ডলার সংকটে টালমাটাল অবস্থা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। রপ্তানি আয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে রেমিট্যান্স। এতে আরও বেশি চাপ পড়েছে রিজার্ভে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, বুধবার (২৮শে ডিসেম্বর) দিন শেষে রিজার্ভ দাড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৮৩ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। এক বছর আগের একই দিনে এর পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৫৮০ কোটি ২২ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ১ হাজার ১৯৬ কোটি ৩৩ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাস শেষেও দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ১৮২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। বুধবার (২৮শে ডিসেম্বর) দিন শেষে রিজার্ভ দাড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৮৩ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের এই ছয় মাসে রিজার্ভ কমেছে ৭৯৮ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।
জানা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকেই দেশে ব্যাপকহারে ডলার সংকট দেখা দেয়। চাপ সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের আমদানি দায় পরিশোধে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হয় ৬০৫ কোটি ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রি করেছিল আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে রির্জাভের হিসাব পদ্ধতিতে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলসহ কয়েকটি তহবিলে বিনিয়োগ করা ৮ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। এটি বাদ দিলে রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারের আশেপাশে থাকবে। যা দিয়ে বর্তমানে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। অর্থাৎ খরচ করার মতো এখন ২৫ বিলিয়ন ডলারের আশে পাশে রিজার্ভ রয়েছে।
সূত্র জানায়, ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করলে আমদানি ব্যয় কমানোয় মনযোগী হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে মোটরকার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়। একই সঙ্গে অতি জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সকল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে বলা হয়।
আমদানির চেয়ে রপ্তানি আয় কম হওয়ায় চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের শুরু থেকে বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দেয়। গত অক্টোবর মাস নিয়ে টানা চার মাস বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়তে হয় দেশকে। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) মোট বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৫৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এ ছাড়া অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) টানা ২ বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। এর পরের মাস সেপ্টেম্বর থেকে টানা তিন মাস দেড় বিলিয়ন ডলারের ঘরে আসে রেমিট্যান্স। সবশেষ সদস্য বিদায়ী নভেম্বর মাসে রেমিট্যান্সন এসেছে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার।
এদিকে চলতি মাসের প্রথম ২৩ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ৪১ লাখ ডলার। এসব কারণে চাপ বাড়তে থাকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে।