বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির কি দেশে কোন নিষিদ্ধ সংগঠন? আইনে নিষিদ্ধ সংগঠন না হওয়া সত্ত্বেও শিবির করার অভিযোগ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রকে দফায় দফায় পিটিয়েছেন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলে এ ঘটনা ঘটেছে।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত কয়েক দফায় ওই দুই শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন চালায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম শাহরিয়াদ মিয়া সাগর। তিনি ২০১৯-২০ সেশনের মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
দুই বছর আগে বুয়েটে আবরার নামে এক মেধাবী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শিবির করার অভিযোগে এনে পিটিয়ে হত্যা করেছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনায় উত্তপ্ত বুয়েটে ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির মুখে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই নিষিদ্ধের আদেশ এখনো বহাল রয়েছে।
প্রায়ই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামী ছাত্র শিবির করার অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীদের মারধর করার খবর বের হয়। এমন কি ছাত্রীদের বোরখা পড়া ও শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোদ তুলে আবাসিক হল থেকে বের করে দেওয়ার খবরও বের হয় মাঝে মধ্যে।
এতে প্রশ্ন উঠেছে আইনে নিষিদ্ধ না হলে শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তুলে আইন নিজের হাতে নেওয়ার অধিকার ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের কে দিয়েছে? শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেই কেবল এমনটা সম্ভব।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শাহ রিয়াদ মিয়া সাগর জানান, ফোনে এক জুনিয়রের সঙ্গে কথা বলার জেরে রোববার ৪০০৮ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে তারা সারা রাত ফোন চেক করেন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। এসময় তাঁর কান ও হাতসহ দেহের বিভিন্ন অংশে কাঠ দিয়ে মারধর করা হয়। মারধরের একপর্যায়ে জেরা করা হয়। তাঁর সঙ্গে আর কে কে জড়িত তা জানাতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন ছাত্রলীগের ওই সন্ত্রাসীরা। সকালে হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। হল থেকে বের হওয়ার সময় সকালে আরেক দফা বাঁশ ও কাঠ দিয়ে মারধর করা হয় তাঁকে।
শাহরিয়াদের অভিযোগ, তাকে সবচেয়ে বেশি মেরেছে সুজন, তুহিন আর মাজেদ। তিনি বলেন, শুধু আমাকে নয়, মাহমুদ নামের এক জুনিয়রকেও মারধর করে আমাদের সেশনের রাজু, শুভ ও প্রান্ত।
অভিযুক্তরা হলেন, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাজেদুর রহমান, গণযোগাযোগ উপ-সম্পাদক শাকিবুল ইসলাম সুজন, সাহিত্য সম্পাদক ইউসুফ তুহিন, প্রশিক্ষণ সম্পাদক বায়েজিদ বোস্তামী, মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক পিয়ার হাসান সাকিবসহ আরও বেশ কয়েকজন। অভিযুক্তরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী।
তানভীর হাসান সৈকত গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ওই শিক্ষার্থী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। প্রশাসন এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বলেন, ওই শিক্ষার্থী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে বলে জেনেছি। সে নিজেও বিষয়টি স্বীকার করেছে। সে এখন অনুতপ্ত। সে বলেছে, আমি এটা বুঝতে পারিনি। যেহেতু সে স্বীকার করেছে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী বিষয়টি প্রক্টর দেখবেন।
শিক্ষার্থীকে মারধরের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কি-না জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যদি মারধরের বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। ইতোমধ্যে তার সঙ্গে কথা বলেছে প্রক্টরিয়াল টিম। ওই শিক্ষার্থী প্রক্টরিয়াল টিমকে মুচলেকা দিয়েছে এবং পরবর্তীতে কারো কিছু জানার থাকলে যেন সহযোগিতা করা হয় এ মর্মে তাকে স্থানীয় অভিভাবকের কাছে তুলে দেয়া হয়েছে।