বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নূরে আলম। থাকতেন কাহরামানমারাস শহরে। সোমবারের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল যেখান থেকে। তিনি যে ভবনে থাকতেন সেই স্থানে তাণ্ডব ঘটে গেছে। তুরস্কে স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংসযজ্ঞের নিচ থেকে জীবন নিয়ে ফিরলেন নূরে আলম। তিনি কাহরামান মারাস সুতচু ইমাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। ভূমিকম্পের পর থেকেই নূরে আলম ও তার বন্ধু গোলাম সাইদ রিংকুর খোঁজ মিলছিল না। সোমবার রাতে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে খোঁজ মিলে নূরে আলমের। তবে রিংকু এখনো নিখোঁজ। ভয়াবহ সে রাতের মহা ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা মানবজমিন-এর কাছে বর্ণনা করেছেন তিনি।
বলেন, ভূমিকম্পের কম্পনে তার ঘুম ভেঙে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শরীরের উপরে ভবনের ছাদ, পিলারের অংশ দেখতে পাই। কোনোকিছু চিন্তা না করেই বের হওয়ার চেষ্টা করি। একটি ফাঁকা জায়গা দেখতে পাই। যেখান থেকেই কোনোভাবে বের হই। ওই ভবনের পাশের অন্য ভবনগুলোও মাটির সঙ্গে মিশে যায়। পিলারের মধ্যে আটকে থাকা একটি হাত ছাড়াতে গিয়ে আহত হয়েছি। নূরে আলম বলেন, তিনি এবং তার বিদেশি কয়েকজন বন্ধু একই বাসায় থাকতেন। তার বন্ধু রিংকু থাকতেন তার পাশের রুমেই। ভূমিকম্পের একঘণ্টা পূর্বে ঘুমাতে যান। এর আগে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করেন। নূরে আলম পোশাক, মোবাইল ফোনও নিতে পারেননি সঙ্গে। মাইনাস ৭/৮ তাপমাত্রায় দিগ্বিদিকশূন্য হয়ে ছুটেন। পরবর্তীতে একটি বেসরকারি সহযোগিতা সংস্থা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। আশ্রয়কেন্দ্রেই রাত কাটান তিনি। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেয় সেই সংস্থাটি। মঙ্গলবার দুপুরে আটকে পড়া বন্ধু রিংকুকে খুঁজতে আবার ওই বাসার কাছে যান নূরে আলম। বলেন, ওই ভবনটি মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ায় ওই ভবনে উদ্ধারকাজ চলছিল ধীরগতিতে। নূরে আলমের মতো বিভিন্ন দেশ ও তুরস্কের হাজার হাজার নাগরিক এখনো ভবনের নিচে আটকা পরে আছে। যাদের কোনোই সন্ধান মিলছে না। বৈরী আবহাওয়া ও ভারী তুষারপাতে কোথাও কোথাও উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হাতাই শহরের আনতাকিয়া জেলায় ৬ মাসের আয়েশা নামে একটি ফুটফুটে শিশুকে ঘটনার ২৯ ঘণ্টা পরে জীবিত উদ্ধার করা হয়। সঙ্গে তার মাকেও জীবিত পাওয়া যায় ভবনটিতে। শিশুটি তার মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলেও সুস্থ রয়েছে। অন্যদিকে, এলাজি থেকে মালাতিয়া শহরে যাওয়ার পথে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি ভবনের নিচ থেকে চার জনকে ৩২ ঘণ্টা পরে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। বিল্ডিংটি মাটির সঙ্গে মিশে যায়। স্থানীয়রা জানান, পাহাড়বেষ্টিত তুরস্কের প্রতিটি শহরেই এতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, চাইলেও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তারা যেতে পারছেন না। অনেকেই তাদের আত্মীয়স্বজনের খোঁজ পাচ্ছেন না; আবার কেউ যোগাযোগ করতে পারছে না নেটওয়ার্ক দুর্বলতার কারণে। তুরস্কের ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি প্রভিন্সের মধ্যে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, কাহরামানমারাস, মালাতিয়া, হাতাই, গাজিআন্তেপ, দিয়ারবাকির শহরে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এরমধ্যে দিয়ারবাকির ও হাতাই’র সঙ্গে সিরিয়ার সীমান্ত রয়েছে।