দিন গড়িয়ে মাস, মাস গড়িয়ে বছর। এভাবে দেখতে দেখতে কেটে গেল দুই বছর। আজ ১৭ এপ্রিল। এ দুই বছর শুধুই পথপানে চেয়ে আছে বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীর পরিবার।
দুই বছরেও কোনো হদিস মেলেনি বিএনপির এই শীর্ষ নেতার। এদিকে তার এক সময়ের সহকর্মী-সহযোদ্ধারাও ভুলতে বসেছেন ত্যাগী এই নেতাকে।
প্রশ্ন জেগেছে, ইলিয়াস আলী কি বেঁচে আছেন? নানা সময়ে নানা গুঞ্জন শোনা গেলেও ইলিয়াস আলীর হদিস নেই কারো কাছে।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে অপহৃত হন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী। দুই বছরেও তার হদিস মেলাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। তিনি আদৌ বেঁচে আছেন, না মারা গেছেন এ সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে।
জিজ্ঞেস করা হলেই পুলিশ ও গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা অনুসন্ধান চালাচ্ছেন।
এই দুই বছরে রাজনৈতিক নানা আন্দোলন-কর্মসূচির ভিড়ে অনেকেই বিএনপির এই ত্যাগী নেতাকে ভুলতে বসেছেন। এখন আর মিছিল-মিটিং এবং আন্দোলনে ইলিয়াস আলীকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাকে নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি এখন আর হয় না।
ইলিয়াস আলীর সাথে নিখোঁজ হয়েছেন গাড়িচালক আনসার আলী। ঘটনাস্থল থেকে ইলিয়াস আলীর গাড়িটি উদ্ধার হলেও আর কোনো আলামত খুঁজে পাওয়া যায়নি। যারা বলেছিলেন, ওই এলাকা থেকেই তাদেরকে অজ্ঞাত লোকজন ধরে নিয়ে গেছে, তাদেরও এখন হদিস নেই।
ঘটনার পর কয়েক দিন ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের বিষয়টি মুখে মুখে ছিল সবার।এক সময়ের মাঠ কাঁপানো ছাত্র নেতা সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী এভাবে নিখোঁজ হতে পারেন সেই ধারণা অনেকেরই ছিল না।
ঘটনার পর ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের দাবিতে বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠন হরতালসহ নানা কর্মসূচি পালন করে।ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী এবং ছোট ছোট সন্তানরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথেও দেখা করেন।প্রধানমন্ত্রীও তাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন।কিন্তু কোনো সন্ধান মেলেনি ইলিয়াস আলীর।
শুরু থেকেই এ ঘটনার ব্যাপারে ইলিয়াস আলীর পরিবার এবং দলের পক্ষ থেকে আঙ্গুল তোলা হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর দিকে।তাদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর লোকজনই ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে গেছে।হয়তো তারা ইলিয়াস আলীকে আটকে রেখেছে, না হলে তাকে গুম করে ফেলা হয়েছে।
দুই বছরেও ইলিয়াস আলীর খোঁজ না মেলায় প্রশ্ন জেগেছে তিনি আদৌ বেঁচে আছেন, নাকি তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।হতাশ হয়ে পড়েছেন সবাই। অসহায় হয়ে পড়েছে আনসার আলীর পরিবারও।তাদের দিন এখন আর চলে না।না খেয়ে তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে।
এদিকে ইলিয়াস আলীর সহকর্মীদের এখনো দাবি, এ ঘটনার পেছনে সরকারের হাত রয়েছে।
বিএনপি নেতা ও স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মো: রহমত উল্লাহ বলেন, “ইলিয়াস আলী নিখোঁজ রহস্য দুই বছরেও উদঘাটন করতে না পারা এই সরকারের বড় ব্যর্থতাগুলোর মধ্যে একটি।“
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সরকারের মদদেই ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে।“
তিনি আরো বলেন, “সরকারের যদি রাজনীতির প্রতি ন্যূনতম সম্মানবোধ থাকে তাহলে ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করা উচিত।
ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের ঘটনার পর বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।আদালতের নির্দেশে ওই জিডির তদন্তে অগ্রগতি আদালতকে নিয়মিত জানানো হয়।কিন্তু কার্যত কোনো অগ্রগতি নেই তদন্তে।