ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্কে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোটদানের ক্ষেত্রে শতভাগ স্বচ্ছতা না থাকার কারণ দেখিয়ে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকরা ইভিএমের পক্ষে নয়। তাদের মতামতকে আমলে না দিয়ে সকল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে আসছে নির্বাচন কমিশন। আয়োজিত এসব নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ভোটারদের। কিন্তু ভোগান্তিতে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ইভিএমে জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা পরও ভোটগ্রহণ করতে হয়েছে ইসিকে। ভোট না দিয়েই ফিরতে হয়েছে অনেক ভোটারের। এতে ইভিএমের প্রতি ভোটারদের আস্থা কমেছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, রংপুর নির্বাচনে ইভিএম হ্যাং হয়ে যাওয়া, ধীরগতিসহ নানা জটিলতা ছিল। এ জন্য অনেকে ভোট দিতে পারেনি।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, ইভিএম কিছুটা স্লো কাজ করছে এটা ঠিক।
তবে ইভিএমের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে ব্যালট ছিনতাই হতো, মারামারি হতো। কিন্তু ইভিএমে নির্বাচন হওয়ার ফলে সেটি হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের সাড়ে তিন ঘণ্টা পরে রাত আটটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে আসলে করার কিছু নাই। যতক্ষণ পর্যন্ত ভোটার থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচন চালাতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের লোকজনের দূরদর্শিতার অভাব আছে। তা না হলে এতো সময় লাগতো না। যেমন-একটি কেন্দ্রে ৫টি বুথ ছিল। কিন্তু দরজা ছিল একটি। এখানে প্রবেশ ও বাহিরের পথ একটি হওয়ায় ভোট দিতে দেরি হয়ে গেছে।
আঙুলের ছাপ না মেলায় দেরি হচ্ছে-এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক বৃদ্ধারাও ভোট দিতে পেরেছে। তাদের ফিঙ্গার মিলেছে। এ ছাড়া ভোট দেয়ার আগে ভোটারদেরকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যারা মোবাইল ব্যবহার করতে পারে, ইভিএমে ভোট দিতে তাদের সমস্যা হওয়ার কথা না। এটা কঠিন কোনো টেকনলজি না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মানবজমিনকে বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই ইভিএমের ত্রুটির কথা বলে আসছি। রংপুর নির্বাচনে সেটি আবারো প্রমাণিত হলো। এতে নির্বাচন কমিশন ও ইভিএমের প্রতি জনগণের আস্থা আরো কমলো। তিনি বলেন, ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের অতি উৎসাহের কারণ হলো এতে স্বার্থ রয়েছে। একটি হলো বাণিজ্যিক স্বার্থ, আরেকটি হলো ফল পরিবর্তন করা যায়।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বলেছেন, ইভিএমের প্রতি আস্থা অর্জনে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। ইভিএম হ্যাং হয়ে যাওয়া, ধীরগতিসহ নানা জটিলতা ছিল। তাই ভোটারদের মধ্যে ইভিএম নিয়ে অনাস্থা বেড়েছে।
জাপার মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান ইভিএম নিয়ে হতাশা ও অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখি ইভিএম হ্যাং হয়েছে। আমি ১৫ মিনিটের মতো অপেক্ষা করেও ভোট দিতে পারিনি। এই যদি ইভিএমের অবস্থা হয়, তাহলে মানুষ ভোট দেবে কীভাবে?