আওয়ামী আইনজীবীদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে হাইকোর্টের সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুক।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর একটি চিঠিতে এই আবেদন জানান তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সেই চিঠি প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করেন। আওয়ামী প্রধান বিচারপতি বিষয়টি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
এজলাস চলাকালে আইনজীবীদের বাদানুবাদের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি ১ জানুয়ারির।
ভিডিওতে দেখা যায়, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঁইয়াসহ কয়েকজন আইনজীবী বিচারক মোহাম্মদ ফারুককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন।
যদিও তানভীর ভূঁইয়ার দাবি, তিনি বিচারককে গালি দেননি। ভিডিওটি সম্পাদনা করা হয়েছে।
তানভীর ভূঁইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
উল্লেখ্য, আইনজীবী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ তুলে ১ জানুয়ারি থেকে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন করেন আইনজীবীরা। অন্যদিকে বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিচারিক কাজে হস্তক্ষেপ, কর্মচারীদের মারধর, মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে আদালতের কর্মচারীরা বুধবার (৪ঠা জানুয়ারি) দিনভর কর্মবিরতি পালন করেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, জেলা জজ মোহাম্মদ ফারুক বিচারকার্য পরিচালনার জন্য এজলাসে ওঠেন। এরপর দৈনন্দিন কার্যতালিকার নির্ধারিত মামলাগুলো শুনানির জন্য নেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঁইয়া, সম্পাদক (প্রশাসন) আক্কাস আলী, আইনজীবী জুবায়ের ইসলামসহ ১০ থেকে ১৫ জন আইনজীবী সেখানে যান। এ সময় আইনজীবীরা জেলা জজের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন, চড়া গলায় গালিগালাজ করেন এবং এজলাস থেকে নেমে যেতে বলেন।
এ বিষয়ে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, এজলাসে অকথ্য গালিগালাজের ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও মর্মাহত। বিচারককে এজলাস থেকে নামতে বাধ্য করা সংবিধান ও আইন-বিরোধী। এটা একাধারে ফৌজদারি অপরাধ, আদালত অবমাননা ও পেশাগত অসদাচরণ।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (৫ই জানুয়ারি) আদালত অবমাননার স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সম্পাদকসহ তিন আইনজীবীকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। তারা হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. তানভীর ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) মো. আক্কাস আলী ও আইনজীবী জুবায়ের ইসলাম। তাদের প্রতি আদালত অবমাননার রুলও জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে ১৭ জানুয়ারি তাদের হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়েছে।
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে অচল আদালত:
এদিকে, আইনজীবী ও বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব আদালতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, কর্মচারীদের মারধরসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে বুধবার (৪ঠা জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন করে জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন। আর কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগসহ বিচারকের আপত্তিকর মন্তব্যে বিচার চেয়ে আইনজীবীরা সব আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন।
আইনজীবী ও কর্মচারীদের এমন অবস্থানে অচল হয়ে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালত, সিজিএম আদালত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। এতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে জেলার দূরদূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা পড়েন চরম বিড়ম্বনায়।
আদালত-সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ এনে ১ জানুয়ারি থেকে ওই আদালত বর্জন করে আসছিলেন আইনজীবীরা। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট বিচারকরা সভা করেন। ওই দিন নির্ধারিত সময়ের বেশ পরে শুরু হয় আদালতের কার্যক্রম। এর পরদিন বুধবার সকালে আগাম ঘোষণা ছাড়া আদালত প্রাঙ্গণে কর্মসূচি শুরু করে কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন। এ সময় আদালতের বিভিন্ন প্রবেশদ্বারে তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে আদালত বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জেলার দূরদূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা।