পরিসংখ্যানে চমকপ্রদ তথ্যে পাওয়া গেছে, তা হল-আইএসে কেবল জন্ম থেকে মুসলমান এমন মানুষ নয়, বরং ধর্মান্তরিত মুসলমানের সংখ্যাই বেশী। যাদের পূর্ববর্তী ধর্ম ছিল ইহুদি, ক্রিশ্চিয়ান, অ্যাথিস্ট। সম্প্রতি শিক্ষিত-অশিক্ষিত নারী পুরুষের প্রায় ২৫ শতাংশ আইএস এর সদস্য ফ্রান্স থেকে যোগ দিয়েছে। [ads2]
যে ৭টি কারণে আইএসের মায়াজালে তরুণ-তরুণীরা:
১. সামাজিক গণমাধ্যমে ভুয়সী প্রচারণা ও প্রপাগান্ডা : সামাজিক গণমাধ্যমে আইএস এর আলাদা মিডিয়া উইং আছে। খুবই বিচক্ষণতার সাথে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে থাকে সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে তারা তাদের সদস্য সংগ্রহ করে থাকে। ভয়ংকর ও দুর্বিষহ ধারণা মানুষের মাঝে জন্ম দেয়া তাদের উদ্দেশ্যে। যেভাবে ২০০৯ সালে পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যাকায় তালেবানরা সংগঠিত হয়েছিল। বিভিন্ন মিডিয়ার প্রচারণা ও প্রপাগান্ডা আইএসকে আরও উজ্জীবিত করে তোলে। মিডিয়া তার টিআরপি নিয়ে ভাবে। আর এইসব দলগুলো তখন লাভ করে প্রসারতায়।
২. আইডেন্টিটি ক্রাইসিস: তরুণরা কৌতূহলী। তাদের কৌতূহলের শেষ নেই। কেউ নামে ধার্মিক। তারা ধর্মে-কর্ম থেকে দূরে থাকেন। ধর্ম সম্পর্কে তাদের মনের মত উপযুক্ত উত্তর খুঁজেন। সাধারণ উত্তর হলেও এরা তৃপ্ত থাকেন সেই উত্তরে। তারপরেও, সেই উত্তরের পিঠে তারা পাল্টা প্রশ্ন তুলে ধরেন না। কিন্ত এর মাঝে আরেক প্রকার তরুণ আছে। যারা উত্তর খুঁজে বেড়ান। সাধারণ উত্তর এদের মন জয় করে নিতে পারে না। আরও গ্রহণযোগ্যে উত্তর এদের চাই। আরও নিখুঁত উত্তরের পিছে খুঁজে চলেন। সেই সংশয়ে তারা মনের অজান্তে জড়িয়ে পড়েন। ভ্রান্ত পথে পা বাড়ান। বিশেজ্ঞরা মনে করেন, ইন্টারনেট জেনারশনরা যা দেখে তাই বিশ্বাস করে। এরা হল ইন্টারনেটের প্রথম জেনারেশনের ‘গিনিপিগ’। এরা যে ধর্মটা ধারণ করে, মিডিয়ার সাথে যখন বাস্তবতার মিল খুঁজে পায় না। তখন তারা হারিয়ে ফেলে তাদের বিশ্বাস। তাদের নিজস্বতা। বিশ্বাসের সাথে যখন বাস্তবতার মিল নেই, তখন তাদের অনেকে ভোগেন আবার অস্তিত্ব সংকটে। তখন জড়িয়ে পড়েন কোন উগ্রপন্থী দলে।
৩. একাকীত্বতা ও চরম হতাশা: তরুণরা বেশী প্রভাবিত হয় কাছের মানুষ দ্বারা। পারিবারিক যোগাযোগ ও একক পরিবারের সন্তানরা বেশী একাকীত্বে থাকে। একটা রুম। প্লে স্টেশন। গেইমস। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি বা টকিং টমের মত গেম সাধারণ, তবে বিধ্বংসী অ্যাপসগুলো দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে মানব মনে। কাজের চাপ, সামাজিক, পারিবারিক, ব্যাক্তিগত ও অন্যান্য বৈরি মানসিক হতাশা থেকে মুক্তি চায়। জীবনে চায় অ্যাডভেঞ্চার। নতুন কিছু করতে চায়। কোন কিছু না পারার যন্ত্রণা দেয়। সেই হতাশার সুযোগ নেয় চারপাশে ছড়িয়ে থাকা দুষ্ট মনের মানুষগুলো। সত্য উদাহরণের আলোকে, “ … দেখো ছেলে তুমি খারাপদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। আমাদের চমৎকার দেশটাতে চলে আসো। এখানে তুমি অনেক সুন্দরী রমণী পাবে। তোমার দাস হয়ে থাকবে। তোমাকে সেবা করার জন্য অপেক্ষা করছে। কেন ঘরে বসে আছো। তোমাকে যারা চাকর বানাতে চায়, কেন তাদের চাকর হয়ে থাকবে। আমাদের সাথে এসো। জীবনে বৈচিত্র্য পাবে। হিরোর মত বাঁচো। যেখানে আছে সুন্দরী রমণী। সুস্বাদু খাবার। সবার উপরে থাকবে তোমার ইচ্ছার প্রাধান্য। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। আর অনৈতিক কোন কাজ আমরা তো করি না।” মেয়েদের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনি করে প্রলোভন দেখানো হয়ে থাকে।[ads1]
৪. উপযুক্ত কাজের অভাব : বিশ্বের সব দেশেই বাড়ছে শিক্ষিত বেকারত্বের সংখ্যা। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কাজের অভাব দেখা যাচ্ছে। স্বাচ্ছন্দ্যেময় জীবনের বড্ড অভাব। অর্থনৈতিক মুক্তি মিলছে না। মিলছে না দৈনন্দিন জীবনের খরচ। নিজের স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ অনেকে বেকার যুবক। সামাজিকভাবে তুলনা করে নিজেকে আরও ছোট মনে করতে থাকে নিজেকে। তখন এসে ভুল পথে পা বাড়ায় শিক্ষিত, মেধাবী তরুণ তরুণীরা। অনেকে তাদের সৃজনশীলতার মূল্য দেয় না। ঝরে পরে সে সব মেধাবীরা। আন্তর্জাতিক অপরাধ সংস্থা দেখেছে গ্রীস, ফ্রান্স, ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীতে যোগদানের প্রবণতা বেড়েছে। দর্শনশাস্ত্রে আছে, মেধাবীরা শয়তান হলে, তা হয় ভয়ঙ্কর।
৫. বৈশ্বিক ক্রোধ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা : বিশ্বে একটা ক্রোধ প্রজাতি গড়ে উঠছে। এরা মনে করেন, নিজে যা করবেন তাই ঠিক। আপনি যেমনটা চান তাই অন্যকে করতে হবে। আপনার বিপরীতে কেউ কিছু করতে পারবে না। আপনি যখন আরেকজনের ব্যাক্তি স্বাধীনতাকে খর্ব করবেন। তখন বেড়ে উঠবে ক্রোধ। জেগে উঠবে প্রতিহিংসা। ধর্ম নিয়ে অনেকে কটু কথা, তীব্র, তিক্ত কথা বলেন। অনেকে ধর্মকে হেয় করেন। বৈষম্য, তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য করেন। অনেকে এর বিপরীত কথা বলতে গিয়ে আরও বেশী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আস্থা হিসেবে খুঁজে পান নিষিদ্ধ সংগঠনের। আর তখন ভুল করে ফেলেন তারা। বিচ্ছিন্ন সংগঠনগুলোর অর্থনৈতিক শক্তির বলয় বেশ সবল। আকর্ষণীয় অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেখে অনেক সুন্দরী রমণী, তরুণ, তরুণী এদের দলে আসছে। এরাও নিজ দলে ভিড়িয়ে নিচ্ছে যে কোন উপায়ে। এই সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে আছে ব্যাংক। এরা তেল বিক্রি করে অর্থ আয় করে। জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে। অর্থ যোগানের আছে আরও অভিনব উৎস। আর তাই মধ্যপ্রাচ্যে, ইউরোপের বিভ্রান্ত মানুষের এত প্রবল আগ্রহ আইএস যোগদানের জন্য।
৬. উদ্দেশ্যহীন জীবন: আইএস দল কোন মিশনে যাওয়ার আগে তাদের ক্যাপটোগেন পিল খাইয়ে নেয়া হয়। যার ফলে কোন স্বাভাবিক মানবিক চেতনা কাজ করে না। এরা নিজেদের বাক-স্বাধীনতার মুক্তির আলোকে পথ খোঁজ করেন। ধংস করে তা অর্জন করতে চান। ইউরোপের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, মধ্য প্রাচ্যের অবিরাম যুদ্ধ, দাঙ্গার ও মূল কারণ এই দলে যোগ দেয়ার। অনেকের জীবনে বেঁচে থাকার আশা যেখানে মূল্যহীন। তাদের দিক ভ্রান্ত করে বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীদের দলে ভিড়িয়ে আনা আরও বেশী সহজ। হতাশা এসব ছেলেদের পথভ্রষ্টের অন্যতম কারণ। পারিবারিক অশান্তি, মতের অমিল এমনকি কখনও কখনও প্রেম ভালোবাসায় ব্যর্থ হওয়ার পর অনেকেই হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। এ সুযোগে বন্ধু বান্ধবের প্রলোভনে নাম লেখায় মাদকের মত মৃত্যুপুরীতে। ধীরে ধীরে মাদকের কাছে হার মানতে থাকে এ ধরণের ছেলেদের সব চাহিদা ও জীবনের অন্যান্য চাওয়া পাওয়া। হতাশা কাটাতে যে মাদকের আশ্রয়ে শান্তি খুঁজতে চায় এসব তরুণদের সেই মাদকই তরাণ্বিত করে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠিগুলোকে কাছে ডাকতে। অনেক পরিবারের অভিভাবকগণ নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্য বা অন্যান্য কাজে এত বেশি ব্যস্ত থাকেন যে, সন্তানদের খোঁজ খবর রাখার সুযোগ পান না। ফলে এসব পরিবারের সন্তানরা বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে উঠতে পারে এবং সন্তানরা অভিভাবকদের অজান্তেই দুষ্ট চক্রের কবলে পড়ে ক্রমে মাদকাসক্ত হতে পারে।[ads1]
৭. মাদক: বেসরকারী স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অনেক ছাত্র মাদকের মায়াজালে জড়িয়ে পড়ছে। একটা পর্যায়ে টাকা পয়সা ঘাটতি হওয়ায় ভিন্ন পথে পা বাড়াতেও পিছপা হচ্ছেন না তারা। এ সুযোগে অক্টোপাসের মত জাল বিস্তার করে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো। প্রথমে বিভিন্ন মেসেজ ও ফেইসবুক চ্যাটের মাধ্যমে এসব তরুণদের উৎসাহিত করে। হতাশা কাটাতে নিজেরাই তাদের মাদকের ব্যবস্থা করে। এমনকি করে কাউন্সিলিং। একটা পর্যায়ে মাদকের দাস হয়ে পরে তরুণরা। তখন জঙ্গিরাও মোটিভেট করে এসব তরুণদের। অর্থাৎ সেই মাদকই তাদের জঙ্গি হওয়ার পথকে মসৃণ করে। -বাংলাদেশ প্রতিদিন