শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারের সংজ্ঞা নিয়ে এবার নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নাঙ্গলকোট পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুদ্দিন কালু।
মুক্তিযুদ্ধের দলিল অনুযায়ী, কালুর বাবা হাজী আকবর আলী শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন। জবাবে শামসুদ্দিন কালু বলেছেন, ‘বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও ফেসবুকে প্রায়ই একটি কথা আসে, আমার বাবা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। আমার প্রশ্ন রাজাকারটা কী। এটা আগে জানতে হবে। রাজাকার আর শান্তি কমিটির সদস্য এক নয়। আমি রাজাকারের ছেলে নই। আমার বাবা শান্তি কমিটিতে ছিলেন, রাজাকার ছিলেন না। আমি ছাত্রলীগ করি।’
নাঙ্গলকোট আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, কুমিল্লার কাগজের সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক আবুল কাশেম হৃদয়ের লেখা ‘অপারেশন বিল অ্যান্ড বার্ন, যুদ্ধাপরাধ (কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর) দলিলপত্র’ বইয়ে উল্লেখ করা আছে, কালুর বাবা হাজি আকবর আলী শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখলের অভিযোগে স্বাধীনতার পরে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা কলিমুল্লাহকেও তিনি হত্যা করেছিলেন। এ সব ঘটনায় ১৯৭২ সালে লাকসাম থানায় হাজি আকবর আলীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ মামলায় তিনি জেলেও যান।
এ বিষয়ে শামসুদ্দিন কালু জানান, ‘বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এটা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছিল। পরে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে আমি যা জানি সেটা বলেছি। আমার বাবা অন্যায় করলে সেটি তার ব্যাপার। আমার অপরাধটা কী। আমি রাজনীতি করি, এটা কি আমার অপরাধ। আমাদের দলের কিছু মানুষ এগুলো সামনে আনছেন। কার বাপ-দাদা কী করেছেন, সেটা তাদের বিষয়। আমার বাবা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন, তাই বলে কি আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করতে পারব না।’
উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কালুর নজর এবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদের দিকে। এলাকায় ১০ একর জমির ওপর নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল বাড়ি। তিনি একাই এলাকার ছয় থেকে সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। এ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে।
নাঙ্গলকোটের নেতারা বলেন, বাংলাদেশে নাঙ্গলকোটেই স্বাধীনতা বিরোধীদের সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশ ঘটেছে। অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন স্তরে কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদেও স্থান করে নিয়েছেন স্বাধীনতা বিরোধীদের সন্তান বা পোষ্যরা। এখানে মূল আওয়ামী লীগের কর্মীরা একেবারে কোনঠাসা হয়ে আছে।