[ads1]অর্থ পাচার মামলায় সাত বছর সাজার কারণে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জাতীয় সংসদসহ সব ধরনের নির্বাচনে অংশ নেওয়া অনেকটাই ‘অনিশ্চিত’ হয়ে গেল। অর্থ পাচার মামলায় সাজা নিয়ে এ সরকারের আমলে তার সশরীরে আপিল করার সম্ভাবনাও কম। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ না করলে সংবিধানসম্মতভাবেই আগামী সাত বছর সব ধরনের নির্বাচনে অযোগ্য হবেন তিনি।
একইভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে। এ মামলায়ও বেগম জিয়ার ‘সাজার’ আশঙ্কা করছেন দলের আইনজীবীরা। ‘সাজা’ হলে খালেদা জিয়াকেও আত্মসমর্পণ করে জেলে যেতে হবে। পরে জামিন চেয়ে আপিল করতে হবে। সরকার হার্ডলাইনে থাকলে তাকেও সাজার ঘানি টানতে হবে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে ‘অযোগ্য’ হতে পারেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীও।
এ পরিস্থিতিতে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এ নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে সর্বত্রই হতাশা দেখা যাচ্ছে। তারেক রহমানের কারাদণ্ডের রায়ের পর বৃহস্পতিবার রাতেই সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু ওই মামলায় তারেকের অনুপস্থিতিতে আইনিভাবে লড়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বৈঠকে অংশ নেওয়া সিনিয়র আইনজীবীরাও হতাশ হন। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ‘সাজা’ কার্যকর হলে দলকে এক প্লাটফরমে রাখাই কঠিন কাজ হবে। শীর্ষ দুই নেতাকে বাইরে রেখে ‘আগাম’ নির্বাচনও দিতে পারে সরকার। বিএনপির একটি অংশের সেই নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে এবার বিএনপিতে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করবেন, ভবিষ্যতে দলে তাদের ঠাঁই হবে না বলেও মনে করেন বিএনপির ওই নেতা। তার ভাষায়, অতীতে অনেককেই চেয়ারপারসন ক্ষমা করে দিয়েছেন। ভবিষ্যতে খালেদা জিয়া চাইলেও ত্যাগী নেতা-কর্মীরা সুযোগসন্ধানীদের ক্ষমা করবে না।
জানা যায়, দলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রে সেই বিষয়টি মাথায় রাখছেন বেগম জিয়া। ইতিমধ্যে ৪২ সদস্যের কমিটি ঘোষণা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই বিশাল আকারের নির্বাহী কমিটি ঘোষণা হতে পারে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ দেশে ফিরবেন। তিনি ফিরলেই কমিটি দেওয়া হবে বলে ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছেন বিএনপি-প্রধান। এদিকে কমিটি দিয়েই পবিত্র হজব্রত পালন করতে সৌদি আরব যাবেন খালেদা জিয়া। সে সময় লন্ডন থেকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সপরিবার হজে আসতে পারেন।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত এবং সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না; যদি (ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে।’ [ads1]
আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আপিল না করে খালাস না হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে তারেক রহমানের অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। নিয়মিত আপিলে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে। আপিল করলে আপিল বিভাগ থেকে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করাতে হবে। রায় স্থগিত না হলে তারেক নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে আপিল যখনই করুন না কেন, তারেক রহমানকে আত্মসমর্পণ করে জেলে যেতেই হবে। বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা বলছেন, তারেক রহমানকে বর্তমান বাস্তবতায় নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য অনুকূল পরিবেশ নেই। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় তিনি দেশে ফেরার মতো ঝুঁকি নেবেন না। তাই তার আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকছে না তার।
তারেক রহমানের সাত বছরের সাজা প্রসঙ্গে সুপ্রিমকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, ‘সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। তবে আইনের স্বাভাবিক নিয়ম হলো কোনো ফৌজদারি মামলায় কারও সাজা হলে তাকে সশরীরে এসে আপিল করতে হবে। নিজকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে। তারেক রহমানের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। যদি তিনি নিয়ম মেনে আপিল না করেন, তাহলে সাংবিধানিকভাবে সাজাকালীন সাত বছর এবং মুক্তিলাভের পর আরও দুই বছর কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ‘তারেক রহমান নির্বাচনে অযোগ্য, এটা এখনই বলার সুযোগ নেই। এখনো আপিলের সুযোগ রয়েছে। তবে তারেক রহমানকে আপিল করতে হলে জেলে যেতে হবে এটাই আইনি ভাষা। নিম্ন আদালতে তার খালাসের রায়ের পর যখন আবার সরকার আবেদন করল তখনই আমরা ধরে নিয়েছিলাম, এমনটাই করবে সরকার। চেয়ারপারসনের ব্যাপারেও সরকারের মনোভাব একই বলে মনে হচ্ছে।’
[ads2]এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান তরুণ প্রজন্মের উদীয়মান নেতা। তার সাজার ঘোষণায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটু হতাশাবোধ থাকবেই। তবে এটাকে শক্তিতে পরিণত করতে হবে।’ এদিকে দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা হচ্ছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম। ইতিমধ্যে বাদীপক্ষের বেশির ভাগ সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। প্রতি সপ্তাহেই নির্ধারণ হচ্ছে মামলার নতুন তারিখ। আগামী বৃহস্পতিবারও সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। বাদীপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরার পরই হবে যুক্তিতর্ক। এরপর ঘোষণা করা হবে রায়। বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এ মামলার রায়ও দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ঘোষিত হবে। সে ক্ষেত্রে সরকার সাজা দেবে এটা অনেকটাই পরিষ্কার। নইলে এ দুই মামলাই ভিত্তিহীন। এতদিন এ মামলা চলতে পারে না। এ ছাড়া নাইকো ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলাসহ ২৭টি মামলার আসামি বেগম জিয়া। সব মামলার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে চলছে বলে বিএনপির আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
জানা যায়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ছাড়াও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধশত মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি রয়েছে দুর্নীতির মামলা। তার বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা দুটি মামলা চলছে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ। এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণও শেষ পর্যায়ে। যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণা হবে। বেশ কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, ‘জিয়া পরিবারের সদস্যদের সাজা দিতে সরকার উঠেপড়ে লেগেছে। এরই মধ্যে এক মামলায় তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের মামলায়ও আমরা ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা করছি। উদ্দেশ্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচন এবং রাজনীতি থেকে দূরে রাখা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এসব মামলায় ন্যায়বিচার হলে সবই মিথ্যা প্রমাণ হবে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আইনিভাবেই মামলাগুলো মোকাবিলা করছি।’
এদিকে অর্থপাচার মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়কে ‘ন্যায়বিচার’ পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরলে সময়মতো এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা হবে। গতকাল সকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন আইনি ব্যাখ্যাসহ এক সংবাদ সম্মেলনে দলের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ যখন সময় আসবে, তারেক রহমান এই মাটিতে আসতে পারবেন। আমরা এর বিরুদ্ধে আপিল করব। আপিল করে আমরা দেখাতে পারব, এ মামলা সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে হয়েছিল।’[ads2]
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন