বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে সহকারী জজ হিসেবে মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আশিক-উজ-জামান। আশিক বর্তমানে আইন বিভাগের স্নাতকোত্তরে পড়ছেন। বিজেএস পরীক্ষায় সাফল্য নিয়ে তিনি মুখোমুখী হয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার কথাগুলো শুনেছে রাবি প্রতিনিধি মারুফ হোসেন মিশন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় দেশব্যাপী প্রথম হয়েছেন। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা। আপনি কেমন আছেন?
আশিক-উজ-জামান: আপনাকে ধন্যবাদ। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সরকারি জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্তির খবরে আপনার অনুভূতি কেমন ছিলো?
আশিক-উজ-জামান: প্রথমেই আমি আমার সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। যার ইচ্ছাই আমি পরীক্ষায় ভালো করেছি। এ সফলতার কারণে আমার বাবা-মা ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ গর্বিত হয়েছেন। তাদের গর্বিত করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার পরিবারে কে কে আছেন?
আশিক-উজ-জামান: আমার পরিবারে আমার পিতা-মাতা ও এক বড় বোন আছেন। আমার আব্বু মো. আহসান হাবিব। তিনি সরকারী গোয়েন্দা সংস্থার ফিল্ড স্টাফ হিসাবে দায়িত্বরত এবং আম্মু মোছা. আলাতুন বেগম। তিনি একজন গৃহিণী।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পড়ালেখা কেমন ছিলো?
আশিক-উজ-জামান: আমার জন্মস্থান পঞ্চগড় জেলা। কিন্তু বেড়ে উঠেছি রংপুরে। রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে লেখাপড়া করেছি। তারপর সপ্তম শ্রেণী থেকে রংপুর ক্যাডেট কলেজে চান্স পেয়ে সেখান থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পাস করেছি। তারপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে চান্স পেয়েছিলাম। এখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: উচ্চশিক্ষায় আইন নিয়ে পড়াশোনা শেষ না করেই সহকারী জজ হয়ে গেলেন। এ যাত্রাটা কেমন ছিলো?
আশিক-উজ-জামান: প্রথম বর্ষ থেকেই আমাকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছে। তবে এই পরিশ্রমটা কঠোর থেকে কঠোরতর নয়। ধারাবাহিকভাবে আমি পড়াশোনা করেছি। সর্বনিম্ন দিনে ২ ঘন্টা। এছাড়া প্রয়োজনে আরো বেশি লেখাপড়া করেছি। নিয়োগ পরীক্ষার ৪-৫ মাস আগে থেকে দিনে অন্তত ১০ ঘন্টা করে পড়েছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করার জন্য আইনের পাশাপাশি আর কোন কোন বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
আশিক-উজ-জামান: বিজেএস পরীক্ষায় শুধু আইন সম্পর্কিত প্রশ্নই হয়ে থাকে, বিষয়টা এমন নয়। আইন সম্পর্কিত ৬০% প্রশ্ন করা হয় এবং বাকি ৪০% প্রশ্ন আসে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান ও গণিত থেকে। এজন্য বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করার জন্য আইনের পাশাপাশি এই বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যারা আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী তাদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?
আশিক-উজ-জামান: যদি কেউ আইন নিয়ে পড়তে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই আইনকে ভালোবাসতে হবে। আইনের বিষয়গুলো বুঝে বুঝে পড়তে হবে। যদি না বুঝে পড়েন তাহলে আইনের বিষয়গুলো আত্মস্থ হবে না। একটা বিষয় বারবার পড়া উচিত। কারণ একটা বিষয় দ্বিতীয়বার পড়লে প্রথমবারের থেকে বেশি জানা ও বোঝা যায়।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আইন নিয়ে পড়ার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভালো নাকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়?
আশিক-উজ-জামান: একাডেমিক রেজাল্ট কিংবা বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। কে কেমন পরিশ্রম করছে তার উপর নির্ভর করবে তার স্বপ্ন পূরণের সম্ভাবনা। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: তবে আইন নিয়ে পড়াশোনা করলেই তো আর বিচারক হয়ে যায় না। স্বপ্ন পর্যন্ত পৌঁছাতে একজন শিক্ষার্থীর কী কী একাডেমিক ধাপ অতিক্রম করতে হয়?
আশিক-উজ-জামান: প্রথমে আইন অনুষদের যেকোনো একটি বিভাগে চান্স পেতে হবে। তারপর একেডেমিক বিষয়গুলো ভালো করে পড়তে হবে। বিশেষ করে বিজেএস পরীক্ষার সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত যে কোর্সগুলো থাকে সেগুলো ভালো করে বুঝে-শুনে পড়তে হবে।
যেহেতু বিজেএস পরীক্ষায় ৬০% প্রশ্ন আসে আইন সম্পর্কিত, সেহেতু একাডেমিক বিষয়গুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। একাডেমিক বিষয়গুলোতে ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ অনার্স শেষ করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার বেশি সময় পাওয়া যায় না।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কোন কোন বিষয়গুলো বেশি ফোকাস করলে নতুন যারা বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখে তাদের পথটা সহজ হবে?
আশিক-উজ-জামান: পরীক্ষার সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত সকল বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সংবিধান, সিআরপিসি (CrPC), সিপিসি (CPC), সাক্ষ্য আইন ও পেনাল কোডের মৌলিক বিষয়গুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। এই বিষয়গুলোর পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান ও গণিত নিয়মিত পড়া উচিত।
অনেক শিক্ষার্থী আছেন যারা আইনের বাইরের বিষয়গুলোতে বেশি গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু এগুলো অবহেলা করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। যেহেতু এখান থেকে পরীক্ষায় ৪০% প্রশ্ন আসে। লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার জন্য ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও সমসাময়িক বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখা প্রয়োজন। যাতে এখান থেকে প্রশ্ন আসলে আপনি লিখতে পারেন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করার জন্য কখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
আশিক-উজ-জামান: প্রথম বর্ষ থেকেই একাডেমিক বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। তৃতীয় বর্ষ থেকে সাধারণ জ্ঞান, ইংরেজি, বাংলা বিষয়গুলো পড়া উচিত।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস পরীক্ষায় একাডেমিক রেজাল্টের গুরুত্ব কতটুকু?
আশিক-উজ-জামান: আসলে বিজেএস পরীক্ষায় একাডেমিক রেজাল্টের গুরুত্ব নেই বললেই চলে। সিজিপিএ কম থাকা সত্ত্বেও সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন এমন সংখ্যা নেহাতই কম নয়। তবে একাডেমিক রেজাল্টে ভালো করা মানে সেই শিক্ষার্থী ভালো করে পড়ছেন। ফলে বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়। সিজিপিএ কম থাকা সত্ত্বেও যারা সুপারিশপ্রাপ্ত হন তারা হয়ত বিজেএস পরীক্ষাকে মাথায় রেখে সিলেবাস অনুযায়ী পড়াশোনা করেছেন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নিয়োগ পরীক্ষার ফলে আপনি প্রথম হয়েছেন। দেশের প্রতি আপনার অনেক বেশি দায়িত্ব। নিয়োগ পাওয়ার পর দেশ নিয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাই। কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে কি?
আশিক-উজ-জামান: আমি ক্যাডেট কলেজ ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। যেখানে একাডেমিক খরচ অনেক কম। আমি যতো বেতন দিয়েছি তার থেকে বেশি বাংলাদেশ সরকার আমাকে ভর্তুকি দিয়েছে। এককথায় বলতে গেলে আমি জনগণের টাকায় লেখাপড়া করেছি। তাদের ট্যাক্সের টাকায় আজ আমি এই জায়গায় আসতে পেরেছি। তাই তাদের প্রতি আমার দায়দায়িত্ব অনেক বেশি।
যদি আল্লাহ চায় এবং আমি গেজেটেড হয়ে জজ হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে থাকি, তাহলে এদেশের দরিদ্র মানুষের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নেবো। বাংলাদেশে নিষ্পত্তিহীনভাবে যেসব মামলা ঝুলে আছে সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য আমি সর্বোত্তম চেষ্টা করবো।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার সাফল্য কামনা করছি।
আশিক-উজ-জামান: আপনাকেও ধন্যবাদ। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্য শুভকামনা রইলো।