আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই ষড়যন্ত্র চলছে। মাঝে মাঝেই বামপন্থী ও হিন্দুত্ববাদী সরকার শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের নামে ক্রমেই হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদ ছড়াচ্ছে। আমাদের শিশুদের মধ্যে তাদের কু-প্রভাবকে প্রতিষ্ঠিত করছে। আজ ষষ্ঠ শ্রেণির বইগুলো নিয়ে কিছু আলোচনা করবো। মোটাদাগে পাঠ্যপুস্তকের সমস্যা হলো হিন্দুত্ববাদ ছাড়ানো, ইসলামী অনুশাসনের বিরোধীতা, মুসলিম জাতি হিসেবে পাঠ্যপুস্তকে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বের অভাব, ইংরেজদের আধুনিক হিসেবে উপস্থাপন ইত্যাদি। সবচেয়ে সমস্যাযুক্ত বই হলো সামাজিক বিজ্ঞান।
১. সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম পরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব নেই।
পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে আমাদের মুসলিম সন্তানেরা তাদের আত্মপরিচয় জানবে এবং নিজস্ব সংস্কৃতিতে গড়ে উঠবে। দুঃখজনকভাবে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে আমাদের মুসলিম পরিচয় অনুপস্থিত। মুসলিম পরিচয়কে প্রতিনিধিত্ব করে এমন কোনো প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা ও ইলাস্ট্রেশন নেই। উল্টো মুসলিম পরিচয়ের সাথে সাংঘর্ষিক কন্টেন্ট এড করা হয়েছে। ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের শহর। অথচ পুরো সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে মসজিদের ছবি নেই। বিপরীতে আছে প্রচুর মন্দিরের ছবি। বাংলাদেশ পৃথিবীর ৩য় বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ। অথচ আমাদের বাচ্চাদের পাঠ্যবই দেখে মনে হবে এরা মুসলিম না, সবাই মূর্তিপূজারি।
২. হিন্দুত্ববাদের প্রশংসা করা হয়েছে।
এদেশে ব্রাহ্মণ্যবাদী আর্যরা এসেছে ইরান মতান্তরে জার্মানী থেকে। তারা এসে এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার চালিয়েছে। তাদের এই অত্যাচারের ভিত্তি ছিল বর্ণপ্রথা। তারা নিজেদের বড় মনে করতো। স্থানীয়দের অচ্যুত, নীচু মনে করতো। স্থানীয়দের সাথে তাদের আচরণ ছিল মানবতার জন্য চরম অপমানের। জাত পাত ও বর্ণভেদ করে তারা মানুষকে মানুষের মর্যাদা দিত না। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র এর চার ভাগে তারা মানুষকে ভাগ করেছে। শুদ্রদের তারা ঘৃণা করতো। তাদের সাথে একসাথে বসবাস, কথা বলা ইত্যাদি তো দূরের কথা। শুদ্ররা তাদের ছাড়া মাড়ালেও তারা তাদের শাস্তি দিত। বর্তমান পাঠ্যপুস্তকে আর্যদের এই বর্ণপ্রথাকে পজেটিবলি উপস্থাপন করা হয়েছে।
ষষ্ঠ শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান বইতে ১২৫ পৃষ্ঠায় আর্যদের বর্ণপ্রথা সম্পর্কে বলা হয়েছে //আর্যরা যেহেতু শ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে ভালো, অনার্য বা অন্যান্য রেইসকে তাদের অধীনে ও শাসনে থাকলে অনার্যরাও উন্নতি করতে পারবে তাড়াতাড়ি- এই ছিল তাদের যুক্তি। অনেকে তখন তাদের এই ধারণাকে সঠিক বলে মনে করেছিলেন।//
এভাবে আমাদের বাচ্চাদের কাছে মানবতাবিরোধী ব্রাহ্মণ্যবাদীদের পজেটিবলি উপস্থাপন করা হয়েছে। এই ধরনের শয়তানি কোনো জাত হিন্দু রাজনৈতিক সভায়ও বলতে পারেনি। অথচ আমাদের পাঠ্যক্রমে তা সংযুক্ত করা হয়েছে। ইসলাম এসেছে মানুষের গোলামি থেকে মানুষকে মুক্ত করে মানবতার জয় নিশ্চিত করতে। সেখানে মুসলিমের সন্তানেরা ব্রাহ্মণ্যবাদীদের কবলে পড়ে গেল। এটা খুবই এলার্মিং।
৩. হিন্দুয়ানী ভাষা ও কালচারকে প্রধান্য দেওয়া হয়েছে।
বাংলায় মুসলিম ও হিন্দুদের মধ্যে ভাষাগত সামান্য কিছু প্রার্থক্য রয়েছে। যদিও সেগুলো শব্দ হিসেব ইসলামী শরিয়তে ম্যাটার করে না। কিন্তু সাংস্কৃতিক দিক থেকে ম্যাটার করে। যদি কোনো শব্দ, পোষাক ও আচরণ কোনো মুশরিক গোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্ব করে তবে সেটা ব্যবহার আমাদের জন্য নিষিদ্ধ। যেমন বাংলার মুসলিমরা ‘পানি’কে ‘পানি’ বলে, অন্যদিকে হিন্দুরা এটাকে ‘জল’ বলে। আমাদের ভাষাগত সংস্কৃতিতে এটা পানি, জল নয়। এদেশের নব্বই শতাংশ মানুষের ব্যবহার করা শব্দ পানি কিন্তু পাঠ্য প্রায়ই এই পানি শব্দটাকে জল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটা হিন্দুত্ববাদী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। ৬ষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ৫২ নং পৃষ্ঠায় একটি অধ্যায়ের নাম করা হয়েছে রোদ, জল, বৃষ্টি। এটা সুস্পষ্ট হিন্দুত্ববাদী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন।
৪. দেব-দেবীর পরিচয়গুলো হাইলাইট করা হয়েছে।
৬ষ্ঠ শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞানের পুরো বইতেই খুব দৃষ্টিকটুভাবে লক্ষ্য করা গেছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর দেব-দেবীর নাম। সামাজিক বিজ্ঞান বই পড়ে একজন ছাত্রের স্বাভাবিকভাবে মাথায় যে বিষয়টা ইন্সটল হবে তা হলো, মানবজাতির সভ্যতার ইতিহাস মানেই হলো মূর্তিপূজার ইতিহাস। দেব দেবীকে শুধু পরিচয় করিয়ে দেওয়া নয়, তাদের প্রতি যাতে ভক্তি আসে সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে সামাজিক বিজ্ঞান বইতে।
সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৫১-৭৬ পৃষ্ঠায় মিসরীয় সভ্যতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পুরো আলোচনায় মিসরের শাসক ফেরাউনদের উন্নত সভ্যতা(!), উন্নত সংস্কৃতি, তাদের দেব-দেবী ও উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অথচ ওরা যে মানবতার দুশমন ছিল তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এদেশের মুসলিমরা ফেরাউনদের বিরুদ্ধে কথা বলে তাই পাঠ্যক্রমে মূর্তিপূজারী ফেরাউনদের উন্নত ও সভ্য জাতি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সামাজিক বিজ্ঞানের ৭৭ পৃষ্ঠায় মেসোপটেমীয় সভ্যতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এই সভ্যতার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়েছে দেব দেবীর অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই সভ্যতা তৈরি হয়েছে। অথচ সভ্যতাগুলো তৈরি হয়েছে ওহীর ভিত্তিতে ও একেশ্বরবাদের ভিত্তিতে।
রোমানদের সভ্যতা বিস্তার লাভ করেছে ঈসা আ. -এর অনুসরণের মাধ্যমে। অথচ সেটাকে কম গুরুত্ব দিয়ে বহু পূর্বের মুশরিকি ধারণাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রোমানদের দেব দেবীর নাম মুখস্ত করানো হচ্ছে। সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ১০৫ পৃষ্ঠায় এগুলো উল্লেখ রয়েছে।
গ্রিক সভ্যতার ক্ষেত্রে শুধু দেব দেবীর নাম নয়। তাদের কাজ ও ক্ষমতার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। মনে হবে আপনি সামাজিক বিজ্ঞান বা ইতিহাস পড়ছেন না। গ্রিক ধর্মগ্রন্থ পড়ছেন। ইলাস্ট্রেশনের মাধ্যমে তাদের চিত্রও উপস্থাপন করা হয়েছে। সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৯৯-১০০ পৃষ্ঠায় এসব বর্ণনা রয়েছে।
সামাজিক বিজ্ঞান বইটা মারাত্মকভাবে দূষণীয়। এই বই পড়লে মনে হবে মানবজাতির ইতিহাস মানেই হলো মূর্তিপূজা, দেব দেবীর ইতিহাস। পৃথিবীতে গড়ে উঠেছে মুশরিকদের ও মূর্তিপূজারীদের মাধ্যমে। এভাবে আমাদের শিশুদের মাথায় তারা বিষ ঢালছে।
৫. পরিকল্পিতভাবে মুসলিম বিদ্বেষ যুক্ত করা হয়েছে।
পাঠ্যবইয়ে মুসলিম সমাজ ও ইসলামের কোনো প্রতিনিধিত্ব তো নেইই, উল্টো পরিকল্পিতভাবে মুসলিম সমাজ ও ইসলামের প্রতি বিষোদগার করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বইয়ের ৭১ পৃষ্ঠায় সেলিনা হোসেনের একটি প্রবন্ধ রয়েছে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নামে। সেখানে ইচ্ছেকৃতভাবে মুসলিম সমাজের প্রতি ঘৃণা ছড়ানো হয়েছে। একইসাথে ইসলামের অত্যাবশ্যকীয় বিধান ‘পর্দার’ ব্যাপারেও ঘৃণা ছড়ানো হয়েছে।
অথচ বাস্তবতা হলো এই দেশে ব্রাহ্মণ্যবাদী আর্য হিন্দুরা বৈশ্য ও শুদ্রদের পড়ালেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত রেখেছে। ইখতিয়ার উদ্দিন মু. বিন বখতিয়ার খলজির মাধ্যমে এদেশের নির্যাতিত হিন্দু সমাজ, বৌদ্ধ ও মুসলিমরা মুক্তি পেয়েছে ব্রাহ্মণ্যবাদী সেনদের কবল থেকে।
মুসলিমদের বিজয়ের মাধ্যমে এদেশের সব মানুষের জন্য পড়ালেখার দ্বার উন্মুক্ত হয়। মুসলিম শাসকরা মাদরাসা (বিদ্যালয়), জামিয়া (বিশ্ববিদ্যালয়), খানকাহ ও মক্তবের জন্য লাখেরাজ সম্পত্তি বরাদ্দ করে। এর মানে হলো এসব প্রতিষ্ঠানকে করমুক্ত বিশাল জমি দান করা হতো। সেসব জমি থেকে আয় করে প্রতিষ্ঠানগুলো চলতো। ১৭৫৭ সাথে ইংরেজরা দখল করে নেয়ার পর সারা বাংলায় লাখেরাজ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। ইংরেজদের থাবায় বাংলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। যারা গোপনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছে তাদেরকেও হত্যা করা হয়। প্রায় ১০০ বছর এভাবে চলার পর ইংরেজরা তাদের মতো করে পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে। মুসলিমরা সেই পাশ্চাত্য শিক্ষানীতিকে বয়কট করে যেখানে মিথ্যা শিক্ষা দেওয়া হতো।
৬. ইংরেজ লুটেরাদেরকে সম্মানিত করা হয়েছে।
অবাক বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম সামাজিক বিজ্ঞান বইতে ইংরেজ লুটেরা ও ডাকাতদের প্রশংসা করা হয়েছে। তাদের হাজারো অপকর্মের কথা আড়াল করে অনেকটা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাব লক্ষ্য করা গেছে। সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৪ নং পৃষ্ঠায় ইংরেজ আমলকে আধুনিক আমল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্রিটিশরা নাকি এখানে উপনিবেশ করে আমাদের আধুনিক কিছু শিখিয়েছে।
অথচ বাস্তবতা হলো, ব্রিটিশরা এখানে উপনিবেশ করে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। সেসময় আমাদের শিল্প অনেক উন্নত ছিল। আমাদের কাপড় তাদের কাপড়ের চাইতে ভালো ছিল। তারা আমাদের কাপড়ের সকল শিল্প কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের কারিগরদের হাত কেটে দিয়েছে যাতে তারা গোপনেও শিল্প কার্যক্রম চালু রাখতে না পারে। আমাদের শুধু কৃষিজীবি বানিয়ে ছেড়েছে। পৃথিবীর সম্পদশালী একটি অঞ্চল থেকে আমরা সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলে পরিণত হয়েছি।
৭. আওয়ামী লীগের দলীয় বইয়ের রূপ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিটি বইয়ের ২য় পৃষ্ঠায় আওয়ামীলীগের উন্নয়নের ফিরিস্তি দেওয়া হয়েছে যেন এটা পাঠ্যবই নয়, আওয়ামীলীগের দলীয় বুলেটিন। নির্লজ্জ দলীয়করণের মাধ্যমে পাঠ্যবইকেও গ্রাস করেছে আওয়ামীলীগ। এমন হীনকর্ম আইয়ুব খানের মতো স্বৈরাচারও করেনি।
৮. নারীদের কাজের প্রতি অশ্রদ্ধা করা হয়েছে
নারী পুরুষের শারিরীক গঠন ও মননশীলতার জন্য তাদেফ কাজের ভিন্নতা রয়েছে। একজন নারী যেভাবে ধৈর্যের পরিচয় সন্তানকে বড় করেন একজন পুরষের সেই ধৈর্য ও মন নেই। ইসলাম তাই পরিবার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নারীদের দিয়েছে। অন্যদিকে পুরুষদের দায়িত্ব হচ্ছে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আয় ও উপার্জন করে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করবে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিরাপত্তা দেবে।
বর্তমান সেক্যুলার সমাজের অন্যতম এজেন্ডা পরিবার ভেঙ্গে দেওয়া। এটা শয়তানের প্রধান টার্গেট। পারিবারিক বন্ধনের মাধ্যমে একটি সমাজ গড়ে ওঠে। সভ্য ও উন্নত জাতি হিসেবে পৃথিবীতে কন্টিনিউ করে। পুরুষ ও নারী একে অন্যের পরিপূরক। কিন্তু শয়তান নারী ও পুরুষদের প্রতিযোগী বানিয়ে দিয়েছে।
নারীদের ঘরের কাজকে, পরিবার পরিচালনার কাজকে, সন্তানকে যোগ্য নাগরিকরূপে গড়ে তোলার মহান কাজকে হীন চোখে দেখিয়ে তাদেরকে এই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তাদেরকে পুরুষের কাজের প্রতিযোগী বানিয়ে দিচ্ছে। এই এজেন্ডার মূল টার্গেট হলো যাতে পরিবার প্রথা ভেঙ্গে যায়। জীবন ও জীবিকা বইয়ের ২৮ পৃষ্ঠায় জমি চাষ করার একটি ট্রাক্টরের ওপর একজন মহিলাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটাকে আদর্শ হিসেবে দেখানো। অধ্যায়ের নাম দেওয়া হয়েছে পেশার রূপ বদল।
একই কাজ করা হয়েছে বিজ্ঞান বইতে একেবারের অপ্রাসঙ্গিকভাবে। বিজ্ঞান বইয়ের ৭৬ পৃষ্ঠায় বল ও শক্তি অধ্যায়ের কাভার পেইজে মহিলা ক্রিকেটার সানজিদার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ফিজিক্সের বল ও শক্তির সাথে সানজিদার এই ছবির কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই। শুধুমাত্র পর্দার বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য ও মহিলাদের দায়িত্ব পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিবার ভাঙ্গার এজেন্ডা নিয়ে এই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
৯. জাতীয়তা ও ধর্ম পরিচয়কে উপেক্ষা করা হয়েছে।
একজন মানুষের বেসিক পরিচয় হয় ভাষা, লিঙ্গ, ধর্ম ও দেশ দিয়ে। সামাজিক অনুশীলন বইয়ের ৪ নং পৃষ্ঠায় শেখানো হয়েছে একজন মানুষ কীভাবে পরিচয় পেতে পারে! সেখানে অনেক হাবিজাবি বিষয় আনা হয়েছে, অথচ জাতীয়তা ও ধর্ম পরিচয়কে উপেক্ষা করা হয়েছে। রুমানা ‘সিনেমা দেখে কাঁদে’ এটা পরিচয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে অথচ সে কোন ধর্মের? এর কোনো খবর নেই। শুধু তাই নয়, রুমানা যে বাংলাদেশী নাকি অন্য কোনো দেশের এটাও উল্লেখ নেই। তার মানে যারা এই রচনার সাথে জড়িত তারা বাংলাদেশকে স্বীকার করে না? তারা কি হিন্দুত্ববাদী এক ভারতে বিশ্বাসী?
১০. বিতর্কিত ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রত্যাখ্যাত বিবর্তনবাদ দিয়ে ঈমান নষ্ট করা হচ্ছে।
এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিতর্কিত ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রত্যাখ্যাত বিবর্তনবাদ পড়ানো হয়। এদেশের বামপন্থীরা দেশ পরিচালনায় নানানভাবে যুক্ত থাকায় বিবর্তনবাদ আমাদের সিলেবাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে। ধর্মহীনতা ও ইসলাম বিদ্বেষ সৃষ্টি করার জন্য বিবর্তনবাদকে এদেশের বামপন্থীরা নিজেদের তত্ত্ব হিসেবে গ্রহণ করেছে। এর প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখছে। সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ২৪ পৃষ্ঠাও এই মতবাদকে উল্লেখ করে ঈমান নষ্ট করার কাজে মেতেছে। মুসলিম দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিবর্তনবাদ কোনোভাবেই স্থান পেতে পারে না।
১১. বিজ্ঞান বইয়ে কুসংস্কারাচ্ছন্ন পুরাণ ও রূপকথার গল্পের প্রচলন
অত্যন্ত বিস্ময়ের লক্ষ্য করেছি বিজ্ঞান বইয়ে পুরাণ ও রূপকথার প্রচলন ঘটানো হয়েছে। বিজ্ঞান অনুশীলনের ১১ পৃষ্ঠায় তারার বিন্যাস নিয়ে আলোচনায় কুসংস্কারাচ্ছন্ন পুরানের গল্প উপস্থাপন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ছাত্রদেরও কাজ দিয়েছে যাতে তারা এমন কাল্পনিক গল্প বানায়। কাল্পনিক কাহিনী বানানো এখন বিজ্ঞান বইয়ের অনুশীলন! বিজ্ঞান বইতেও তারা পুরাণকে ঢুকিয়েছে। বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ১৩৬ পৃষ্ঠায় জাফর ইকবাল একটি রূপকথার গল্প লিখেছে। এটাও দেখতে হলো! বিজ্ঞান বইকে রূপকথার বই বানানোর অপচেষ্টা।
সেক্যুলার শিক্ষা বাদ দিয়ে আমরা একটি সমন্বিত ধর্মীয় ও কর্মমূখী শিক্ষাব্যবস্থা চাই। যে শিক্ষা ব্যবস্থায় একজন ছাত্র আদর্শ মুসলিম, দায়িত্ববান নাগরিক ও সৃজনশীল উদ্যোক্তা হতে পারবে।