রাজনীতির দুই ধারা : দুই সংস্কৃতি ➖➖

0

রাজনীতির দুই ধারা : দুই সংস্কৃতি ➖➖
~~

বাংলাদেশে দু’টি বড় রাজনৈতিক দল। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দু’টি দলই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়। এর একটি বিএনপি, আরেকটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ।

আ.লীগ সব সময় বলে আসছে যে, তারাই হচ্ছে জনগণের দল। আর বিএনপি হ’লো ক্যান্টনমেন্টে জেনারেলের পকেটে জন্ম নেয়া পার্টি।

জন্মের ইতিহাস অনুযায়ী দল দু’টির চরিত্রে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পার্থক্য থাকার কথা এবং তা আছেও। উভয় দলের কথা ও কাজের মিল ও অমিল দেখেই তা’ বুঝা যায়।

বাংলাদেশের বর্তমান বিদায়ী প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ একজন ‘সিজন্ড অ্যান্ড বোনাফাইড’ আওয়ামীলীগার। তিনি সম্প্রতি তাঁর কিশোরগঞ্জের বাড়িতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে দাওয়াত দেন। হামিদ সাহেব নেত্রীর জন্য ২৩ রকমের মাছ দিয়ে যে আহারের আয়োজন করেন তা’ এখন সবখানে প্রচারিত।

আমাদের ‘ডাবল এইচ’ কিংবা ‘জোড়া হা’ অর্থাৎ হামিদ-হাসিনা বর্তমানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার শীর্ষে অধিষ্ঠিত। তারা যে-ভাবেই পদে অধিষ্ঠিত হয়ে থাকুন; বাস্তবতা হচ্ছে তাদের একজন রাষ্ট্রপতি ও অপরজন প্রধানমন্ত্রী।

সরকারী ভাষ্য মোতাবেক দেশ এখন অনেক উন্নত। কোথাও খাদ্যাভাব নাই, ভিক্ষা নেয়ার মতো ফকিরও খুঁজে পাওয়া যায়-না, লোকের আয়-রোজগার এতো বেড়েছে যে, দফায় দফায় জিনিসপাতির দাম বেড়ে দু’-তিন গুণ হয়ে গেলেও সেটা ‘প্রজাতন্ত্রের প্রজাদের’ গায়ে লাগে-না। এমন পরিস্থিতিতে টপ লেভেলের কর্তা-কর্ত্রীদের এমন একটা ‘শাহী দাওয়াত’-এর খাদ্যতালিকা দেখে লোকজন কিছুই মনে করবে-না।

তা’ছাড়া, এক সময়ে যে-সব রাষ্ট্র বড়লোক বলে বড়াই করতো এবং আমাদেরকে ‘ইন্টারন্যাশনাল বাস্কেট কেস’ বলে তাচ্ছিল্য করতো, তাদেরকেও জানাতে হবে, এসো দেখে যাও আমাদের এখনকার খানাপিনার বহর।

এক-একটা দলের একেকটা কালচার থাকে। জনগণের দলের কালচার এমনই। লি কুয়ান ইউ নামের এক লোক সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ওই ভদ্রলোক তার স্মৃতিকথায় আমাদের শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব সম্পর্কে একটা ঘটনা লিখেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর কয়েক দিনের এক আন্তর্জাতিক সন্মেলনে তারা উভয়েই যোগ দিয়েছিলেন। তবে লি গিয়েছিলেন নর্মাল ফ্লাইটের যাত্রী হিসেবে টিকেট কিনে। আর শেখ সাহেব একটা স্পেশাল ফ্লাইট নিয়ে গিয়েছিলেন এবং তিনি তাতেই ফিরেছেন। যতোদিন কনফারেন্স চলেছে এয়ারক্রাফটিও ততোদিন সেখানে ছিল।

ঐ ঘটনায় লি অবাক হয়ে লিখেছেন :”এমন একটা গরীব দেশের সরকার-প্রধানের এতোটা বিলাসিতা সাজে-না।” উনি আমাদের মহত্ত্ব, কূটনৈতিক কৌশল ও গণমুখী রাজনীতিটাই বুঝতেই পারেন-নি। কোনো দেশ আমাদেরকে যাতে কোনোভাবে ‘মিসকিন’ না-ভাবে, তার জন্যই এসবের দরকার আছে।

যেমন ধরুন, ১৯৭৪ সালে আমাদের ব্যর্থতায় নয়, বরং ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চক্রান্তে’ যখন মস্ত দুর্ভিক্ষ হলো এবং সারাদেশে লংগরখানাতেও খাবার না পেয়ে হাজার হাজার মানুষ যখন অখাদ্য-কুখাদ্য খেয়ে মরছিল, তখনও ‘সাম্রাজ্যবাদী কুচক্রীদের’ দেখিয়ে দেয়ার জন্য শেখ সাহেবের ৫২তম জন্মদিনে ঘটা করে ৫২ পাউন্ড ওজনের কেক কাটা হয়েছিল।

সেই যামানায় বেলি ফুলের মালাবদল করে হুমায়ুন ফরিদী ও মিনুর বিয়েতে আশীর্বাদ করেছিলেন শেখ সাহেব। বলেছিলেন : “বাংলার ঘরে ঘরে এমন অনাড়ম্বর বিয়ে হওয়া উচিত।” এরপর সারা দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যেই সোনার মুকুট পরিয়ে শেখ কামাল-জামালের বিয়ে হয়েছিল।

এসব গণমুখী রাজনীতি ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেয়া দল বিএনপি কখনো বুঝবে না। এ দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিজেই ছিলেন হাড় কিপ্টে। প্রেসিডেন্ট হয়েও মনটা বড় করতে পারেন নাই। এক-দুই পদের তরকারি দিয়ে ভাত খেতেন। জেলা সফরে গেলে স্থানীয় প্রশাসন বেশি খাবারের আয়োজন করলে রেগে যেতেন। কখনো না খেয়ে চলে আসতেন। নরসিংদিতে তিনি পোলাও-কোর্মা রেখে করলা ভাজি আর ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে চলে এসেছিলেন। এমনকি একবার ভোজের বিপুল আয়োজন করায় এক ডেপুটি কমিশনারকে জরিমানাও করেছিলেন। কতোটা ছোট মন, বুঝেন! যে দলের প্রতিষ্ঠাতাই এমন, সেই দল কি কখনো জনগণের দল হতে পারবে? ◾

মারুফ কামাল খানের ফেসবুক থেকে

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More