প্রেমকে কেন্দ্রে করে মুন্সিগঞ্জ শহরের কোর্টগাঁও এলাকার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতির বাসভবনে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় নিহত কিশোরীর ভাই জিদান মাহমুদ বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় নিহত কিশোরীর বন্ধু বিজয় রহমান ও তার প্রেমিকা আদিবাকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
ঘটনার পর থেকে নিহত কিশোরীর বন্ধু বিজয় পলাতক রয়েছে। তবে তার প্রেমিকা আদিবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার বিকেল ৪ টার দিকে শহরের উপকণ্ঠ নয়াগাঁও গ্রামের বাড়ি থেকে আদিবাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদিবা জেলা সদরের পঞ্চসার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য জাহিদ হাসানের মেয়ে। নিহত কিশোরীর বন্ধু পলাতক বিজয় রহমান শহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আরিফুর রহমানের ছেলে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব মামলা রুজুর সত্যতা নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাকে পুলিশের হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে প্রেম-সংক্রান্ত ঘটনায় এসএসসি পরীক্ষার্থী কিশোরীকে মারধর ও শ্বাসরোধে হত্যার দায় স্বীকার করেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের কোর্টগাঁও এলাকার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এবং জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আরিফুর রহমানের বাড়িতে ডেকে নিয়ে তার ছেলে বিজয় ও প্রেমিকা আদিবা এসএসসি পরীক্ষার্থী জেসিকা মাহমুদকে (১৬) মারধর ও শ্বাসরোধ করলে সে অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর বিজয় প্রথমে তাকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসক জেসিকাকে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু দু ঘণ্টা বন্ধু বিজয় ফের এসএসসি পরীক্ষার্থীকে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত কিশোরী জেসিকা সদর উপজেলার সাতানিখিল গ্রামের সৌদিপ্রবাসী সেলিম মাহমুদের মেয়ে। সে শহরের কোর্টগাঁও এলাকায় মায়ের সঙ্গে ভাড়া বাসায় বসবাস থাকত। শহরের এভিজেএম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার তার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।
স্থানীয়রা জানান, জেসিকার সঙ্গেও বিজয়ের প্রথম প্রেম ছিল। তবে আদিবাকে বিয়ের আশ্বাস দেওয়ার পর দুই কিশোরীর ঝগড়া হয়। এর জের ধরে আদিবাকে নিজ বাসায় ডেকে নেয় বিজয়।
নিহতের পরিবারের দাবি, বিকেলে আরিফুর রহমানের ছেলে বিজয়ের বাড়িতে গেলে তাকে হত্যা করা হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায় বিজয়।
তবে ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমানের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে ওই কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার ছাদ খোলা থাকে। মেয়েটি কীভাবে আমার বাসার ছাদে উঠেছে, তা আমরা বুঝতে পারছি না। আমার বাসার ছাদ থেকে লাফ দিয়েছে বলে শুনেছি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমান ও কয়েকজন মিলে প্রথমে জেসিকাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় নিয়ে আসেন। সেখান থেকে তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। পরে ঢাকা রওনা হয়ে রাত ৮টার দিকে তাকে নিয়ে পুনরায় হাসপাতালে ফেরত আসেন তারা। তখন দায়িত্বরত চিকিৎসক জেসিকাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মঙ্গলবার সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. শৈবাল বসাক জানান, সন্ধ্যায় ওই কিশোরীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছিল। পরে রাত ৮টার দিকে আবার মৃত অবস্থায় মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তার মুখসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ৫তলা ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের জানায় হাসপাতালে নিয়ে আসা ছেলেটি। তবে এমন ঘটনা হলে রোগীর মাথা রক্তক্ষরণের চিহ্ন থাকতো, যা এই রোগীর ছিল না। ময়নাতদন্ত ছাড়া কিছুই বলা যাচ্ছে না।
জেসিকার ভাই জিদান মঙ্গলবার জানান, মঙ্গলবার বিকেলে ঘুরতে বাড়ি থেকে বের হয় জেসিকা। সন্ধ্যা পর্যন্ত সে বাড়ি ফেরেনি। পরে ৬টার দিকে হাসপাতাল থেকে বাড়ির পাশের প্রতিবেশী বিজয় নামের এক বন্ধু ফোন দিয়ে জানায় জেসিকার অবস্থা খারাপ। সে ছাদ থেকে লাফ দিয়েছিল। আমরা হাসপাতালে দৌড়ে আসার পর বিজয় চলে যায়। অ্যাম্বুলেন্স তাকে ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় তার। এটা হত্যাকাণ্ড। ওরা আমাদের বলছে ছাদ থেকে লাফ দিসে, আর হাসপাতালে জানিয়েছে পড়ে গেছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) খানদার খায়রুল ইসলাম জানান, হাসপাতাল থেকে মরদেহ পেয়েছি। আইনগত কার্যক্রম ও তদন্ত চলছে। যারা হাসপাতালে নিয়ে এসেছে তারা ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি বলছে। তবে প্রকৃত ঘটনা কী তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মৃত্যু না হত্যাকাণ্ড তাও দেখা হচ্ছে। নিহতের মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনার সময় যারা ছিল তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
বুধবার পুলিশ জানায়, ময়নাতদন্ত শেষে জেসিকার মরদেহ পরিবারের কাছে দেওয়া হয়েছে। গ্রামের বাড়িতে তার দাফন হবে।