দেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৯৯ হাজার ১০৩ জন নাগরিক অবৈধভাবে বসবাস করছেন। ট্যুরিস্ট, ব্যবসায়ী, খেলোয়াড়, ছাত্রসহ নানারকম ভিসা নিয়ে বিদেশি পুরুষ ও নারী বাংলাদেশে এসেছেন। কিন্তু, পরে তাদের ভিসার মেয়াদ পার হয়েছে। কিন্তু নতুন করে তারা আর ভিসা নেননি। কোনো কোনো অবৈধ নাগরিককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে পরে তাদের কাছে পাসপোর্ট চাইলে তারা পাসপোর্টও দেখাতে পারেনি। তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বসবাস করছেন। কেউ ব্যবসা করছেন। কেউ করছেন চাকরি। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তারা কেউ আর নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন না।
তাদের মধ্যে আফ্রিকার নাগরিক বেশি।
আফ্রিকার নাগরিকদের কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছে প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপকর্মে। কেউ কেউ ব্লু-আইসের ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছেন। এসব বিদেশি অবৈধভাবে দেশে থাকার কারণে সরকার বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল মানবজমিনকে জানান, ‘যে সব বিদেশি ভিসা নবায়ন করেননি তাদের ভিসা নবায়ন করতে আসলে তাদের ভিসা নবায়ন করবে সরকার। যারা প্রতারণার কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভারত, নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, আরব আমিরাত, ঘানা, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরাইন, ব্রুনাই, তুরস্ক ও মিশরের নাগরিক রয়েছেন যারা তাদের ভিসায় অন-অ্যারাইভাল ভিসা ব্যবহার করে।
সূত্র জানায়, গত ৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৯৮টি দেশের ২ লাখ ৩ হাজার ২১২ জন নাগরিক অবস্থান করছেন। তারা বিভিন্ন কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে এসেছেন। অধিকাংশই দেশে কী করছেন তা পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থাগুলো পুরোপুরি পর্যবেক্ষণ করছেন না। এতে দেশে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৯৯ হাজার ১০৩ জন বিদেশি অবৈধভাবে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা ৭০ হাজার ৩০৫ জন, চীনের রয়েছে ১৬ হাজার ৫৩১ জন, ফিলিপাইনের ৯ হাজার ৯১৫ জন, নাইজেরিয়ার ২ হাজার ৬৮ জন, সোমালিয়ার ১ হাজার ১০ জন, কেনিয়ার ৭৯ জন ও ক্যামেরুনের ৮২ জন।
সূত্র জানায়, যে সব অবৈধ বিদেশি দেশে অবস্থান করছেন তাদের কেউ কেউ মাদক ব্যবসা, ব্যাংকের এটিএম বুথের জালিয়াতি, জাল টাকার ব্যবসা, ভিওআইপি ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাচালান, মানব পাচার ও ক্যাসিনো কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন। প্রতারণার কাজে তারা নারীদেরকেও ব্যবহার করছেন। তারা মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ফেসবুকসহ নানা মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা করছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ৩৭ ধরনের ভিসা শ্রেণি আছে।
এসব শ্রেণির মধ্যে বিজনেস (বি), এ৩, ট্যুরিস্ট (টি), স্টুডেন্ট (এস) ও ভিসা অন-অ্যারাইভাল (ভিওএ) গ্রহণকারী বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই চার ক্যাটাগরির ভিসাতেই ৫১ শতাংশ বিদেশি বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। ভিসা নীতিমালা পরিপন্থি কার্যক্রম এবং অবৈধভাবে শিল্প-কারখানাসহ বিভিন্ন খাতে কাজ করার সুযোগ পাওয়ায় বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ কমে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ রাজধানীর উত্তরা, ঢাকা, বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ বিদেশিদের গ্রেপ্তার করে। এদের অধিকাংশই আফ্রিকার নাগরিক। তাদের মানব পাচার ও প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকে। কিন্তু, এরা খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালত থেকে জামিন পেয়ে আবার প্রতারণার কাজে জড়িয়ে পড়ছে।