বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের ছেড়ে দেওয়া আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে (জাপা) নাটকীয়তা জমে উঠেছে। মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই নাটকীয়তা শুরু হয়।
এদিন দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাবেক শিবির নেতা মো. মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল জাপায় যোগ দিয়েই মনোনয়ন পেয়ে গেছেন। অন্যদিকে দলের নেতাকর্মীদের বিরোধিতা ও সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার পরিবর্তে অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ভাসানীর নাম ঘোষণা করেছে জাপা।
দলের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে পার্টির মনোনয়ন বোর্ডের এক বিশেষ সভায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের প্রার্থী পরির্বতন করা হয়েছে। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক ও চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে মো. মোস্তাফিজুর রহমান মুকুলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা মহাসমাবেশের পর বগুড়া-৬ আসনের গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুন-অর-রশিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান জাহিদ ও সংরক্ষিত নারী আসনের ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সংসদ সদস্যের পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেন।
এরপর গত ২৭ ডিসেম্বর চারটি আসনে দলের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিল জাপা। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি লাঙল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ (ঠাকুরগাঁও – ৩), মো. নূরুল ইসলাম ওমর (বগুড়া-৬) ও শাহীন মোস্তফা কামাল-(বগুড়া-৪)।
বিএনপির সংসদ সদস্যদের ছেড়ে দেওয়া সাতটি আসনের ছয়টিতে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই ছয় আসনের একটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী করেছিল রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদের পাশাপাশি তিনি চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত মহাসচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রসমাজের সাবেক নেতা আবদুল হামিদ ভাসানী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক ও এখন যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্বে রয়েছেন।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজ উদ্দিন ও ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ওমর দুজনেই জি এম কাদেরের অনুসারী ও সাবেক সংসদ সদস্য। বগুড়া জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মোকসেদুলও জি এম কাদেরের অনুসারী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধার নামটি জোরেশোরে শোনা গেলেও শেষপর্যন্ত তাকে মনোনয়ন দেয়নি জাপার মনোনয়ন বোর্ড। জাপার সাবেক এই সংসদ সদস্যকে দল থেকে বহিষ্কারের পর তিনি চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছেন। তার মামলাতেই জি এম কাদেরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে উচ্চ আদালত। ওই আসনে জিয়াউল হক মৃধার জামাতা ও জাপার চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দেওয়ার পর দলে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।
দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি ছিল, জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সঙ্গে চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের দ্বন্দ্বের ‘মূল হোতা’ রেজাউল ইসলামকে যেন কোনোভাবেই মনোনয়ন দেওয়া না হয়। বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদও তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন বলে জাপার নেতারা জানিয়েছেন।
গত ১ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে স্তিমিত থাকেন রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। এর দুদিন পর তার মনোনয়ন বাতিলের ঘোষণা এলো।
এর থেকেও বড় নাটকীয়তা আসে মো. মোস্তাফিজুর রহমান মুকুলের মনোনয়ন ঘোষণায়। সাবেক শিবির নেতা মুকুল ২০২১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। জেলায় তিনি ক্রীড়ামোদী হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন পাবেন, এ কথা মানতে পারছেন না দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘রেজাউল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আমাদের জানিয়েছে, সে এ নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দলের প্রার্থী পরিবর্তন করতেই হতো। আর মুকুলের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা ঠিক না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের দাবি ছিল, তাকে প্রার্থী করা হলে তিনি দলকে জিতিয়ে আনতে পারবেন। মনোনয়ন বোর্ডেও বেশ ইমপ্রেসিভ মনে হয়েছে তাকে।’