ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নবীন ছাত্রী ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনায় এবার ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরার বিরূদ্ধে মুখ খুলেছেন এক অভিযুক্ত।
সেদিন রাতে ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে দরকার হলে মেরে ফেলার নির্দেশ দেন, অন্তরা নিজেই লাশ গুম করবেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনুচ্ছুক সে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ কথা বলেন।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থী বলেন, অন্তরা আপু ওকে (ভুক্তভোগী) যা ইচ্ছা তা করতে নির্দেশ দেন, যত প্রটেকশন আপু দেবে। আমাদের কিচ্ছু হবে না। উনি প্রথম থেকে চেয়েছে ওকে (ভুক্তভোগী) বের করে দিতে। তিনি এমনো বলেছেন যে, তাদের ওপর কোনো দোষ আসলে সে বলবে আমিও ছিলাম।
তিনি আরও বলেন, আপু সবাইকে বলেছে এক ঘণ্টা করে রুমে নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করতে। আমরা বলেছিলাম এগুলো করা কি ঠিক হবে? কিন্তু আপু বলেছে কোনো সমস্যা হবে না, তোরা যা খুশি কর। দরকার হলে মেরে ফেলতে বলেছে, আমি (অন্তরা আপু) লাশ গুম করে ফেলবে।
আমরা ওনাকে ভয় পাই, আমাদের সঙ্গে চোখ রাঙিয়ে কথা বলে। তাই আমরা এসব করতে বাধ্য হয়েছি।
এর আগে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ তার চার সহযোগীর আবাসিকতা বাতিল করেছে হল কর্তৃপক্ষ। সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হল কর্তৃপক্ষের মিটিং শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়াও দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের হল সংযুক্তি বাতিলের সুপারিশ কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। আগামী ১ মার্চ দুপুর ১২টার মধ্যে তাদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
অন্য অভিযুক্তরা হলেন ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও চারুকলা বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মী।
মিটিংয়ে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলমের সভাপতিত্বে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আহসানুল হক, সদস্য ইসরাত জাহান, মৌমিতা আকতার, নুরুল ইসলাম ও আসমা সাদিয়া রুনা উপস্থিত ছিলেন।
হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে আমরা দুপুর ১২টায় মিটিং করি। প্রতিবেদনে ৫ জনের অভিযুক্তের সত্যতা পাওয়া যায়। তাই আমরা তাদের আবাসিকতা বাতিল করেছি। এছাড়াও হলের সংযুক্তি বাতিলেরও সুপারিশ করা হবে।
এদিকে, এ ঘটনায় ১৫ ফেব্রুয়ারি এক আইনজীবীর করা রিটের প্রেক্ষিতে ১৬ ফেব্রুয়ারি রিটের শুনানি হয়। শুনানি শেষে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের যৌথ বেঞ্চ কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসককে তদন্ত কমিটি গঠন করে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। একই সঙ্গে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।
এদিকে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন বলে নিশ্চিত করেন তদন্ত কমিটির এক সদস্য। তবে তদন্তের স্বার্থে তিনি মুখ খুলতে রাজি হননি।