শতবর্ষী মাকে রাস্তায় ফেলল ছোট ছেলে, রাত কাটল বড় ছেলের গরুর ঘরে

0

‘ছেলে আমার মস্ত মানুষ মস্ত অফিসার/ মস্ত ফ্লাটে যায় না দেখা এপার ওপার/ নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামি দামি/ সব চেয়ে কম দামি ছিলাম একমাত্র আমি।’ সঙ্গীত শিল্পী নচিকেতার এই বিখ্যাত গানকেও হার মানিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে নয় নাটোরের শতবর্ষী ৫ সন্তানের জননী অন্ধ তারাবানুকে রাতের আঁধারে রাস্তায় ফেলে গেল তার প্রিয় ছোট ছেলে আজাদ।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জোর করে বড় ছেলে মানিকের বাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসলে দুই নাতি ও তাদের স্ত্রীরা অন্ধ এই বৃদ্ধাকে রাতে থাকতে দেন বাড়ির গোয়াল ঘরে।

বুধবার রাতে এমন নির্মম ঘটনা ঘটেছে নাটোর সদরের ছাতনী ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়- এলাকার শতাধিক সাধারণ নারী পুরুষ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বৃদ্ধার তিন ছেলে মানিক (৭৫), হানিফ (৭০) ও আজাদকে (৬০) বোঝানোর চেষ্টা করছেন।

খবর পেয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জোবায়ের হাবিবকে বৃহস্পতিবার দুপুরে বৃদ্ধার কাছে পাঠিয়ে তাকে তার মেয়ের বাড়িতে রেখে খাবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছেন।

স্থানীয় সংবাদকর্মী মুসা আকন্দ ও এলাকাবাসী জানান, ৩ ছেলের আধপাকা বাড়ি ও প্রয়োজনীয় জমিজমা থাকার পরও তারা কেউ মায়ের দায়িত্ব নেননি। অন্ধ তারাবানু তার বড় মেয়ে পাশের গ্রামের বায়লা বেগমের বাড়িতে থাকতেন। তার বয়স্ক ভাতার সামান্য টাকাও তিনি এ কারণে মেয়ে আর জামাইকে দিতেন। এতে বাদসাধে ছোট দুই ছেলে আর বড় ছেলের ঘরের দুই নাতি। সবাই সেই টাকায় সমভাগ চান। টাকা ভাগ হওয়ার জন্য এবার ৩ ছেলের ঘরেই এক মাস করে বৃদ্ধাকে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। অক্টোবর মাস বৃদ্ধা ছিলেন ছোট ছেলে আজাদের সংসারে। নভেম্বর মাসের দুই তারিখ পার হয়ে গেলেও হিসাব মতে বড় ছেলে মাকে নেয়নি বলে ছোট ছেলে অন্ধ মাকে ফেলে যায় গ্রামের রাস্তায়।

অসুস্থ বড় ছেলের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে এলাকার দুই জনপ্রতিনিধি জাহিদুল ইসলাম ও নূর ইসলাম বাবু এবং সাধারণ মানুষ বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে দিয়ে যান। কিন্তু মানুষ চলে গেলে বড় ছেলের দুই সন্তান জাফর ও রেজাউল এবং তাদের স্ত্রীরা বৃদ্ধাকে বাড়ির গোয়াল ঘরে আশ্রয় দেন।

বৃহস্পতিবার বিষয়টি জেনে এলাকার শত শত মানুষ বৃদ্ধাকে একনজর দেখে ওই পরিবারের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন। এ সময় অন্ধ তারাবানু এই প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন- বাবা আল্লাহ রাসুলের দোহাই লাগে তোমরা আমাকে নাটোর নিয়ে যেও না, আর যে কয়দিন বাঁচি সেই কয়দিন আমি আমার ছেলেদের সাথেই থাকতে চাই। এক মুঠো মুড়ি চিড়া আর কলা হলেই আমার চলে, আমি ভাত চাই না।

বৃদ্ধার এসব কথা শুনে সংবাদ কর্মীসহ স্থানীয়দের চোখে অশ্রু দেখা গেলেও মন গলেনি নিজের পেটের সন্তানদের। বড় ছেলে মানিক বলেছেন- সংসারে তার নিজের কোনো দাম নেই। দুই ছেলের দয়ায় তাকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। তাই ইচ্ছে থাকলেও মায়ের জন্য কিছু করতে পারেননি।

উৎসঃ   যুগান্তর
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More