নারায়ণগঞ্জ মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক। তবে তার জবানবন্দির বিবরণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদনী রূপমের খাসকামরায় এ জবানবন্দি নেওয়া হয়।
আজ শুক্রবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি শেষে আদালত থেকে বেরিয়ে আসেন আবু বকর। আবু বকরের সাতে তার স্ত্রী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানও রয়েছেন।
আদালতে জবানবন্দি শেষে আবু বকরকে পুলিশি নিরাপত্তায় নারায়ণগঞ্জে তার নিজস্ব কর্মস্থলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরপর যেখান থেকে তিনি অপহৃত হয়েছিলেন সেখানেও নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম বলেন, জবানবন্দি দেয়া শেষ হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই এ ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না।
আদালত থেকে বের হয়ে আবু বকরের স্ত্রী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখন আইনি ব্যাপারগুলো চলতে থাকবে। তবে আগে যে রকম পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন চালিয়েছিলেন ঠিক তেমনটাই আন্দোলন এখনো চালাবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে আবু বকর সিদ্দিককে মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।
দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আবু বকর সিদ্দিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের চিকিত্সা কর্মকর্তা মো. ফরহাদ।
আবু বকরের ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক শাখার কর্মকর্তারা।
বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডের বাসা থেকে পুলিশের পিকআপ ভ্যানে আবু বকর ও তাঁর স্ত্রী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নারায়ণগঞ্জে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পৌঁছান। সেখান থেকে আবু বকরকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।
বুধবার ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে ভূইয়া ফিলিং স্টেশনের কাছ থেকে আবু বকরকে অপহরণ করা হয়। পরে এ ঘটনায় তার স্ত্রী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাদি হয়ে হয়ে মামলা করেন।
অপহরণের প্রায় ৩৫ ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা।
কলাবাগান থানার এএসআই জানিয়েছেন, কলাবাগান এলাকায় চেকপোস্টে তল্লাশি চালানোর সময় একটি সিএনজিতে ছেড়া শার্ট গায়ে একজন যাত্রীকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় পুলিশ জানতে পারে যে তিনি আবু বকর সিদ্দিক যিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে অপহৃত হয়েছিলেন।
এরপর তাকে ধানমন্ডি থানা হেফাজতে নিয়ে যায় পুলিশ ও তার পরিবারকেও অবহিত করা হয়।
বেলার আইনজীবী ইকবাল কবীর জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত প্রায় দুইটার দিকে তিনি জানতে পারেন যে আবু বকর সিদ্দিককে অপহরণকারীরা ছেড়ে দিয়েছে, পুলিশ তাকে ধানমন্ডি থানা হেফাজতে নিয়ে গেছে।
কবীর জানিয়েছেন আবু বকর সিদ্দিকের সাথে কথা বলে তিনি জানতে পেরেছেন, ‘মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকায় রাতে আবু বকরকে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা। ছেড়ে দেয়ার সময় বাসায় ফেরার ভাড়া বাবদ ৩০০ টাকাও দিয়ে দিয়েছে অপহরণকারীরা। এরপর শেওড়াপাড়া থেকে তিনি রিকশায় ওঠেন, কিছুপরে একটি সিএনজি ভাড়া করেন তারা বাসা সেন্ট্রাল রোডের উদ্দেশ্যে। এরপর কলাবাগান চেকপোস্টে পুলিশ সিএনজি থামালে আবু বকর আবেগাপ্লুত হয়ে জানান যে তিনি অপহৃত হয়েছিলেন বুধবার এবং রাতে মিরপুরে তাকে ছেড়ে গেছে অপহরণকারীরা। একথা শুনে তাকে ধানমন্ডি থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।’
তবে ইকবাল কবীর জানিয়েছেন, আবু বকর সিদ্দিককে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তিনি সুস্থ আছেন।
কবীরকে নিয়ে বাসার ফেরার সময় রিজওয়ানা হাসান সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
তবে আিবু বকরকে কারা অপহরণ করেছিল কেন করেছিল সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি।
আবু বকর সিদ্দিক পুলিশকে জানিয়েছেন তার ওপর কোনো ধরনের অত্যাচার করা হয়নি, তবে অপহরণের পর থেকে ছেড়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ ঘণ্টা তার চোখ বাঁধা অবস্থাতেই ছিল।
তবে ইকবাল কবীর জানিয়েছেন, আবু বকর তাকে বলেছেন যে অপহরণকারীরা টাকা নিয়ে আলোচনা করলেও তার কাছে কেউ চাঁদা চাননি।
আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ কোর্টে নিয়ে যেতে হবে আবু বকরকে এবং তারপর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে থেকে নিজেদের কাছে নিয়ে আসা হবে বলে জানান ইকবাল কবীর।
Next Post