একইদিনে দু’টি হাই প্রোফাইল সফরের শুরু। একটা পশ্চিমের প্রভাবশালী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যটি ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ঐতিহাসিক বন্ধু ভারতের। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দু’টি রাষ্ট্রের প্রভাবের বিষয়টি কারও অজানা নয়। নতুন বছরে যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন প্রভাবশালী কর্মকর্তা ডোনাল্ড লু এবং আইলিন লাউবাচারের সফরের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার ঢাকায় আসেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি জে বিঙ্কেনের বিশেষ দূত স্টেট ডিপার্টমেন্টের জ্যেষ্ঠ কাউন্সেলর ডেরেক শোলে। আন্ডার সেক্রেটারি পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তা বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে। মতবিনিময় হয়েছে গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদের সঙ্গে। সব বৈঠকেই তিনি গণতন্ত্র, নির্বাচন এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। টুইট বার্তা, মিডিয়া ব্রিফিং এবং মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতিতে তার বয়ান স্পষ্ট করা হয়েছে। অভিন্ন দিনে (কাছাকাছি সময়ে) ঢাকায় আসেন দিল্লির বিদেশ সচিব বিনয় মোহন খাতরা।
মার্কিন প্রতিনিধির সফরের চেয়ে তার সফরটির গুরুত্ব কোনো অংশেই কম নয়। সেই সফরটিও সমান তাৎপর্যপূর্ণ বরং সময় উপযোগী ছিল বলে অনুমেয়। সচিবের সফর বিষয়ে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন সিরিজ টুইট বার্তা প্রচার করেছে। যেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর করার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে।
তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে দিল্লির বিদেশ সচিবের আলোচনার বিষয়ে সরকারের তরফেও ব্রিফ করা হয়েছে। যেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি ভারতের সমর্থনের বিষয়টি ফলাও করে প্রচার পেয়েছে। সেগুনবাগিচার দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং বিদ্যমান বিশ্ব বাস্তবতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের প্রভাবশালী দুই কর্মকর্তার সঙ্গে সরকারের নীতি-নির্ধারকদের বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। যার সবটুকু প্রকাশ কূটনৈতিক শিষ্টাচার নয়। যেটুকু সম্ভব এরইমধ্যে প্রচার পেয়েছে, যার নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। মূলত ১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩-এ সব আলোচনা হয়েছে। এ কারণে দিনটি বাংলাদেশের রাজনীতি তথা আগামী দ্বাদশ নির্বাচনের পথে একটি স্মরণীয় দিন হতে যাচ্ছে এমন অনুমানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এক কর্মকর্তা গতকাল বলেন, রাজনৈতিক বাস্তবতায় সফর দু’টি খুবই গুরুত্বপুর্ণ ছিল। যুগল ওই সফরে অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক রাজনীতি নিয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া পোক্ত করার চেষ্টা হয়েছে। সেই আলোচনার ছায়া যে বাংলাদেশের নির্বাচনী বছরের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে পড়তে যাচ্ছে তার ইঙ্গিত দিলেন ওই পেশাদার কূটনীতিক।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক শাসন নিয়ে আলোচনা শোলের:
এদিকে গণতন্ত্র এবং সমাজের উন্নয়নের জন্য মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন মৌলিক বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন কাউন্সেলর ডেরেক শোলে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে নির্বাচনসহ (সবসময়) গণতান্ত্রিক শাসনের প্রচারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব গভীরতর করার বিষয়টি তিনি পুনরায় নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছেন। বুধবার ডেরেক শোলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। নিজের অফিসিয়াল টুইটার একাউন্ট থেকে সেই সাক্ষাতের ছবি পোস্ট করে লিখেন- যুক্তরাষ্ট্র বিগত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিকে সমর্থন করেছে এবং করে চলেছে। অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব এবং নির্বাচনসহ গণতান্ত্রিক শাসনের প্রচারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারীত্ব গভীরতর করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে পুনরায় নিশ্চিত করেছি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। এরপর পৃথক টুইটে ডেরেক শোলে লিখেন- গণতন্ত্র এবং সমাজের উন্নয়নের জন্য মৌলিক বিষয় হলো মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের সদস্যদের কাছ থেকে এই দেশ ও এই অঞ্চলের শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার জন্য গণতান্ত্রিক শাসন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রচারে তাদের কর্মকা- সম্পর্কে শুনেছি।
ওদিকে, বুধবার বিকালে গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র দুর্বল হলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সীমিত হতে পারে বলে সতর্ক করেন ডেরেক শোলে। তাছাড়া, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার আগাম অঙ্গীকার তথা রূপরেখা না দেয়ায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো সম্ভব হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সিনিয়র কাউন্সেলর ডেরেক শোলে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র কতটা গুরুত্ব দেয়, তারই প্রতিফলন তার ঢাকা সফর। শোলে সরকার ও সরকারের বাইরে বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের এমন মনোভাবের কথাও তুলে ধরেন। বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। মানবাধিকার সুরক্ষায় জোর দেয়ার পাশাপাশি ভিন্নমতাবলম্বীরা যাতে হেনস্তার শিকার না হয়, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখে যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা সফরে ডেরেক শোলে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবাধিকার সুরক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
ডেরেক শোলের সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও গণমাধ্যমে আলাদা বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। তাতে বলা হয়, শোলের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং অন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঢাকার কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলোচনায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার সুরক্ষা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো প্রসঙ্গগুলো এসেছে। তবে সময়ের ব্যাপ্তি কম থাকায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলোচনায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রসঙ্গটি তোলেন ডেরেক শোলে। আলাদা আলোচনায় তারা দু’জনেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে বাংলাদেশের সাংবিধানিক বাধ্যকতার বিষয়টি মার্কিন কর্মকর্তাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রসঙ্গটি তুললে পররাষ্ট্র সচিব মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাউন্সেলরকে নির্বাচন নিয়ে সরকারের দায়িত্ব এবং সাম্প্রতিক পদক্ষেপের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। এ সময় মাসুদ বিন মোমেন উল্লেখ করেন, প্রথমবারের মতো সংসদে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন আইন পাস হয়েছে এবং ওই আইনের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ইসি সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন এবং এর প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা রয়েছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করেই সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বদ্ধপরিকর। রাজধানীর আমেরিকান সেন্টারে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ডেরেক শোলে।
সেখানেও নির্বাচনের প্রসঙ্গটি এসেছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে কী হবে, জানতে চাইলে ডেরেক শোলে বলেন, আমি কোনো ধরনের পূর্বানুমান করতে চাই না। বাংলাদেশে নির্বাচন যে অবাধ ও সুষ্ঠু হবে, সে ব্যাপারে আমি আশাবাদী। সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের কথার ওপর আস্থা রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। শোলে বলেন, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, বিশেষ করে মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে আচরণের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ, আগের নির্বাচন নিয়ে আমাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো গোপন রাখিনি। সামনের দিনগুলোতেও এ বিষয়গুলোতে উদ্বেগ থাকলে তা তুলে ধরবো। আরেক প্রশ্নের জবাবে ডেরেক শোলে বলেন, বিশ্বের শক্তিশালী গণতন্ত্রের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পর্ক আছে। বিশ্বের যেকোনো দেশে গণতন্ত্র সংকুচিত হয়ে পড়লে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা সীমিত করে নেয়। এর মানে এই নয় যে আমরা সহযোগিতা করবো না। এর মানে এটাও নয় যে আমাদের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ নয়। সম্পর্ক সীমিত করার বিষয়টি বিবেচনায় আসে ব্যবসা-বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ডেরেক শোলে ভিন্নমতাবলম্বীদের মানবাধিকার সুরক্ষার প্রসঙ্গটি তুললে সরকারের অবস্থান তাকে জানানো হয়। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন সরকারের সম্মানজনক পুরস্কারে ভূষিত বাংলাদেশের তিনজন পেশাজীবীর প্রসঙ্গ তুললে সরকারের তরফে বলা হয়েছে, সরকার এ বিষয়ে অবগত রয়েছে।
তাদের প্রতি যাতে বিরূপ আচরণ না হয়, সে বিষয়ে সরকার সচেষ্ট। ডেরেক শোলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহযোগিতার পাশাপাশি এ সংকটের শিকড় সন্ধানে বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করার কথা বলেছেন। র্যাবের কার্যক্রমের ইতিবাচক পরিবর্তনের বিষয়ে টেকসই সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলে। র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, র্যাবকে একটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও কার্যকরী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলেকে জানিয়েছেন, এই বাহিনী ইতিমধ্যে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম হয়েছে। তিনি র্যাবের দক্ষতা বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ও সহায়তা কামনা করেন। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকেই র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গটি বাংলাদেশ সব আলোচনায় তুলে আসছে। এমনকি গত মাসে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সফরেও বাংলাদেশ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গটি তুলেছিল।
র্যাবের দক্ষতা অর্জনের অংশ হিসেবে প্রয়োজনে বাহিনীর সদস্যদের মানবাধিকারের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণে যুক্ত করা যায় কিনা, সেই অনুরোধ বাংলাদেশ করেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বেশ কয়েক বছর ধরে মার্কিন প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছে না র্যাব। এই প্রেক্ষাপটে র্যাবের জন্য ওই প্রশিক্ষণগুলো আবার শুরু করা যায় কিনা, সেই অনুরোধ করেছে ঢাকা। তবে র্যাবের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের অনুরোধের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ ওই উপদেষ্টা। বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার তথা আধুনিক সমরাস্ত্র কেনাকাটার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে বিশেষায়িত দুটি প্রতিরক্ষা চুক্তি আকসা ও জিসোমিয়া নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। শোলের সঙ্গে বৈঠকে ওই দুই প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রসঙ্গটি আলোচনায় এসেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জিসোমিয়া সইয়ের জন্য বাংলাদেশ কাজ করছে। তবে আকসা সই করার বিষয়ে বাংলাদেশের জন্য কিছু জটিলতা আছে। প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরায় বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান শোলে।
ভারতের বিদেশ সচিবের সঙ্গে সরকারের দায়িত্বশীলদের বৈঠকে যা আলোচনা হয়েছে-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে সফররত দিল্লির বিদেশ সচিব বিনয় খাতরা বলেছেন, আপনার নেতৃত্বের প্রতি ভারতের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
বুধবার গণভবনে সেই সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। সরকার প্রধানের সঙ্গে দিল্লির বিদেশ সচিবের মুখোমুখি বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় খাতরা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিসহ উন্নয়নযাত্রায় দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত। বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের ১৮তম আসরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তরফে বিশেষ আমন্ত্রণ জানান। আগামী ৯-১০ই সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রণ গ্রহণ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। ওদিকে বাংলাদেশকে বিস্তৃত এবং গভীরভাবে উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বে সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে ভারত। বাংলাদেশ সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বুধবার সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় খাত্রা। এ সময় তিনি এই প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দু’দিনের সফর শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে বাংলাদেশ সফরে আসেন। এ বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশন টুইটে বলেছেন, ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন পররাষ্ট্র সচিব বিনয় খাত্রা। এ সময় তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে উষ্ণ শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছে দেন। একই সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বে বৃহৎ এবং গভীরভাবে ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। ভারতীয় হাইকমিশন টুইটে বলেছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় খাত্রা। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিস্তৃত ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে তারা ফলপ্রসূ আলোচনা করেন। এর আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
ইন্ডিয়ান মিশন টুইটে বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে ফরেন অফিস কনসালটেশন্স সম্পন্ন করেন। এ সময় উভয়পক্ষই রাজনীতি, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা, কানেক্টিভিটি, পানি, বিদ্যুৎ এবং উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পুরো বিষয়ে নতুন করে রিভিউ করেন। এতে আরও বলা হয়, ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ফরেন অফিস কনসালটেশন্স অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদলের মধ্যে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে টুইটে বলা হয়েছে, বন্ধুপ্রতীম এই দুই দেশের মধ্যে গভীর সহযোগিতা গাঢ় করার আহ্বান জানিয়েছেন দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সফরের আগে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ফরেন অফিস কনসালটেশন্স বা এফওসি-এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত আলোচনা করতে আসছেন বিনয় খাত্রা। কিন্তু তাদের এই মিটিংকে শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরের ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। গত বছর ১লা মে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন বিনয় খাত্রা। তারপর এটাই তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির অধীনে উচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই সফর নির্ধারিত হয়েছিল। ভারতের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার বাংলাদেশ। একইসঙ্গে এ অঞ্চলে ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদারও। এই সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে এবং বিস্তৃত ক্ষেত্রে চলমান সহযোগিতায় গতি আনবে।
সর্বশেষ ফরেন অফিস কনসালটেশন্স অনুষ্ঠিত হয় ২০২১ সালের ২৯শে জানুয়ারি নয়াদিল্লিতে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বৃহত্তর অর্থনৈতিক এই গ্রুপের চেয়ার নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে সেপ্টেম্বরে ভারত সফরে যাওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কর্মকর্তারা বলছেন, জি-২০ এর কোনো সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও এই সামিটে অতিথি হিসেবে যোগ দিতে পারেন শেখ হাসিনা। রীতি অনুযায়ী, এই সামিটে সদস্য রাষ্ট্র বাদেও জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং অতিথি দেশকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানান জি-২০ চেয়ার।