ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত নির্দেশদাতা অন্তরা: ইবি নিয়ে হাইকোর্টে প্রতিবেদন : আজ আদেশ
প্রভোস্টের অবহেলা ও প্রক্টরের উদাসীনতা ছিল * ছয়জনের জড়িত থাকার সত্যতা মিলেছে
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
মঙ্গলবার হাইকোর্টে উপস্থাপিত দুটি প্রতিবেদনে এসব বলা হয়েছে। একটি কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত এবং নির্যাতনের নির্দেশদাতা সানজিদা চৌধুরী অন্তরা। এছাড়া হল প্রভোস্টসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং প্রক্টরের উদাসীনতার কথাও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন দুটি উপস্থাপনের পর বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশের জন্য বুধবার দিন রেখেছেন। একই সঙ্গে ইবি-সংক্রান্ত আইন ও বিধি সংগ্রহ করতে এবং ইবির কোনো আইনজীবী থাকলে তাকে জানাতে বলা হয়েছে। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নির্দেশে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২১-২০২২ সেশনের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে র্যাগিং ও শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করা হয়। এ অমানবিক, পাশবিক, শারীরিক, ন্যক্কারজনক, জঘন্য ঘটনার সঙ্গে সরাসরি চারুকলা বিভাগ ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার ঊর্মি, আইন বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশনের ইসরাত জাহান মীম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের তাবাসসুম ইসলাম এবং মোয়াবিয়া জড়িত ছিলেন। এছাড়া আল আমিন নামে একজনের সঙ্গে অন্তরার মোবাইল ফোনে কথা হয়। সেই ফোনে আল আমিন হুমকি দিয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তরা নির্দেশ দেয় প্রত্যেকে যেন ফুলপরীকে একটা একটা চড় মারে। আর লিমা ফুলপরীর মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এবং অন্তরার পা ধরতে ফুলপরীকে সবাই বাধ্য করে। এছাড়া হলে প্রভোস্ট থাকা অবস্থায়ই অন্তরা, তাবাসসুম, মীমসহ অন্যরা ফুলপরীকে হেনস্তা করে। একপর্যায়ে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বরাবরে মুচলেকা দিতে তাকে বাধ্য করা হয়।
এ ঘটনার জন্য প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুর রাজ্জাক, কর্মকর্তা হালিমা খাতুন, ডাইনিং ম্যানেজার সোহেল রানা, হাউজ টিউটর মোমিতা আক্তার, ইসরাত জাহান ও এক আয়ার দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং ফুলপরী ইস্যুতে ব্যাপক গাফিলতি ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া প্রক্টর শাহাদাত হোসেন আজাদের উদাসীনতার কথাও উল্লেখ করা হয়। ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ফুলপরীকে সরাসরি নির্যাতন করে মুন্নী, মীম, তাবাসসুম ও মোয়াবিয়া। ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের ডাইনিংয়ে ফুলপরীর ওপর পাশবিক নির্যাতনের সময় ঊর্মি ও মীম ভিডিও ধারণ করে। তাবাসসুমের জবানবন্দি থেকে এ তথ্য জানা গেলেও কোনো ভিডিও রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফুলপরীকে তাবাসসুম ৮ ফেব্রুয়ারি দেখা করতে বলে। ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে দেখা করলে ফুলপরীর ওপর তাবাসসুম রাগান্বিত হয় এবং এটিকে বেয়াদবি হিসাবে মনে করে। তাবাসসুম প্রচার করে ফুলপরী সিনিয়রদের সঙ্গে বেয়াদবি করেছে। এ থেকে ঘটনার সূত্রপাত। তিন সদস্যের কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে অন্তরার জোর-জবরদস্তির কারণেই প্রভোস্ট ফুলপরীকে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। এছাড়া প্রভোস্ট হলে থাকা অবস্থায় অন্তরা, তাবাসসুম, মীম, ঊর্মি ও মোয়াবিয়াসহ অন্যরা ফুলপরীকে হেনস্তা করে। পরবর্তী সময়ে ফুলপরীকে প্রভোস্ট শামসুল আলমের বরাবরে মুচলেকা দিতে বাধ্য করা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপনের সময় আদালত জানতে চান-এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জানান-এ পাঁচজনকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রিটকারী আইনজীবী গাজী মোহসীন বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্তে ইবি হলের প্রভোস্ট, হাউজ টিউটরদের দায়িত্বে চরম অবহেলার বিষয়টি উঠে এসেছে। তারা তাদের দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থ হয়েছেন। হলের প্রভোস্টের সামনে ঘটনা ঘটলেও তিনি চুপচাপ ছিলেন। বরং অভিযুক্তদের তিনি সহযোগিতা করেছেন। আদালত তদন্ত রিপোর্ট দেখে আজ আদেশ দেবেন।
হল প্রভোস্ট ও প্রক্টরের বক্তব্য : হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শামসুল আলম বলেন, আমাদের কোনো রকম অবহেলা বা গাফিলতি ছিল না। অভিযোগ পাওয়ামাত্র তদন্ত করেছি। তদন্তে সত্যতাও পেয়েছি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচজনের ইতোমধ্যে হলের সিট বাতিল করা হয়েছে।
প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, অভিযোগ আসা উপাচার্য বরাবর নোট দিয়েছে। তদন্তকালে ভুক্তভোগীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। এরপরও উদাসীনতা বলা হয়েছে। এতে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া কিছুই বলার নেই।
jugantor