। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সঠিক ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষার অভাব, উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোতে পারিবারিক বন্ধন কমে যাওয়া এবং এসব যুবকদের হাতে মা-বাবার দেওয়া অঢেল টাকা-পয়সা থাকায় সহজেই তারা অনেক কিছু পেয়ে যাচ্ছে। ফলে জীবন থেকে তাদের চাওয়ার কিছু থাকে না। তাই তারা মানসিক হতাশা থেকে এ পথ বেছে নিচ্ছেন।

মো. সালাম খান একজন ব্যবসায়ী। তার ছেলে রাজধানীর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ’র ৬ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কেন বিপথগামী হচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে সালাম খান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা যারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল-কলেজে পড়ছে, তাদের মধ্যে বিপথগামী হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। সাধারণত দেখা যায় এসব পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারিবারিক বন্ধনের অভাব রয়েছে। ফলে একটি মহল সহজেই এসব যুবকদের ব্রেইন ওয়াশ করে মানবতা ও ধর্মবিরুদ্ধ কাজ করাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদেরকে এই সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেক মা-বাবার উচিত তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সন্তানটি কোথায় যাচ্ছে, কী করছে সেদিকে নজর রাখা। যেসব বন্ধু ও ভার্সিটির বড় ভাইয়ের সঙ্গে মিশছে তারা তাকে  বিপথগামী করছে কিনা প্রতিনিয়ত সেদিকে খোঁজখবর নেওয়া দরকার।[ads2]

রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব) বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সেহেলী সুলতানা বলেন, সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দিলে চলবে না। হ্যাঁ, কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীদের মাঝে এখন জঙ্গি হওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আমি মনে করি ধর্মের অপব্যবহার, সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারে মা বাবার সঙ্গে সন্তানদের দূরত্ব তৈরিসহ আরো বিভিন্ন কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

তিনি বলেন, একটি ২০/২২ বছরের যুবক তার নিজ পরিবার থেকে নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যে পরিবারগুলোর সন্তানরা নিখোঁজ হচ্ছেন তার মা বাবা এ ব্যাপারে কিছু জানতে পারছে না। আমার মনে হয় এ সমস্যা মোকাবিলা করতে হলে মা বাবার সঙ্গে সন্তানদের যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে তা কমাতে হবে। মা বাবাকে সার্বক্ষণিক এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে তার সন্তান কোথায় যায়? কেন যায়? সে কেন আজ বাসায় ফিরল না? এবং সে যে বন্ধুটির বাসায় যাবে বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছে আসলে সে কী তার বাসায় গিয়েছে, না অন্য কোথাও গেছে?

রাজধানীর স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, আমি মনে করি একটি ছেলে বিপথগামী হয়ে ওঠার সম্পূর্ণ দায়, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নয়। এর দায় নিতে হবে রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার ও যারা আমাদের ধর্মশিক্ষা দিচ্ছেন। আমার যদি লক্ষ করি দেখব গুলশান হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তারা সবাই সুশিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে। তা হলে কেন তারা এ পথে গেল? কী তাদের অভাব ছিল?[ads1]

তিনি বলেন, একটি বিষয় খেয়াল করলে দেখা যাবে তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেলেও পরিবারের কাছ থেকে কোনো ধরণের সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা পাচ্ছে না। তাই তাদের খুব সহজেই ভুল বা বিপথগামী করা যাচ্ছে।

তবে অনেক অভিভাবকরা মনে করছেন শুধু সামাজিক ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে নয় দেশের রাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটও তাদের জঙ্গি হতে অনুপ্রাণিত করছে।

এ সম্পর্কে রাজধানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীর বাবা জাহাঙ্গীর খান বলেন, গুলশানে হামলার সঙ্গে জড়িতদের এ পথে আনতে আমাদের দেশীয় রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের প্রভাব রয়েছে। আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতাদের নোংরা রাজনীতির কারণে দেশের মানুষ আজ বিভিন্নভাবে বিভক্ত। যার ফলে বিভিন্ন রাজনৈতিক উড়ো কথা দিয়ে এ কোমলমতি যুবকদের রাষ্ট্র ও সমাজের বিরুদ্ধে কাজ করতে এক শ্রেণীর অসাধু মানুষ চেষ্টা করেছে। গুলশানের ঘটনায় এরা এবার সফলও হয়েছে।[ads2]

তিনি বলেন, ইন্টারনেট ও ফেসবুকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যারা জড়িত তারা সহজেই আমাদের দেশের যুবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে। কিংবা আমাদের দেশের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে। ফলে এরা খুব সহজেই আন্তর্জাতিক ঘটনার প্রবাহে নিজেদের ভাসিয়ে দিচ্ছে। আমাদের এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সঠিক ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর শিক্ষা দিতে হবে। তাছাড়া একটি সন্তান শিক্ষিত হওয়ার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হল তার পরিবার। সেই পরিবারকে তার বন্ধন ও নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More